সংক্ষিপ্ত

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত কয়েক বছর ধরেই দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী এক শক্তিকে এককাট্টা করার চেষ্টায় লেগে রয়েছেন। কিন্তু, কোনও না কোনওভাবে সেই চেষ্টায় ঘটে যাচ্ছে এমন একটা ঘটনা যা ধাক্কা দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছেকে। এবার বিজেডি এমন এক সুরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছে যা এক অন্য ইঙ্গিতের দিকে সংকেত করছে। 

দিল্লিতে বুধবার কনস্টিটিউশন ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয় ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি বিরোধীরা কী ভাবছে এবং প্রার্থী হিসাবে তারা কাকে ভাবছে। কংগ্রেস, সমাজবাদি পার্টি, বাম দলগুলি-সহ মোট ১৮টি রাজনৈতিক দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়েছিল। কনস্টিটিউশন ক্লাবে হওয়া বৈঠক এবং সাংবাদিক বৈঠকেও তারা উপস্থিত ছিল। কিন্তু, অদ্ভুতভাবে এই বৈঠকে হাজির ছিল না ওয়াই এস আর কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, বিজেডি, টিআরএস। এই অনুপলস্থিতদের মধ্যে সবচেয়ে সন্দেহ বাড়িয়েছে বিজেডি-র আচরণ। কারণ এই বৈঠকের পর ওড়িশার শাসক দল বিজেডি যে বিবৃতি দিয়েছে তাকে ঘিরে বাড়ছে সন্দেহ। আর এই সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে দ্রৌপদী মূর্মূ-র নাম আসার পর থেকে। 

সাংবাদিক বৈঠকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিজেডি-র অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে এখনই কথা বলার মতো কারণ তৈরি হয়নি বলে উত্তর দেন মমতা। তবে, বিজেডি যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে তারা পরিষ্কার করে দিয়েছে যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ কাকে প্রার্থী করছে সেটা দেখেই তারা এই নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করবেন। বিজেডি সূত্র থেকে খবর যে ওড়িশার আদিবাসী সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধি দ্রৌপদী মূর্মূ-কে এনডিএ প্রার্থী করতে পারে, এমন খবর চাওর হওয়ার পর থেকে তারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পক্ষ অবলম্বনে ধীরে চলার নীতি নিয়েছে। ২০০০ সালে ওড়িশাতে জোট সরকার তৈরি করেছিল বিজেপি ও বিজেডি। সেই সরকারের মন্ত্রী ছিলেন দ্রৌপদী। এমন এক পরিস্থিতিতে বিজেডি চাইছে না যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের কেউ প্রার্থী হলে তার বিরোধিতা করতে। 

বিজেডি-র সমর্থন পেলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন জয়ে বিরোধীদের পিছনে ফেলে দেবে এনডিএ
বিজেডি যদি বিজেপি-র রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থীকে সমর্থন করে তাহলে এনডিএ-র পক্ষে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয় কার্যত নিশ্চিত হয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটের অঙ্ক যদি দেখা যায় তাহলে দেখা যাচ্ছে মোট ভোটঅঙ্কের সংখ্যা ১০,৭৯,২০৬। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয় পেতে এনডিএ-র চাই ৫,৪০,০০০ ভোট। এরমধ্যে এনডিএ জোটের শীর্ষ দল বিজেপি-র কাছেই রয়েছে ৪,৫৯,৪১৪ ভোট। এছাড়াও এনডিএ-র অন্য দুই বড় শরিক জেডিইউ-এর কাছে রয়েছে ২২,৪৮৫ ভোট এবং এআইডিএমকে-র কাছে রয়েছে ১৫,৮১৬টি ভোট। এই সব ভোট মেলালে এনডিএ-র মোট ভোট দাঁড়ায় ৪,৯৭,৭১৫। 

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ম্যাজিক ফিগার থেকে মাত্র ৪৩ হাজার ভোটের দূরত্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে এনডিএ
এমন এক পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-কে ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে পেতে হবে মাত্র ৪৩ হাজার ভোট। দেখা যাচ্ছে বিজেডি-র কাছে রয়েছে ৩১,৬৮৬ ভোট। এর সঙ্গে যদি ওয়াই এস কংগ্রেসের ভোট পাওয়ারটা একবার দেখে নেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাচ্ছে জগনমোহন রেড্ডির দলের কাছে রয়েছে ৪৩,৪৫০ ভোট। সুতরাং দেখাই যাচ্ছে যে বিজেডি এবং ওয়াই এস আর কংগ্রেসের সমর্থন যদি এনডিএ নিতে পারে তাহলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন জয় একশো শতাংশ নিশ্চিত। শুধু দ্রৌপদী মূর্মূকেই যে প্রার্থী করার কথা বিজেপি চিন্তা করছে তা নয়, আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে আরও কিছু নাম জমা পড়েছে। সত্যি সত্যি কোনও আদিবাসীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করা হয় তাহলে বিজেপি বিরোধীদের পক্ষে তার বিরোধিতা করা অসম্ভব। 
আরও পড়ুন|| দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে 'না' শরদ পাওয়ারের, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী শিবিরে প্রার্থী কে  
আরও পড়ুন|| ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ১৮ জুলাই, ভোট গণনা ২১ জুলাই, ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের  
আরও পড়ুন||  ৪ রাজ্যে বড় জয়ের পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বেকায়দায় পড়তে পারে বিজেপি, কেন এমন বললেন মমতা