সংক্ষিপ্ত

ভারতের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের গুরুত্ব অন্যরকম মর্যাদার। ১৯৭১ সালে এই যুদ্ধ আরম্ভ হয়, পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে সামরিক ক্ষমতাচ্যুত করার আদেশ দেন। 

১৯৭১ সালে (1971 War) ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে (India-Pakistan War) ঐতিহাসিক যুদ্ধ (Historical War) জয় করেছিল ভারত। এই যুদ্ধের পরই পাকিস্তান (Pakistan) থেকে আলাদা হয়ে পৃথক দেশ বাংলাদেশ (Bangladesh) গঠন হয়েছিল। এই যুদ্ধে পরাজয়ের পর ভারতীয় সেনার কাছে নিজেদের সমর্পণ করেছিল পাকিস্তান সেনা। যা কিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ছিল গোটা বিশ্ব।

এই একটা যুদ্ধ ভারতের সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল পাকিস্তানকে। তারপর থেকে ভারতের সামনে এক নতুন দিক খুলে যায়। তাই ভারতের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের গুরুত্ব অন্যরকম মর্যাদার। ১৯৭১ সালে এই যুদ্ধ আরম্ভ হয়, পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে সামরিক ক্ষমতাচ্যুত করার আদেশ দেন। দলে দলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীরা ভারতে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন। 

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী চেয়েছিলেন যে, এপ্রিল মাসে পাকিস্তানকে আক্রমণ করা হবে এবং তিনি সেনা প্রধান স্যাম মানেকশ এর ও মতামতও গ্রহণ করেছিলেন। মানেকশো পরিষ্কারভাবে ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন যে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধ করবেন। সেই মতো প্ল্যানমাফিক এগোনো হয়। ভারত যে সময়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় পেয়েছিল, তা মাইল ফলক তৈরি করেছিল। এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ভারত এই জয় পায়। যা মানসিক দিক থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে দিয়েছিল আমাদের দেশকে। 

১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর আর্থ সামাজিক দিক থেকে প্রায় হেরে যাওয়া ভারত দেওয়ালে পিঠ ঠেকানো অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী থেকে ঠিক এক বছর আগে প্রথম বারের মত শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল ক্রিকেটের কঠিন ম্যাচে। অবশ্য এই জয়ের গোড়া পত্তন হয়েছিল সেই ১৯৭১য়েই। 

এত গেল খেলার মাঠের কথা। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে তখন কি চলছে.. প্রাইভেট ব্যাঙ্কগুলির সরকারিকরণ বা জাতীয়করণ করার বিরোধিতায় নিজের দলেই প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তবে থেমে থাকেননি। দারিদ্রতার বিরুদ্ধে তার লড়াই সফলতার চূড়ায় নিয়ে গিয়েছিল তাঁকে। মহাজোটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রী হিসেবে তাঁকে তুলে ধরে ইন্দিরার এই সিদ্ধান্ত। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু ও নেহেরু পরবর্তী রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা পেরিয়ে যায় ভারত। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইন্দিরার হাত ধরে স্থিতিশীলতা আসে। 

এই সব কিছুরই গোড়া পত্তন করেছিল ১৯৭১ সালের যুদ্ধে বারতের জয়। এই যুদ্ধের পরে এক অভিনব দিশায় হাঁটতে শুরু করে দেশ। তবে ভারতের অভ্যন্তরে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল, নকশাল আন্দোলনের আগুন বাংলা থেকে দিল্লি মুম্বই অবধি ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও ছিল আরেকটি অন্ধকার বাস্তব। ভারত অর্থনীতিতে ভালো ফল করলেও বৃদ্ধির হার আটকে ছিল সেই তিন শতাংশেই। তবে সব পেরিয়েও আশার আলো জাগিয়েছিল ১৯৭১ সালের যুদ্ধ।