সংক্ষিপ্ত
মিডিয়ার অন্তর্তদন্তে দাবি করা হয়, পঞ্চাশ হাজার যে ফোন নম্বর তালিকা পেগাসাস অ্যাপের লিকড ডেটায় সামনে এসেছে সেখানে অন্তত ৩৭টি এমন সেলফোন নম্বর রয়েছে যার উপরে গোপন নজরদারি চালানোর একদম যথাযথ প্রমাণ রয়েছে।
২০২১ সাল (Year 2021) দেশের রাজনীতির অন্দরমহল নাড়িয়ে দিয়েছিল পেগাসাস ইস্যু (Pegasus spyware scandal)। তোলপাড় উঠেছিল কেন্দ্রের শাসক দল (BJP) থেকে আঞ্চলিক দলগুলির (Regional Political Party) ভিতরে। সত্যিই কি ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে। সত্যিই কি ফোন হ্যাক করা হয়েছে। এরকম হাজারো প্রশ্ন উঠেছিল তখন। ঘটনার শুরু জুলাই মাসে। ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ান সহ প্রায় ১৬টি মিডিয়া পেগাসাস সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে ফোন থেকে তথ্য চুরি করা হয়েছে বলে রিপোর্ট প্রকাশ করে। বিশ্বের প্রায় এক ডজনেরও বেশি দেশ এই সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারি চালাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে জানান হয়।
পেগাসাস কি?
ইসরায়েলের সাইবার গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা সংস্থা এনএসও (NSO) গ্রুপ পেগাসাস তৈরি করেছে। ২০১৬ সাল থেকেই এটি সক্রিয়। এটি একটি সফটওয়ার। ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা পেগাসাস ব্যবহার করে তথ্য ফাঁস করা হয়েছে বলে একগুচ্ছ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে এনএসও গ্রুপ জানিয়েছে তাঁদের তৈরি করা প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাদক পাচার বিরোধী পদক্ষেপ, নিখোঁজ ও অপহৃত শিশু উদ্ধার, নারী পাচার রোধের মত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। শত্রু দেশের মারণ ড্রোনের গতিবিধি চিহ্নিত করা সম্ভব তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
কারা ছিলেন পেগাসাস তালিকায়?
এই রিপোর্টের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে ভারতে। বলা হয় ভারতবর্ষে ৩০০ ব্যক্তিগত ফোন নম্বরের উপর চলছিল গোপন নজরদারি। চাঞ্চল্যকর মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়, মোট পঞ্চাশ হাজার ফোন নম্বর পাওয়া গিয়েছে। এই ফোন নম্বরগুলি বিশ্বজুড়ে এমনকিছু দেশের যেখানকার সরকার কোনও না কোনও সময়ে নাগরিক অথবা বিরোধী রাজনৈতিক নেতা অথবা সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের উপরে গোপন নজরদারির জন্য অভিযুক্ত হয়েছে। এমনকী এই দেশগুলির মধ্যে বেশকিছু দেশের সরকার আবার পেগাসাস অ্যাপ-এর নির্মাতা সংস্থা এনএসও-র কাছ থেকে মিলিটারি ইনটেলিজেন্সির প্রযুক্তি কেনার গ্রাহক।
মিডিয়ার অন্তর্তদন্তে দাবি করা হয়, পঞ্চাশ হাজার যে ফোন নম্বর তালিকা পেগাসাস অ্যাপের লিকড ডেটায় সামনে এসেছে সেখানে অন্তত ৩৭টি এমন সেলফোন নম্বর রয়েছে যার উপরে গোপন নজরদারি চালানোর একদম যথাযথ প্রমাণ রয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট-সহ বিশ্বের ১৭টি মিডিয়ার চালানো এই অন্তর্তদন্তের রিপোর্টে এও দাবি করা হয়েছে যে, যে ৩৭টি নম্বরের উপরে নিশ্চিতভাবে গোপন নজরদারি হয়েছে- তারমধ্যে বেশকিছু নম্বর সিনিয়র সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, বিজনেস এক্সিকিউটিভস রয়েছেন। এর বাইরেও এমন দুজন মহিলার নম্বর এই ৩৭টি নম্বরের তালিকাতে রয়েছে যারা সৌদি আরবের খুন হওয়া সাংবাদিক জামাল খাসোগ্গি-র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
ভারতের একটি সর্বভারতীয় নিউজ পোর্টাল, যারা এই অন্তর্তদন্তের শরিক ছিল, তারা এমনও দাবি করে যে ইজরায়েলের স্পাইওয়ার পেগাসাসের মাধ্যমে দেশের অন্তত ৩০০ নম্বরের উপরে গোপন নজরদারি চলছিল। এর মধ্যে ৪০টি নম্বর হয় কোনও সিনিয়র সাংবাদিক অথবা মানবাধিকার কর্মী অথবা সরকারি আধিকারিকের। এমনকী যে সব সিনিয়ার সাংবাদিকের নম্বরে গোপন নজরদারি চালানো হচ্ছিল তারা হিন্দুস্তান টাইমস, নিউজ ১৮, দ্য হিন্দু এবং দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মতো প্রথিতযশা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত বলেও দাবি করে এই নিউজ পোর্টাল। ইন্ডিয়া টুডে-র এক্সিকিউটিভ এডিটর শিশির গুপ্তও এই নজরদারির তালিকায় ছিলেন বলে জানানো হয়।
এছাড়াও জানানো হয়, প্রশান্ত কিশোর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধীর ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে। দশজন ভারতীয় রয়েছেন সেই তালিকায়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিওরিটি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় তাদের নম্বর। সেখানেই এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। জানা গিয়েছে বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের তরফে নজরদারি করার জন্য প্রধান টার্গেট হিসেবে এদের বেছে নেওয়া হয়েছিল।
তুমুল বিরোধিতার মুখে পড়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। মামলা ওঠে দেশের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে জোর ধাক্কা খায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। আদালত পরিষ্কার জানিয়ে দেয় এই মামলায় কেন্দ্র যে রিপোর্ট পেশ করেছে তা অসম্পূর্ণ ও অস্বচ্ছ। এই রিপোর্টে মোটেও সন্তুষ্ট নয় শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি, পেগাসাসকাণ্ডে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি (Probe Committee) গড়ে সুপ্রিম কোর্ট। জানানো হয় এই কমিটিতে থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং দুজন সাইবার বিশেষজ্ঞ।