সংক্ষিপ্ত
উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (Uniform Civil Code) লাগু করার কথা বলেছেন পুষ্কর সিং ধামি (Pushkar Singh Dhami)। সারা দেশে এই বিধি লাগুর দাবিতে, মোদী সরকারকে (Modi Govt) অনলাইন পিটিশন দিচ্ছে স্যাফ্রন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক (Saffron Think Tank)।
গত কয়েকদিন ধরে ফের আলোচনায় ইউনিফর্ম সিভিল কোড (Uniform Civil Code) বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। উত্তরাখণ্ডের নির্বাচনের (Uttarakhand Elections 2022) আগ দিয়ে সেই রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করার কথা তুলেছে বিজেপি (BJP)। সোমবার রাজ্যে ভোটগ্রহণের দিনও ফের মুখ্য়মন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি (Pushkar Singh Dhami) জানিয়েছেন, নতুন বিজেপি সরকার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি অবশ্যই চালু করবে। কারণ, এই আইন তাদের রাজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই পরিস্থিতিতেই সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে এক অনলাইন স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করল স্যাফ্রন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক (Safron Think Tank) নামে এক সংস্থা।
কী এই ইউনিফর্ম সিভিল কোড?
বর্তমানে, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার এবং দত্তক নেওয়ার মতো পারিবারিক বিষয়ের নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন পার্সোনাল ল বোর্ডের আইনের ধারা অনুসরণ করা হয়। ইসলাম ধর্মের অনুসরণকারীদের জন্য যেমন মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (Muslim Personal Law Board) রয়েছে। এই ব্যবস্থা ছিল ব্রিটিশদের তৈরি। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু হলে, বিভিন্ন ধর্ম ও জাতি-উপজাতি একই দেওয়ানি বিধির আওতায় আসবে। অর্থাৎ, বিবাহ, বিচ্ছেদ ইত্যাদি বিষয়ে আইনি বিষয়ের নিষ্পত্তির জন্য সমগ্র দেশে একটিই আইন বলবৎ হবে। ভারতের সংবিধানের (Indian Constitution) ৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদ ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে রাষ্ট্রীয় নীতির নির্দেশমূলক নীতিগুলির একটি হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন - ক্ষমতায় এলে রাজ্যে চালু হবে ইউনিফর্ম সিভিল কোড, উত্তরাখণ্ডে ভোটের আগে আশ্বাস বিজেপির
আরও পড়ুন - অভিন্ন দেওয়ানি বিধি - কেন্দ্রকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ আদালতের, ফের কি দেশজোড়া বিতর্ক
আরও পড়ুন - হিন্দু-মুসলিম'এর ডিএনএ এক, 'অভিন্ন দেওয়ানি নীতি'র ঘোষণা বিতর্কিত বিজেপি নেতার
স্যাফ্রন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের দাবি
এই অবস্থায় স্যাফ্রন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের দাবি, ইউনিফর্ম সিভিল কোডের প্রয়োজনীয়তা সংবিধানের ৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদ কল্পনা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও বারে বারে এই বিধি লাগু করার প্রয়োজনিয়তার উপর জোর দিয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় সমাজ থেকেও জাতি-ধর্ম-সম্পর্কিত প্রতিবন্ধকতা ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাচ্ছে। এএই অবস্থায় বিভিন্ন সম্প্রদায়, উপজাতি, বর্ণ বা ধর্মের ভারতীয় যুবরা, বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের মতো বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আইনের দ্বন্দ্বের কারণে উদ্ভূত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই অবস্থায় সারা দেশে অভিন্ন নাগরিক বিধি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সংসদে একটি আইন প্রণয়ন করা হোক, এমনটাই চাইছে স্যাফ্রন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। তাদের দাবি, সংবিধান প্রণেতাদেরও লক্ষ্য ছিল ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে এবং সম্মতিক্রমে সকল নাগরিকের জন্য একটি অভিন্ন নাগরিক আইন তৈরি।
গত বছরই নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট
গত বছর জুলাই মাসে, দিল্লি হাইকোর্টও (Delhi Highcourt) এক উপজাতীয় দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলার পর্যবেক্ষণে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করা প্রয়োজনিতার কথা জানিয়েছিল। এর জন্য কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রককে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিল আদালত। বিচারপতি প্রতিভা সিং (Justice Prativa Singh) বলেছিলেন, আধুনিক ভারতীয় সমাজ ধীরে ধীরে একজাতীয় হয়ে উঠছে। ধর্ম, সম্প্রদায় ও বর্ণের পার্থক্য ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হচ্ছে। ভারতীয় যুবদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের, উপজাতির, বর্ণের বা ধর্মের ব্যক্তিগত আইন, বিশেষ করে বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত আইনের দ্বন্দ্বের কারণে উদ্ভূত সমস্যার মুখে ফেলা উচিত নয়।
দুবার সংসদে খসড়া প্রস্তাব প্রত্যাহার করেছে মোদী সরকার
১৯৮৫ সালে সুপ্রীম কোর্টও (Supreme Court) এই আইন তৈরির পক্ষেই রায় দিয়েছিল। কিন্তু, তারপরও কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপই নেয়নি। ভারতের প্রথম দল হিসাবে, বিজেপি এই আইন লাগু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্রসঙ্গত, তিন তালাক আইন, সিএএ-এনআরসি, বা অযোধ্যার রাম মন্দিরের মতো, সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করাও বিজেপির দীর্ঘদিনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ২০১৯ সালের নভেম্বর এবং ২০২০ সালের মার্চ মাসে দুবার সংসদে মোদী সরকার (Modi Govt) এই বিধির খসড়া প্রস্তাব দিয়েও দু'বারই তাড়াতাড়ি তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।