সংক্ষিপ্ত
'মোদী পদবী' মন্তব্যের জন্য দোষী সাব্যস্ত রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি অযোগ্য সাংসদ। কিন্তু কি করে তিনি আবার সংসদে ফিরতে পারেন তাই আলোচনার বিষয়।
বৃহস্পতিবার 'মোদী পদবী' মন্তব্যের জন্য রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সুরাটের আদালত। তাঁকে দুই বছরের জন্য কারাদণ্ডের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার পরই 'স্বয়ংক্রিয়ভাবে' রাহুল গান্ধী লোকসভার সদস্যপদ খারিজ হয়ে গেছে। কিন্তু আবার কী করে তিনি সাংসদ হিসেবে ফিরে আসতে পারেন? এই প্রশ্ন যেমন উঠেছে তেমনই রাহুল গান্ধী এই সাংসদ পদ খারিজ হওয়া কতটা বৈধ তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আইন বিশেষজ্ঞদের কথায় রাহুল গান্ধী উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। পাশাপাশি তাঁর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ওপর স্থিগিতাদেশ চাইতেই পারেন। কিন্তু আগামী দিনে সাংসদ বা জনপ্রতিনিধি হয়ে ফেরার কাজটা কিন্তু রীতিমত কঠিন বলেও মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
সুরাটের আদালতে রায়ঃ
চিফ জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট এইচএইচ ভার্মা ২০১৯ সালের দায়ের করা মানহানি মামলায় রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। তাঁকে দুই বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ১৫ হাজার টাকা ব্যক্তিগত বন্ডে তাঁর জামিনও মঞ্জুর করেছেন। একই সঙ্গে নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তাঁকে উচ্চ আদালতে যাওয়া অনুমতি দিয়েছেন।
রায়ের পরই রাহুল গান্ধী অযোগ্যঃ
একজন সাংসদকে তিনটি কারণে অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারেঃ ১. অনুচ্ছেদ ১০২(১) ও ১৯১ (১) ধারায় সংসদ সদস্যদের অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে। এর ভিত্তি হল কোনও লাভজনক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকলে, অস্বাস্থ্যকর মনের ও বৈধ নাগরিকত্ব না থাকলে অযোগ্য হতে পারেন যে কোনও সংসদ। তৃতীয় কারণ দলত্যাগের কারণে যে কোনও সাংসদকে অযোগ্য ঘোষণআ করা যেতে পারে।
রাহুল গান্ধীকে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে হবেঃ
যদি রাহুল গান্ধী নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারেন তাহলেই সাংসদ হিসেবে আবারও ফিরতে পারেন। পাশাপাশি উচ্চ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ওপর স্থগিতাদেশ দিলে বা দোষী সাব্যস্ত আইন প্রণেতার পক্ষে আপিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তাঁর অযোগ্যতা খারিজ হয়ে যেতে পারে।
'লোক প্রহরি বনাম ভারত ইউনিয়ন 'এ ১০১৮ সালে একটি সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে 'অযোগ্যতা আপিল আদালত কর্তৃপ দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তারিখ থেকে কাজ করবে না।' তবে এটা খেয়াল রাখতে হবে স্থাগিতাদেশ কেবলমাত্র ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৩৮৯ এর অধীনে সাদা স্থগিত করা হতে পারে না, তবে দোষী সাব্যস্ত হওয়া স্থগিত করা যেতে পারে। সিআরপিসি-র ৩৮৯ ধারায় বলা হয়েছে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আপিল আদালত দোষীর সাজা স্থগিত করতে পারে। এটি আপিলকারীকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার মত।
তবে লোকসভার সদস্যপদ খারিজ করার এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল গান্ধী উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। তেমনটাই বলছে কংগ্রেস। তবে সুরাট আদালতের রায় যদি গুজরাট হাইকোর্ট বাতিল না করে তাহলে রাহুল গান্ধী ৮ বছরের জন্য সাংসদ হিসেবে নির্বাচনের আসরেই যেতে পারবেন না। কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কপিল সিবাল জানিয়েছেন, আদালত যদি শুধুমাত্র সাজা স্থহিত করে তাহলেই যথেষ্ট নয়। রাহুল গান্ধী তখনই সংসদে ফিরতে পারেন যখন আদালত রায়ের ওপরেও স্থগিতাদেশ দেবে। তবে তিনি জানিয়েছেন, সংসদের নিয়ম অনুযায়ী যেহেতু রাহুল গান্ধীর দুই বছরের কারাদণ্ডের সাজা হয়েছে তাই তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে গেছে।
আবার বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী রাম জেঠমালানি এনডিটিভিকে বলেছেন, 'আইনের ক্রিয়াকলাপে রাহুল গান্ধী অযোগ্য হয়েছেন, তবে সিদ্ধান্তটি স্পিকারের কাছে জানাতে হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি অযোগ্য।' তবে কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সংসদ সচিবালয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। কংগ্রেসের দাবি রাষ্ট্রপতি শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে সাংসদদের অযোগ্য ঘোষণা করতে পারেন বা তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করতে পারেন।
আইনের পরিবর্তনঃ
জনপ্রতিনিধি আইনের ৮(৪) ধারায় বলা হয়েছে অযোগ্যতা শুধুমাত্র দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তারিখ থেকে তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পরে কার্যকর হয়। এই সময়ের মধ্যে সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করতে পারেন সাংসসদরা। কিন্তু লিলি থমাস বলান ভারত সকরার মামলায় ২০১৩ সালের রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে RPA ৮(৪) ধারাকেই অসাংসবিধানিক বলে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।