সংক্ষিপ্ত

নরেন্দ্রনাথ দত্ত বা ছোটবেলার 'বিলে' থেকে স্বামীজি হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী সময়ে তিনি কেমন ছিলেন? জেনে নিন তাঁর কলেজজীবনের একটি মজাদার গল্প।

দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ থেকে সন্ন্যাসী নরেন্দ্রনাথ দত্ত হয়ে উঠেছিলেন সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে পরমপুজ্য স্বামীজি। কিন্তু, এই নরেন বা ছোটবেলার 'বিলে' থেকে স্বামীজি হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী সময়ে তিনি কেমন ছিলেন? জেনে নিন তাঁর কলেজজীবনের একটি মজাদার গল্প।   

কলেজে যখন বি.এ. পরীক্ষার জন্য টাকা জমা দেওয়ার সময় হয়েছে, সেই সময়ে নরেন্দ্রের সহপাঠীরা সকলে পরীক্ষার ফি জমা দিতে পেরেছিলেন, শুধুমাত্র হরিদাস নামের এক সহপাঠী ছাড়া। হরিদাস ছিলেন বড়ই গরিব। পরীক্ষার টাকা তিনি জোগাড় করতে পারেননি। শুধু পরীক্ষার ফি-ই নয়, গোটা এক বছরের বেতনও বাকি ছিল তাঁর। হরিদাসের পক্ষে ফি-র টাকাটা কোনওমতে দেওয়া সম্ভব হলেও, এক বছরের বেতন দেওয়াটা একেবারেই অসম্ভব ছিল। তখন তাঁকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন স্বয়ং নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি জানতেন , বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে  পরীক্ষার্থীদের টাকা মকুব করে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সেই ক্ষমতা আছে কলেজের বৃদ্ধ কেরানি রাজকুমারবাবুর হাতে।


ছেলেরা যখন টাকা জমা দিচ্ছে, নরেন্দ্রনাথ তখন রাজকুমার বাবুর কাছে গিয়ে বললেন, ‘মশায় , হরিদাস দেখছি মাইনেটা দিতে পারবে না। অনুগ্রহ করে তাকে মাফ করে দিন। তাকে পরীক্ষায় বসতে দিলে সে ভালোরকমভাবে পাশ করবে। আর, না পাঠালে সব মাটি।’ ওই সময়ে, রাজকুমার বাবুর মেজাজ ভালো ছিল না। মুখ বিকৃত করে তিনি বললেন, ‘তোকে জ্যাঠামি করতে হবে না। তুই যা, নিজের চরকায় তেল দে গে যা।মাইনে না দিলে আমি ওকে পাঠাবো না।’ এই কথা শুনে নরেন্দ্রনাথ বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। তাঁর নিজের পক্ষে অত টাকা জোগাড় করা কঠিন ছিল, অথচ তাড়াতাড়ি টাকা জোগাড় না করলে বন্ধু পরীক্ষায় বসতে পারবে না। কী করা যায়?
 

ভাবতে ভাবতে তাঁর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। বাড়ি না ফিরে এসে সেদিন সন্ধ্যায় তিনি এক গুলি খাওয়ার আড্ডার কাছে গিয়ে অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তিনি জানতেন যে, কেরানি রাজকুমারবাবু আফিমের গুলি খাওয়ার নেশায় আসক্ত ছিলেন। অতএব ওই আড্ডায় আগত লোকদের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করতে লাগলেন নরেন। হঠাৎ করে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে সোজা গিয়ে দাঁড়ালেন একেবারে রাজকুমারবাবুর সামনে। 
 

নরেন্দ্রনাথ রাজকুমারবাবুর মুখোমুখি হতেই তাঁর মুখ শুকিয়ে গেল। সুযোগ বুঝে নরেন বললেন যে, হরিদাসের মাইনেটা যদি মুকুব না করেন তাহলে তিনি তাঁর এই আড্ডায় আসার কথাটি কলেজে ছড়িয়ে দেবেন। এই কথায় রাজকুমারবাবু ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি নরেনকে বললেন , ‘বাবা রাগ করিস কেন? তুই যখন বলছিস, আমি কি তা না করতে পারি?’ 


এই কথা শুনে নরেন্দ্রনাথ নিশ্চিন্ত হয়ে সেদিন বাড়ি ফিরে গেলেন। তিনি চোখের আড়াল হতেই রাজকুমারবাবু গুলির আড্ডায় নেশা করতে ঢুকে পড়লেন । পরদিন সকাল হতে না হতেই নরেন্দ্রনাথ হরিদাসের বাড়িতে গিয়ে বন্ধুকে ডেকে বললেন, ‘ওরে, খুব ফুর্তি কর। তোর মাইনের টাকাটা আর দিতে হবে না।’ তারপর গত সন্ধ্যার ঘটনাটা আনুপূর্বিক বর্ণনা করে দুই বন্ধুতে হাসিতে ফেটে পড়লেন।