সংক্ষিপ্ত
শতাব্দী প্রাচীন মোরবি সেতু ভেঙে ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। সেতু খোলা নিয়ে দানা বাঁধছে রহস্য।
রবিবার গুজরাটের মোরবিতে মাচ্ছু নদীর ওপর শতাব্দী প্রাচীন ঝুলন্ত সেতু ভেঙে পড়ায় কমপক্ষে ১৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রিটিশ আমলের এই সেতুটি দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ ছিল। মেরামতি আর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। গত ২৬ অক্টোবর গুজরাটি নববর্ষ উপলক্ষ্যে সেতুটি জনতার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। সেতুটির দায়িত্বে রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। অভিযোগ নির্ধারিত সময়ের আগেই সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। মোরবি মিউনিসিপ্যাল বড ও অজন্তা ম্যানুফ্যাকটারিং প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী সেতুটি কমপক্ষে ৮-১২ মাস বন্ধ রাখার কথা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। তেমনই অভিযোগ করছে মরবি পৌরসভা।
রবিবার সন্ধ্যে ৬টা ৩০ মিনিটে সেতুটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। সেই সময় সেতুর ওপর প্রায় ৫০০ লোক ছিল। অত্যাতাধিক ভিড়ের চাপ সেতুটি সহ্য করতে পারেনি। তাতেই ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ঝুলন্ত সেতুর তার ছিঁড়ে যায়। তারপরই সেতুটি ভেঙে পড়ে। সেই সময় সেতুর ওপর প্রচুর শিশু ও মহিলা ছিল। বিকট শব্দ করেই সেতুটি ভেঙে পড়ে জলের ওপর। অনেকেই মানুষই নদীতে ডুবে যায়। প্রথম দফায় সাত আট জনকে তিনি উদ্ধার করেছেন বলেও জানিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন পর্যটক হিসেবেই তিনি সেতু দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পর মানুষের আর্তনাদ দেখে তিনি জলে ঝাঁপ দিয়ে কয়েক জনকে উদ্ধার করেন। অন্য একজন জানিয়েছেন সেতুর ওপর প্রবল ভিড় ছিল। অনেকে আবার সেতুর কেবল ধরে টানাটানি করছিল। তাতেই তারগুলি ছিঁড়ে যায়। গুজরাটের পঞ্চায়েত মন্ত্রী ব্রিদেশ মের্জা বলেছেন, উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। আহতদের হাতপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
মোরবি পুরসভা জানিয়েছে, সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে অজন্তা নামের ঘড়ি নির্মাতা সংস্থা। এটি ওরেভা গ্রুপেরয়ই একটি অংশ। সেতু দেখতে আসা পর্যটকদের থেকে জন প্রতি ১৭ টাকার টিকিট বিক্রি করে সংস্থা। প্রচুর টিকিট বিক্রিও করেছিল। কিন্তু ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও ব্যবস্থা করেনি সংস্থা। অন্যদিকে গুজরাট সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে মরবি সেতুর উল্লেখ থাকলেও এটি একসঙ্গে কতজন মানুষের ভার সহ্য করতে পারে তার কোনও উল্লেখ নেই। সবমিলিয়ে ১৪৩ বছর পুরনো সেতু ভেঙে মৃত্যু হয় ১৪১ জনের।
শতাব্দী প্রাতীন সেতুটি রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য আজন্তা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছিল মোরবি পুরসভা। ২০২০ সাল থেকে সেতু নিয়ে আলোচনা হলেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় চলতি বছর মার্চ মাসে। তারপর থেকেই সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয়। বন্ধ করে দেওয়া মানুষের ব্যবহার। আগামী ১৫ বছরের জন্য চুক্তি হয়েছিল। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল প্রতি বছরই সেতুর জন্য টিকিটের দাম তারা বাড়াবে। কিন্তু এবার রক্ষণাবেক্ষণের পর ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই কি করে সেতুটি জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হল আর কী করেই বা সংস্থা টিকিট ব্রিক্রি করল তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। সেতু খোলার কোনও সরকারি লিখিত অনুমোদনও ছিল না। অন্যদিকে মোরবি পুরসভা সূত্রের খবর সেতুটি মাত্র ১২৫ জন মানুষের ভার নিতে পারে। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় সেতুতে ছিল ৫০০ জন।
তবে ব্রিজ ভেঙে পড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে গুরজাট প্রশাসন। অন্যদিকে এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার দুর্ঘটনাস্থল পরির্দশন করবেন। এদিন অবশ্য তিনি বলেন এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা।