সংক্ষিপ্ত

রাম মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীতে যে চমক থাকছে তা বহুদিন আগেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু, এই চমক কি, তার বিস্তারিত তথ্য কারও কাছেই ছিল না। মন্দির তৈরিতে লোহা ব্যবহার না করলে তাহলে তার নির্মাণ কী উপায়ে হবে? এমনই প্রশ্নের খোলসা করেছেন রাম মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র। এশিয়ানেট নিউজের এই বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই সব তথ্য। 

রাম মন্দির নির্মাণে কোনও লোহাই ব্যবহার করা হচ্ছে না। কারণ? এশিয়ানেট নিউজের রাজেশ কালরার এই প্রশ্নের উত্তরে রাম মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, প্রাচীনকালের যে সব মন্দির তার স্থাপত্যশৈলীতে আজও বিশ্বের কাছে বিস্ময় তৈরি করেছে এবং এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেই সময় এই সব মন্দির তৈরিতে কোনও লোহাই ব্যবহৃত হয়নি। কারণ, লোহার ব্যবহার নিয়ে তখন এতটা জ্ঞান মানুষের মধ্যে ছিল না। এমনকী সেই সময় শুধুমাত্র চুন-সুড়কি আর পাথরের টুকরো দিয়েই তৈরি হত বড় বড় সব ইমারত। লোহা যদি এতটাই প্রয়োজনীয় হবে তাহলে আজও ওই সব ইমারতের অধিকাংশই কীভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে! 

নৃপেন্দ্র মিশ্র-র কথায়, প্রাচীনকালে লোহার ব্যবহার না থাকার বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা খুবই চিন্তা-ভাবনা করেছেন। লোহা ব্যবহার না করলে স্থাপত্যেশৈলীতে অনেক ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়, যাতে মন্দিরের মতো বিষয়কে আরও সুন্দর এবং মজবুতি দেওয়া যায়। বর্তমান সময়ে তৈরি লোহা যে শতকের পর শতক চলতে পারে এমন উদাহরণ খুব একটা নেই। তাই দেশের ৫টি সেরা আইআইটি যারা এই মন্দির নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিশেষজ্ঞরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে রাম মন্দিরে কোনও ধরনের লোহা ব্যবহার করা হবে না। বরং একে একটা কমপ্যাক্টেড কনক্রিট স্টাকচার বা সিসিআর-এর উপরে তৈরি করা হবে। এই সিসিআর-এর উপরে এমনভাবে পাথরের স্তুপ তৈরি করা হবে যা দিয়ে তৈরি হবে মন্দিরের গাত্র থেকে সমস্তকিছু। 

এর জন্য পাথরের স্ল্যাব বা গ্রানাইট স্ল্যাব আনা হয়েছে। এই সব গ্রানাইট স্ল্যাবকে আবার সাইজ করে কাটা হয়েছে। এরপর তাতে একটা মাত্রার পালিশ করা হয়েছে। আর পাথরের উপরে এবং পাশে একাধিক গর্ত করা হচ্ছে মেশিন দিয়ে। এই গ্রানাইট স্ল্যাব হোলের মধ্যে থাকবে কপারের বিয়ারিং। যা একটা পাথরকে আর একটি পাথরের সঙ্গে জুড়ে রাখবে। কিন্তু কপারের বিয়ারিং ব্যবহারের পরও গ্রানাইট স্ল্যাবের হোলে কিছু ফাঁক থেকে যাচ্ছে। এই ফাঁক মন্দিরের জীবনরেখার পক্ষে অন্তরায় হতে পারে কি না তা নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হয় রাম মন্দির নির্মাণ কমিটি এবং পাঁচ আইআইটি-র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। শেষমেশ সিদ্ধান্তে আসা হয় যে ওই ফাঁকে স্থানে বৃষ্টির জল জমে শ্যাওলা থেকে শুরু করে ফাঙ্গাস অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ভূমিকম্পের মোকাবিলাতেও মন্দিরের নির্মাণশৈলীকে পাকাপোক্ত হতে হবে। তাই কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে গ্রানাইট স্ল্যাবে করা গর্তের ফাঁক বন্ধ করতে এক বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল সিলিং-এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

এই একান্ত সাক্ষাৎকারে নৃপেন্দ্র মিশ্র আরও জানিয়েছেন, গ্রানাইট স্ল্যাবের মধ্যে একদিকে পাথাল মানে হরাইজন্টাল এবং লম্বা মানে ভার্টিকাল গর্ত করা হয়েছে। এই বিশেষ কেমিক্যালে সমস্ত দিকের গর্তকে কপার বিয়ারিং-এর পাশ দিয়ে সিল করে দেওয়া হবে। তিনি জানিয়েছেন, এই নিয়ে আইআইটি মাদ্রাজ-এর বিশেষজ্ঞ কমিটি একটি গবেষণা করে। তাদের গবেষণা করা তথ্য সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট রুককি-ও পাঠানো হয়। তারা তাদের ল্যাবে মন্দিরের লোড ফ্যাক্টর, স্টেবিলিটি এবং সিসমিক কন্ডিশন-এর পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে। এরপর তারাও গর্ত সিল করার পক্ষেই মত দেয়। 

রাম মন্দিরকে আড়াই বছরের মধ্যে ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়ার শপথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নৃপেন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, যাবতীয় চ্যালেঞ্জ এবং অতিমারির মতো এক কঠিন সময়কে মোকাবিলা করেও তারা আশা রাখছেন ২০২৩-এর শেষেই সাধারণ ভক্তরা রাম মন্দিরে রামলালার দর্শণ করতে পারবেন। তবে, মন্দিরের পুরো কাজ সম্পূর্ণ হতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। লোহা ছাড়া এই মন্দির যেভাবে পাথরের স্তূপ করে তৈরি করা হচ্ছে তা আগামিদিনে একটা বিষ্ময় হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি।
"