সংক্ষিপ্ত
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং #নাফরমানি। কী এই নাফরমানি? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে চলে যেতে হবে উত্তর প্রদেশের মুজফফর নগরের ছোটো গ্রাম মহম্মদপুর লোডায়। সেখানকার একটি নিতান্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ফরমানি নাজ।
ধর্মীয় উদারতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয়দের যুগযুগান্তরের চর্চায় মজ্জাগত। এই চর্চার মাধ্যম কখনও শিল্প, সংস্কৃতি কখনও আবার সামাজিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। তবু আজ একুশ শতকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও মৌলবাদের কবল থেকে রক্ষা পেল না গানও।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং #নাফরমানি। কী এই নাফরমানি? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে চলে যেতে হবে উত্তর প্রদেশের মুজফফর নগরের ছোটো গ্রাম মহম্মদপুর লোডায়। সেখানকার একটি নিতান্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ফরমানি নাজ। অভাবের তারনায় পড়াশোনা করা হয়নি ফরমানির। আর পাঁচটা দরিদ্র পরিবারের মেয়ের মতই অল্প বয়েসেই বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। বেশ কিছু দিনের মধ্যেই সন্তানের জন্ম দেন ফরমানি নাজ। এর অল্পদিনের মধ্যেই ফাটল ধরে ফরমানির দাম্পত্যে। অসুস্থ সন্তান সহ শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। বাবার বাড়িতে ফিরে এসেও দুর্ভোগ ঘুচল না। অভাবের তাড়নায় ভাইদের সঙ্গে নামতে হল দিনমজুরের কাজে। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম, আধপেটা খাওয়া এই ছিল ফরমানির রোজনামচা। তবে চির দিন কাহারো সমান নাহি যায়। বাগদেবীর যে আশির্বাদের জন্য সারাজীবণ সাধনা করতে হয় মানুষকে ফরমানির ক্ষেত্রে তা ছিল ঈশ্বর প্রদত্য, সহজাত। কোনদিন গান না শিখেও সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন ফরমানি। এই সুরেই ভাগ্যের চাকা ঘুরল মহম্মদপুর লোডার দরিদ্র মেয়ের।
ভাই ও ভাইয়ের বন্ধুর উদ্যোগে ফরমানির গাওয়া একটি ভজন আপলোড করা হয় ইউটিউবে। রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায় সেই গান। তারপর একের পর শিবের ভজন গেয়ে আজ রীতিমত ভাইরাল উত্তর প্রদেশের ছোট্টো গ্রামের মেয়ে ফরমানি। সম্প্রতি তাঁর গাওয়া 'হর হর শম্ভু' ভজনটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বর্তমানে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৩৮ লাখেরও বেশি।
কিন্তু মৌলবাদের আঁচ থেকে রক্ষা পেল না ফরমানির সুরেলা কণ্ঠও। প্রচারের আলোতে আসতেই একদিকে হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে পড়েছেন ফরমানি, একজন মুসলিম মহিলার শিবের ভজন গাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, অন্যদিকে ইসলাম ধর্মে গান গাওয়া হারাম! একজন মুসলিম মেয়ে কেন শিবের ভজন গাইবে? ফতোয়া দিয়েছেন মুসলিম মৌলবাদীরা।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতে সরব হয় নেটনাগরিকদের একাংশ। #নাফরমানি ট্যাগ ব্যবহার করে একটি ঘটনার বর্ণনা সহ একটি পোস্ট রীতিমত ট্রেন্ডিং সোশ্যাল মিডিয়ায়। পোস্টটির বিষয়বস্তু খানিকটা এই রকম,পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী ৩০ লাখ হিন্দু বিবিসির একটি সার্ভেতে উঠে এসেছিল হিন্দুদের সবচেয়ে পছন্দের ১০টি ভজন। কাকতালীয় ভাবে সেই ১০ টি ভজনের বেশির ভাগেই সুর দিয়েছেন নৌশাদ। গীতিকার শাকিল বদায়ুনী ও সাহির লুধিয়ানভি। কণ্ঠ দিয়েছেন মহম্মদ রফি। মেহবুব আলী খাঁনের সিনেমায় তা ব্যবহৃত হয়েছে। এবং চিত্রায়নে অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার ও ইউসুফ আলী খাঁন। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ফরমানির জীবণ কাহিনী।
অতএব যুগ যুগ ধরে ধর্ম, জাত, বর্ণকে ব্যাতিরেকে বাগদেবীর যে প্রসাদের আরাধনা হয়ে চলেছে, ফরমানির ক্ষেত্রে সেই সাধনায় প্রশ্ন উঠছে কেন? ফরমানির ঈশ্বর প্রদত্য কণ্ঠকে রোধ করার চেষ্টা চলছে কেন? সুরের সাধনাকে কি ধর্মের শিকলে বাধা যায়?
আরও পড়ুন - বিকিনি পোশাকে চাকরি খুইয়েছেন অধ্যাপিকা, প্রতিবাদে গর্জে উঠল নেটদুনিয়া
এই প্রসঙ্গে ফরমানি নাজকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন মহম্মদপুর লোডায় বহু মুসলমান থাকেন তাঁদের কারোর আমার গান গাওয়ায় আপত্তি নেই, আমি যদি অপরাধ করে থাকি তবে এই অপরাধ অনেক আগেই করেছেন মহম্মদ রোফি সাহেব। এই উক্তিও উল্লেখ করা হয়েছে ফেসবুক পোস্টটিতে।