গ্রেটা থুনবার্গের গুগল টুলকিট বিতর্কে গ্রেফতার দিশা রবি  বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা ২১ বছরের পরিবেশ আন্দোলনকারী দিশা  রবিবার তাঁকে দিল্লির কোর্টে হাজির করায় পুলিশ  টুলকিটে মাত্র ১টি লাইন এডিট করার কথা জানিয়েছেন তিনি  

দিশা রবির গ্রেফতারিতে ছড়াল জোর বিতর্ক। অবিলম্বে ২১ বছরের তরুণী অ্যাক্টিভিস্টের মুক্তি-র দাবি জানিয়ে সরবে হয়েছে সবমহল। বিজেপি বিরোধী কংগ্রেস-সহ সমাজবাদী পার্টি, সিপিএম থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র মহল এবং বিভিন্ন অ্যাক্টিভিস্টরা এই দিশার মুক্তির জন্য সরব হয়েছেন। এমনকী, বিদেশ থেকেও অসংখ্য মানুষ দিশার গ্রেফতারিতে সমালোচনা করেছেন। শনিবার বিকেলে বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করা হয় দিশা রবি-কে। তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। শনিবার বিকেলেই দিশার বেঙ্গালুরুর বাড়িতে হানা দেয় দিল্লি পুলিশের সাইবার ইউনিট সাইপ্যাড-এর একটি দল। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, পরিবেশ আন্দোলনকারী সুইডেনের কিশোরী গ্রেটা থুনবাার্গ কৃষি বিক্ষোভের সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে টুলকিট শেয়ার করেছিলেন তা তৈরি করে দিয়েছিলেন দিশা। গ্রেটার গুগল টুলকিট-কে ইতিমধ্যেই দেশদ্রোহিতার তকমা দিয়েছেন কৃষি বিক্ষোভ আন্দোলনের বিরোধীরা এবং একে সার্বভৌম ভারতের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করার প্রয়াস বলেও মন্তব্য করেছে তারা। গ্রেটার গুগল টুলকিট নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছিল দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল। সেই তদন্তের সূত্র ধরেই দিশা-র সন্ধান মেলে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। 

Scroll to load tweet…

সাইপ্যাড যা দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল, তারা জানিয়েছে, দিশা শুধু গুগলে টুলকিট তৈরি করেননি, সেইসঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ-এ একটি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। যারা কৃষি বিক্ষোভের সমর্থনে এই টুলকিট তৈরির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এমনকী দিশা পোয়েটিক জাস্টিস নামে একটি খালিস্তানিপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন এই টুলকিট তৈরিতে বলে দাবি সাইপ্যাড-এর। দিশা একজন পরিবেশ আন্দোলনকারী নামেই দেশ ও বিদেশে পরিচিত। তাঁরা বাবা একজন অ্যাথলেট কোচ। দিশা ভেগান আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত। মানে আমিষ খাদ্য ছেড়ে পুরোপুরি নিরামিশাষী হওয়ার জন্য আন্দোলনেও যুক্ত রয়েছেন। বেঙ্গালুরুতে একটি স্টার্টফার্ম-এর সঙ্গেও যুক্ত দিশা। 

Scroll to load tweet…

রবিবার যখন দিশাকে দিল্লি-র পাতিয়ালা হাউসকোর্টে পেশ করা হয়, তখন বিচারকের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। দাবি করেন, টুলকিট-এ মাত্র একটি লাইন তিনি এডিট করে দিয়েছিলেন। এর বাইরে টুলকিটে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই। দিশাকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবে, দিশার গ্রেফতারি জাতীয় রাজনীতি এবং জনজীবনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। বিজেপি বিরোধী কংগ্রেস থেকে চিদাম্বরম থেকে শুরু করে শশী থারুর, জয়রাম রমেশ প্রত্যেকেই এই গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করেছেন এবং দিশার অবিলম্বে নির্শর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। 

Scroll to load tweet…

Scroll to load tweet…

দিশার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন বাম নেতারাও। সীতারাম ইয়েচুরি টুইট করে এই গ্রেফতারি নিন্দা করেছেন। শিবসেনা নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীও গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করেছেন। 

Scroll to load tweet…

Scroll to load tweet…

সমাজবাদী পার্টির পক্ষে অখিলেশ যাদব, দিশার গ্রেফতারিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন- কখন সেই মানুষগুলিকে গ্রেফতার করা হবে যারা টুলকিট দেশের নিরাপত্তায় আঘাত করেছে বলেছে সমানে মিথ্যা উত্তেজনা এবং বিদ্বেষের পরিস্থিতি তৈরি করছেন। 

কৃষি বিক্ষোভের আন্দোলনের মূল মঞ্চ সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চা(এসকেএম) দিশার গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করার সঙ্গে সঙ্গে অবিলম্বে তাঁর নির্শর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে এসকেএম জানিয়েছে, 'যে কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাঁর অবিলম্বে মুক্তি পাওয়া উচিত এবং আমরা মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। ' এর সঙ্গে সঙ্গে বিদেশ থেকেও অসংখ্য নামী ব্যক্তিত্ব দিশার গ্রেফতারিতে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তাঁরাও দিশার নির্শর্ত এবং অবিলম্বে মুক্তি দাবি জানিয়েছেন। 

Scroll to load tweet…

Scroll to load tweet…

Scroll to load tweet…

Scroll to load tweet…

সম্প্রতি কৃষি বিক্ষোভ নিয়ে ভারত সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন বিশ্ব পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ। সেইসঙ্গে কৃষি বিক্ষোভের সমর্থনে একটি গুগল টুলকিটও টুইটার পোস্টে শেয়ার করেছিলেন গ্রেটা। তাঁর পিছন পিছন একই বিষয়ে ভারত সরকারের সমালোচনা করে টুইট করেন পপস্টার রিহানা। এই নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় ভারতে। বিজেপি একে আন্তর্জাতিক দুষ্টু শক্তির চক্রান্ত বলে মন্তব্য করে। গ্রেটা ও রিহানার টুইট ভারতের অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বে আঘাত বলেও মন্তব্য করে তাঁরা। গ্রেটা-রিহানার বিরুদ্ধে সচিন-সৌরভ থেকে শুরু করে লতা মঙ্গেশকরও টুইট করেন এবং একে দেশের স্বাধীনতার উপরে আঘাত বলে মন্তব্য করা হয় ওই সব টুইটে। দিল্লি পুলিশও এই নিয়ে তদন্ত শুরু করে দেয়। দিশা-র গ্রেফতারি যে টুলকিট বিতর্কে আরও মাত্রা যোগ করল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। 

Scroll to load tweet…

Scroll to load tweet…