সংক্ষিপ্ত

  • পাগড়ি বিতর্ক নিয়ে সরগরম বাংলা রাজনীতি
  • বিজেপি-র নবান্ন অভিযানে শিখ নিরাপত্তারক্ষী গ্রেফতার হয়
  • বলবিন্দর সিং নামে ওই নিরাপত্তারক্ষীর পাগড়ি খুলে গিয়েছিল
  • এই শিখের পাগড়ি জোর করে খুলে নেওয়ার অভিযোগও ওঠে
     

বৈরিতার সম্পর্কে এখন খানিকটা হলেও মমত্বের প্রলেপ পড়েছে। এখন কিছুটা হলেও রাজ্য সরকারের অবস্থানের খুল্লামখুল্লা বিরোধিতার পথে হাঁটতে নারাজ শিখ নিরাপত্তারক্ষী বলবিন্দর সিং-এর পরিবার। বরং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার চেয়ে তাঁরা এখন বেশি নজর দিচ্ছেন বলবিন্দরের মুক্তির বিষয়ে। এহেন এক পরিস্থিতিতে বলবিন্দর সিং-এর পরিবারের কাছে পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূজোর উপহার। মুখ্যমন্ত্রীর এই সৌজন্যে স্বাভাবিকভাবেই খুশি বলবিন্দর সিং-এর স্ত্রী করমজিৎ কওর। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সৌজন্যে সাড়া দিয়ে তাই করমজিৎ পাঠাচ্ছেন পাল্টা উপহার। আর এই উপহার হল একটি পাগড়ি। যা শিখ সমাজের এক সম্মানের প্রতীক। 

 

বিজেপি-র নবান্ন অভিযানে গ্রেফতার হয়েছিলেন বলবিন্দর সিং। প্রাক্তন এই সেনা জওয়ানকে হাওড়া এলাকা থেকে মিছিল চলাকালীন গ্রেফতার করা হয়। বলবিন্দরের বিরুদ্ধে পুলিশের সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল তাঁর কাছে থেকে একটি পিস্তল। পরে এই পিস্তলের লাইসেন্সের ব্যাপারে পুলিশ অবগত হয়। কিন্তু, পুলিশি তদন্তে জানা যায় এই লাইসেন্স জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরির। পুলিশ দাবি করে, এই লাইসেন্সে পিস্তলটি রাজৌরির বাইরে অন্যকোনও স্থানে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। তবে, পিস্তল উদ্ধারের থেকেও বড় হয়ে ওঠে শিখ বলবিন্দর সিং-এর পাগড়ি খুলে যাওয়াটা। যা সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে দেশজুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছিল। একজন শিখের পাগড়ি খুলে নেওয়াটা শিখ ধর্মের প্রবল অপমান বলেই গণ্য হয়। এই বিতর্কে ইন্ধন জোগায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের লাগাতার মন্তব্য। বিজেপি-ও এই পাগড়ি বিতর্কে মুখ খোলে। পাগড়ি বিতর্কে টুইট করেন হরভজন সিং থেকে শুরু করে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দ সিং। এঁরা সকলেই পাগড়ি বিতর্কে মমতার হস্তক্ষেপ দাবি করেন। যদিও, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানায়, ভিড়ে ধস্তাধস্তিতে পাগড়ি খুলে গিয়েছিল। কোনও পুলিশকর্মী ইচ্ছাকৃতভাবে পাগড়ি খোলেনি। বিষয়টি নিয়ে বলবিন্দর সিং-এর পরিবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখাও করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের সামনে অবস্থানেও বসার হুমকি দিয়েছিলেন বলবিন্দর সিং-এর স্ত্রী করমজিৎ। কিন্তু, এরপর থেকেই বলবিন্দর সিং-এর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর এবং পাগড়ি বিতর্কে বার্তা দেন মমতা। এরপর-ই আস্তে আস্তে কিছুটা হলেও বলবিন্দরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সংযোগ সেতু তৈরি হয়। যার হাত ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজো-র পোশাক উপহার দেন বলবিন্দরের পরিবারকে। 

আরও পড়ুন- পুজোর আগে মানবিক মমতা, বিজেপির বলবিন্দরের স্ত্রীকে ন্যায় বিচারের আশ্বাস-পোশাক উপহার

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই উপহার হাতে পেয়েছেন করমজিৎ কওর। পরে তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে তিনি একটি সালওয়ার-স্যুট এবং ছেলের জন্য কুর্তা-পাজামা উপহার পেয়েছেন। স্নেহের এই উপহারে তিনি যে আপ্লুত তাও জানাতে কুণ্ঠাবোধ করেননি করমজিৎ। তিনি জানান,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে তিনিও একটি পাগড়ি উপহার দিতে চান।

আরও পড়ুন- রাজ্যপালের দারস্থ বলবিন্দর সিং -এর পরিবার, তবে রাজ্য সরকারের ওপরেও ভরসা আছে বলে জানালেন তারা 

এদিকে, বলবিন্দর সিং-এর মুক্তি নিয়ে শনিবার রাজ্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন করমজিৎ। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ বীরেন্দ্র-র সঙ্গে দেখা করেন করমজিৎ। যে ভাবে রাজ্য সরকার বলবিন্দর-কে একটা সদর্থক বার্তা পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।  ডিজিপি বীরেন্দ্র নাকি বলবিন্দরের মুক্তি নিয়ে অতি আশামূলক বার্তা তাঁদেরকে দিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমের সামনে এমনটা জানান করমজিৎ। তিনি জানিয়েছেন, বলবিন্দর দ্রুত পঞ্জাবের বাড়িতে ফিরে যাবেন এই আশ্বাস নাকি নিজে থেকেই দিয়েছেন বীরেন্দ্র। 

আরও পড়ুন- স্মরণ করালেন জালিওয়ানাবাগ হত্যাকাণ্ড, বলবিন্দার সিং ইস্যুতে ফের টুইট রাজ্যপালের

এখন পর্যন্ত সূত্র অনুযায়ী যে খবর মিলছে তাতে, বলবিন্দর-কে আপাতত জামিন নিতে হবে। এই প্রক্রিয়াকে দ্রুত সম্পন্ন করতে বলবিন্দর-কে খুব শীঘ্র আদালতেও তোলা হবে বলে খবর। ৮ অক্টোবর বিজেপি-র মিছিলে গ্রেফতার হন বলবিন্দর। এরপরই ছেলে হরসবীর-কে সঙ্গে করে পঞ্জাব থেকে কলকাতায় চলে আসেন করমজিৎ। সেই থেকে তাঁরা এখন কলকাতায় রয়েছেন।