সন্দেহ তারা অবৈধ বাংলাদেশী উদ্বাস্তু। আর সেই সন্দেহেই বেঙ্গালুরুতে ভেঙে দেওয়া হল ২০০টি কাঁচা বাড়ি। পরে অবশ্য জান যায় তারা সবাই ভারতীয় নাগরিক। এতে প্রায় ৩০০-রও বেশি মানুষ রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

এনআরসি নিয়ে দেশজোড়া বিতর্কের চলছে। তারমধ্যে, অবৈধ বাংলাদেশীদের বসতি বলে অভিযোগ করে গত ১৮ জানুয়ারি থেকে বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে, বেঙ্গালুরুর করিয়াম্মানা অগ্রহরা এলাকার প্রায় ২০০টি কাঁচা বাড়ি বা ঝুপরি ভেঙে দিল ব্রুহত বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকে বা বিবিএমপি। শুধু তাই নয়, ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে ধ্বংসের পর সেখানকার বাসিন্দারা দাবি করেছেন, তাঁরা সকলেই ভারতীয় নাগরিক। এরফলে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

শুধু করিয়াম্মানা অগ্রহরা এলেকার ওই বসতিই নয়, বেলানডুরের আরও দুটি স্থানেও এই ধ্বংসললীলা চালানো হয়। জানা গিয়েছে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, এই বসতিগুলিতে অবৈধ বাংলাদেশী উদ্বাস্তুরা থাকেন। এই বলে কোনও আগাম নোটিশ ছাড়াই জমি খালি করতে বলা হয়। যদিও সেখানকার বাসিন্দারা কর্তব্যরত অফিসারদের জানান, তাঁরা ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু, পুর কর্তৃপক্ষ তাঁদের কোনও কথাই শুনতে চায়নি বলে অভিযোগ।

Scroll to load tweet…

জানা গিয়েছে, যে সমস্ত বাসিন্দাদের বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে তারা বেশিরভাগই অসম, ত্রিপুরার বাসিন্দা। এমনকী কারোর কারোর বাড়ি উত্তর কর্ণাটকে। তাঁরা অফিসারদের আধারকার্ড, প্যানকার্ড এবং ভোটার আইকার্ড-সহ বেশ কিছু বৈধ পরিচয়পত্রও দেখান। এমনকী অসম থেকে কয়েকজন জানান গত অগাস্টে প্রকাশিত অসম এনআরসি-তেও তাঁদের নাম রয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। তাদের গায়ে অবৈধ বাংলাদেশীর তকমা এঁটে তাঁদের মাথার ছাদ কেড়ে নেওয়া হয়। এমনকী ওই এলাকার বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ লিম্বাভালি-ও উপর থেকে তোলা ওই বসতির একটি ভিডিও প্রকাশ করে বসতিটিকে অবৈধ বলে অভিহিত করেন।

Scroll to load tweet…

সাধারণ মানুষ অবশ্য এই পদক্ষেপ একেবারেই ভালোভাবে নেননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা বিবিএমপি-র এই ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁরা এই কাজকে চরম অমানবিক বলছেন। অনেকেরই সন্দেহ বসতিটির পাশে থাকা বহুতল আবাসনের বাসিন্দাদের আপত্তি ছিল বসতিবাসীদের সঙ্গে গা ঘেসাঘেসি করে থাকা নিয়ে। তাই সম্ভবত এই বসতিটি ধ্বংস করা হল। অনেকে বলেছেন এটা ভারতের উচ্চ-মধ্যবিত্ত মানুষের জেনোফোবিয়া বা বিদেশী আতঙ্কের প্রতিফলন।

এই বসতির বেশিরভাগ বাসিন্দাই জীবিকা নির্বাহের জন্যই নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে ভিনরাজ্যে এসেছিলেন। তাদের কেউ গৃহকর্মী, কেউ নিরাপত্তাকর্মী, কেউ সাফাইকর্মী বা আরও নানান ছোটখাটো কাজ করেন। এখন মাথার উপর ছাদ হারিয়ে এই ৩০০-র বেশি মানুষ দারুণ অসহায় বোধ করছেন।

Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…

তবে বিবিএমপি-র মেয়র তথা বিজেপি নেতা এম গৌতম কুমার-এর দাবি, পুর কর্মকর্তারা এই কাঁচাবাড়িগুলি ভাঙেনি। বিবিএমপির এক সহকারী এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এই কাজের আদেশ দেন। তাঁকে বিবিএমপি সাসপেন্ড করেছে বলেই শোনা গিয়েছে। তবে তিনি দাবি করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারাই তাঁর কাছে 'অবৈধ বাংলাদেশি'দের নিয়ে অভিযোগ জানান। তারপরই তিনি ওই ব্যবস্থা নেন। এই বিষয়ে পুরকর্তৃপক্ষ কমিশনার পর্যায়ে তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Scroll to load tweet…