সংক্ষিপ্ত

অপারেশন গঙ্গা, শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। এটি ভারত সরকারের তরফে শুরু করা একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। কীভাবে ভারত সরকার সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে, তার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ এই মিশন। 

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার ভারতীয় নাগরিককে সরিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসা সহজ কাজ নয়। কিন্তু, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতের কেন্দ্র সরকারের উদ্যোগে শুরু হওয়া 'অপারেশন গঙ্গা' মিশন বিশ্বের যে কোনও জায়গায় পরিচালিত বৃহত্তম উদ্ধার অভিযানগুলির মধ্যে ভীষণভাবে উল্লেখযোগ্য একটি।

‘দ্য ইভাকুয়েশন: অপারেশন গঙ্গা’ নামক তথ্যচিত্র-তে দেখানো হয়েছে যে কীভাবে ভারতীয় প্রবাসীরা ইউক্রেন এবং এর প্রতিবেশী দেশ, যেমন পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া এবং রোমানিয়াতে যারা বসতি স্থাপন করেছিল, সেইসব ছাত্রদের খাওয়ানো, পোশাকের জোগান দেওয়া এবং ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কেন্দ্র সরকারের মতে, ভারত ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর প্রাচীন মূল্যবোধকে সমর্থন করে, যার অর্থ ‘গোটা বিশ্ব একটি পরিবার’।

রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনকে আক্রমণ করার পরপরই মারাত্মক চ্যালেঞ্জিং সময়কালে ভারত সরকার দেশের বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে আনার কাজে লেগে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সহ ভারতীয় দূতাবাসের নেতৃত্বে সরকারি প্রচেষ্টায় ভারত সরকার সমস্ত প্রবাসী মানুষদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার আশ্বাস দিয়েছিল।

মোদী এই তথ্যচিত্রে বলেছেন, “পৃথিবীর যেখানেই একজন ভারতীয় আছেন, তাঁদের পাসপোর্টের রঙ পরিবর্তিত হওয়া সত্ত্বেও, তাঁদের দেশের সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে... আমরা সকলেই ভারতের সাথে রক্তের সম্পর্কে যুক্ত।”

বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, যাকে উদ্ধার অভিযানের তদারকি করার জন্য রোমানিয়ায় পাঠানো হয়েছিল, তিনি বলেছেন, “আমাদের সমস্ত নাগরিক এবং সেসব দেশের অন্য মানুষজন, যাঁরা বসে বসে খাবার রান্না করছিলেন, তাঁরা পরিবহণের জন্য বাসের ব্যবস্থা করছিলেন, তাঁরা ছাত্রদের চিকিৎসার চাহিদা মেটাচ্ছিলেন, এরকম পরিস্থিতি গোটা ভারত সম্ভবত আগে কখনও দেখেনি। আমাদের প্রবাসীরা সত্যিই আমাদের ছাত্রদের সাহায্য করতে এসেছেন।”

আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারী এবং বিএপিএস স্বামীনারায়ণ সংস্থার মুখপাত্র ব্রহ্মবিহারীদাস স্বামী বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী যখন ফোন করেন, তখন তাঁর গলায় ব্যাপক উদ্বেগ বোঝা যাচ্ছিল। তিনি ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশের যেকোনও সীমান্ত শহরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ত্রাণ শিবির স্থাপন করার জন্য আমাদের অনুরোধ করেছিলেন। কারণ, হাজার হাজার শিক্ষার্থী আটকা পড়ে ছিল। আমরা অবিলম্বে ত্রাণ শিবির স্থাপনের জন্য আমাদের বাহিনীকে একত্রিত করতে এগিয়ে গিয়েছিলাম।”

ইউক্রেন থেকে উদ্ধার হওয়া মেডিকেল পড়ুয়া আরিয়ান ঠাকুর বলেছেন, “ইউক্রেনের সীমান্ত শহরগুলোতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর লাইন পড়ে গিয়েছিল। এতও ঠাণ্ডা পড়েছিল, যে, ছাত্ররা নিজেদের শরীর গরম রাখার জন্য নিজেদের নিজেদের জামাকাপড়ে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছিল।”

পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত নাগমা মল্লিক বলেছেন, “তাদের মধ্যে অনেকেই শুধু একটা জিন্সের প্যান্ট এবং একটা হুডি পরে বসেছিল, তাদের খাওয়ার জন্যও কিছু ছিল না। এটি একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ছিল।”

একজন ছাত্র বলেছেন যে, সেখানে ক্রমাগত বোমা পড়ছিল। জায়গাটা মোটেও নিরাপদ ছিল না এবং বেশিরভাগ সময়েই বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছিল। বিহারের চম্পারনের একজন মেডিকেল ছাত্র মহম্মদ মহতাব রাজা বলেছেন, “ওই বাঙ্কারগুলির মধ্যে জল, বিদ্যুতের লাইন ছিল। কিন্তু, ওগুলোর ভেতরে থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।”

অপারেশন গঙ্গা, শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। এটি ভারত সরকারের তরফে চালু করা একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। কীভাবে ভারত সরকার সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে, তার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ এই মিশন। “মানুষের গায়ের রঙের চেয়ে ভারতের পতাকার রঙ বেশি শক্তিশালী ছিল। এই পুরো অভিজ্ঞতাই ভারতীয় ছাত্রদের তিরঙার শক্তি শিখিয়েছে”, বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। “পৃথিবীর আর অন্য কোনও দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য এতটা করেনি।”

আরও পড়ুন- 
Weather News: আবহাওয়ার বড় আপডেট! বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি
আপনি কি ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে বিয়ের পাত্র-পাত্রী খুঁজছেন? তাহলে এই ৫টি মিথ্যা থেকে সাবধান

যুবনেতাদের সমাবেশে ধুন্ধুমার! চেয়ার ছোড়াছুড়িতে মেতে উঠলেন মুম্বইয়ের যুব কংগ্রেস কর্মীরা