সংক্ষিপ্ত
- একদিকে লাশ গুনছে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু
- অন্যদিকে পথ দুর্ঘটনায় মরছে পরিযায়ী শ্রমিক
- খাওয়ার পয়সা না থাকায় ঘরে ফেরা ছাড়া উপায় নেই
- কিন্তু হেঁটে, সাইকেলে, ট্রাকে ঘরে ফিরতে গিয়ে ঘটছে মরণ
পথ দুর্ঘটনায় পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। লকডাউন ঘোষণার পর থেকে একের পর এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। যাদের কারোরই কোনও কাজ নেই, আয় নেই, ঘরেও ফিরতে পারছেন না। টাকা না থাকায় ভিনরাজ্যে জীবনযাপন করাও দায় হয়ে যাচ্ছে। দেশে লকডাউনের প্রথম দফা থেকেই এটা একটা বিরাট সমস্যা।
একদিকে লাশ গুনছে করোনা, অন্যদিকে দুর্ঘটনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ট্রাক, অটোরিকশা, সাইকেল এমনকি পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। কিন্তু একের পর এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। কোথাও মালগাড়ির চাকায় পিষে কোথাওবা ট্রাকের ধাক্কায়। অনেকেই আবার পথে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ক্লান্তি ও পরিশ্রমের ফলেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুুন- করোনা সংক্রমিত কে, ভাই-এর বদলে দাদাকে ভর্তি করা হল হাসপাতালে
শনিবার ফের দুটি পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় পরিযায়ী শ্রমিকদের। প্রথম দুর্ঘটনাস্থল উত্তরপ্রদেশের অরাইয়া, পরেরটি মধ্যপ্রদেশের সাগর ও ছতরপুর সীমান্তে। এদিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ উত্তরপ্রদেশের অরাইয়ায় দু’টি লরির মুখোমুখি ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৪ জন পরিযায়ী শ্রমিকের। ঘটনায় আহত হয়েছেন ২২ জন। এই ঘটনার রেশ ফুরবার আগেই মধ্যপ্রদেশের সাগর ও ছতরপুর সীমান্তে ট্রাক উলটে মৃত্যু হয় ৫ পরিযায়ী শ্রমিকের, আহত হন ১৭ জন।
আরও পড়ুন- লকডাউনে দুর্ভোগের ইতি, শবর গ্রামে ত্রাণ নিয়ে হাজির জেলা পরিষদের সভাধিপতি
সেভ লাইফ ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ মার্চ থেকে ৩ মে পর্যন্ত তিন দফার লকডাউন সময়ে ২য় দফায় মোট পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা ৬০০। এর মধ্যে ২য় দফায় পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মোট ১৪০ জনের। এরমধ্যে ৩০% অর্থাৎ ৪২ জন পরিযায়ী শ্রমিক, যাঁরা পায়ে হেঁটে বাড়ি পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন।
আরও পড়ুন- লকডাউন কাড়ল প্রাণ, উত্তরপ্রদেশে পথ দুর্ঘটনায় নিহত রাজ্যের পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিক
রিপোর্ট অনুযায়ী মৃতদের মধ্যে ৮ জন ট্রাকের ধাক্কায় বা কোনও দ্রুত গতিতে ছুটে আসা গাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন। পঞ্জাবে এই মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর পরে রয়েছে কেরালা, দিল্লি ও কর্নাটক। সেভ লাইভ ফাউন্ডেশনের সিইও পীযূশ তিওয়ারি জানাচ্ছেন, এটা নুন্যতম সংখ্যা, কারণ এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু রাজ্যের থেকে পথ দুর্ঘটনার সব তথ্য পাওয়া যায় নি।
১৪০টি মৃত্যুর মধ্যে ৯টি রাজ্য থেকে মৃত্যু একশোরও বেশি। ওই ১০০-রও বেশি মৃত্যু হয়েছে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, অসম, কেরল, কর্নাটক, রাজস্থান, পাঞ্জাব ও তামিলনাড়ু এই ন’টি শহরে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিজেদের বাড়ি ফিরতে না পারায় বিভিন্ন রাজ্যে অশান্তি ছড়িয়েছে একাধিকবার। তারই মধ্যে এই ভয়ংকর তথ্য প্রকাশ করল সেভ লাইফ ফাউন্ডেশন।
লকডাউনে প্রায় না খেয়েই দিনযাপন করছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। সরকারের দেওয়া শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে যে উঠবেন, পকেটে সেই ভাড়াটুকুও নেই। কিন্তু সে কথা আর বুঝছে কে! তাই এই অবস্থাতেও অন্ধ্রপ্রদেশে একদল পরিযায়ী শ্রমিকের ওপর ন্যক্কারজনকভাবে লাঠি চালালো পুলিশ। নাগাড়ে চালিয়ে যাওয়া পুলিশের লাঠির আঘাত থেকে রেহাই পান নি মহিলারাও।
শুধু কি পরিযায়ী শ্রমিক, স্থানীয় এক প্রশাসক ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করতে এলে পুলিশ তাকে মেরেও গুরুতর আহত করে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর পুলিশের অমানবিক অত্যাচারের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। পুলিশের মার খেতে খেতেই এক পরিযায়ী শ্রমিক বলে ওঠেন, ‘খিদের জ্বালায় এমনিই মরে যাচ্ছি। তার চেয়ে আপনারাই বরং পিটিয়ে মেরে ফেলুন’। কিন্তু ওঁরা কাদের বলছেন সে কথা, পুলিশ তখন লাঠি চালাতে ব্যস্ত। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শ্রমিকরা তাঁদের শরীরের ক্ষত চিহ্ন দেখাচ্ছেন। কী ভাবে পুলিশ তাঁদের পিটিয়েছে। মহিলা শ্রমিকরাও দেখান, শরীরে পুলিশের লাঠি পেটানোর নানা চিহ্ন।