সংক্ষিপ্ত
প্রেমের টানে ভারতে অনুপ্রবেশ করে রাজস্থানে (Rajasthan) ধরা পড়ল পাকিস্তানি (Pakistan) যুবক। পায়ে হেঁটে ১৩০০ কিমি পারি দিয়ে মুম্বই (Mumbai) যাচ্ছিল প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে।
পাকিস্তান (Pakistan) থেকে, রাতের অন্ধকারে সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে ভারতের রাজস্থানের (Rajasthan) অনুপগড়ে ঢুকে পড়েছিল ২১ বছরের এক পাকিস্তানি যুবক। কিন্তু, বিএসএফ (BSF) এর নজর এড়িয়ে কোথায় যাবে, আরেকটু হলেই গুলি খেতে হত। বরাত জোরে বেঁচে যায়। তবে, বিএসএফ-এর হাতে পাকড়াও হয় সে। পাক অনুপ্রবেশকারী, কাজেই প্রথমে বিএসএফ, তারপর যৌথ গোয়েন্দা কমিটি (Joint Intelligence Committee) তল্লাসি ও জেরার মুখে পড়তে হয়। অনেক খুঁজেও তার কাছ থেকে কোনও অস্ত্র বা বিস্ফোরক খুঁজে পায়নি বিএসএফ বা জেআইসি। কী করতে অনুপ্রবেশ করেছে সে? তার দাবি শুনে চোখ, কপালে নিরাপত্তা কর্তাদের। বলে কিনা মুম্বইয়ে (Mumbai) প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে!
কথায় বলে 'ভালোবাসা কোনো বাধা মানে না'। তেমনটাই দেখা গেল রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগরের (Sri Ganganagar) অনুপগড় সেক্টরে। গত ৪ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করার পরই বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যদের হাতে ধরা পড়েছিল পাক নাগরিক মহম্মদ আমির। তার দাবি, সে পাক পঞ্জাবের (Pakistani Punjab) বাহাওয়ালপুর জেলার বাসিন্দা। এলাকাটি সীমান্ত থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে, প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সে মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বইয়ে যাচ্ছিল, প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে। সে আরও জানায়, লকডাউন (Coronavirus Lockdown) চলাকালীনই ফেসবুকে মুম্বইয়ের ওই তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তার।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজস্থান পুলিশ (Rajasthan Police) অমিরের দাবির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে। অনুপগড় থেকে পুলিশের একটি দলকে মুম্বইয়ে পাঠানো হয়েছিল। মেয়েটিকে খুঁজে বের করে, সেই দল তার দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, সত্যি সত্যিই মুম্বইয়ের কান্দিভলির (Kandivli) এক ২০ বছরের তরুণীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। দুজনের আলাপ হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে তারা ফোন নম্বর বিনিময় করেছিলেন এবং চ্যাটিং শুরু করেছিল। পরে তারা বিয়ের সিদ্ধান্তও নেয়।
প্রতিবেদনে, জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স কমিটির কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, আমির প্রথমে ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু, তাঁর আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছিল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই তিনি সীমান্ত পেরিয়ে তাঁর প্রেয়সীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কীভাবে মুম্বই পৌঁছাবেন তা তিনি জানতেন না। দরিদ্র পরিবারের সন্তান, স্কুল ড্রপআউট আমিরের কাছে মুম্বই যাওয়ার মতো যথেষ্ট টাকাও ছিল না। প্রেমের টানে পুরো পথটা সে হেঁটেই যাবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। তাই, গত ৩ ডিসেম্বর রাতে, বাবা-মা কাউকে কিছু না জানিয়ে গ্রাম ছেড়েছিল।
আমিরকে আপাতত বর্তমানে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ-সহ বেশ কিছু অপরাধের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তবে, সীমান্তের ওইপাড় থেকে যখন অধিকাংশ যুবক ভারতে সন্ত্রাস ছড়ানোর উদ্দেশ্যে অনুপ্রবেশ করে থাকে, সেখানে প্রেম দিতে অনুপ্রবেশকারী মহম্মদ আমিরের কাহিনি সীমান্ত এলাকায় সাড়া ফেলেছে। অনেকেই বলছেন, আমিরের কাহিনি নিয়ে বলিউডি সিনেমার চিত্রনাট্যও লিখে ফেলা যায়। সীমান্তের বাধা না মানা প্রেম, বরাবরই হিট মশলা।