সংক্ষিপ্ত
- ফের কেন্দ্রের সঙ্গে মমতা সরকারের দ্বন্দ্ব
- এবার রেড জোনের তালিকা নিয়ে বিরোধ
- কেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী রাজ্যে রেড জোনে ১০টি জেলা
- কেন্দ্রের প্রকাশ করা তালিক নিয়ে ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার
শুক্রবারই দেশজুড়ে রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনের তালিকা প্রকাশ করেছে ভারত সরকার। এই তালিকা অনুযায়ী দেশের মোট ৭৩৩টি জেলার মধ্যে ১৩০টি জেলাকে রাখা হয়েছে রেড জোনের তালিকায়। আর এই তালিকায় রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বাংলার ১০টি জেলাকেও। কেন্দ্রীয় সরকারের পশ্চিমবঙ্গের জন্য প্রকাশ করা এই রেড জোনের তালিকা নিয়ে এবার বিরোধ শুরু হয়েছে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদান রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে রেড জোনের আওতায় রয়েছে ১০টি জেলা। সেগুলি হল- কলকাতা, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং ও মালদহ। আই কেন্দ্রের এই মূল্যায়ণ ত্রূটিপূর্ণ দাবি করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবকে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার। সংশোধিত তালিকাও প্রকাশ করতে বলেছেন তিনি।
রাজ্যের ১০ টি জেলা এখনও রয়েছে করোনার রেড জোনে, একনজরে চোখ বুলিয়ে নিন আপনি রয়েছেন কোথায়
আশা-আশঙ্কার দোলাচলে দেশ, ২ সপ্তাহে রেড জোন কমলেও বাড়েনি করোনামুক্ত গ্রিন জোনের সংখ্যা
করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে রেমডেসিভির, অনুমোদন দিয়ে দিল মার্কিন প্রশাসন
রাজ্যের চিঠি পেয়ে দমবার পাত্র নয় কেন্দ্রও। আক্রান্তেরং সংখ্যার গড়মিল নিয়ে ফের রাজ্যকে চাপ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, বিবেক কুমারের চিঠি অনুযায়ী, রেড এবং অরেঞ্জ জ়োনে এখনও পর্যন্ত ‘কেস রিপোর্ট’ হয়েছে ৯৩১। অথচ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৭৯৫। সেই তথ্যও পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরই পাঠানো।
বৃহস্পতিবার ক্যাবিনেট সচিবের সঙ্গে রাজ্যগুলির মুখ্যসচিব এবং স্বাস্থ্য সচিবের ভিডিয়ো কনফারেন্স বৈঠক হয়। তার পরেই সব মুখ্যসচিবদের চিঠি পাঠিয়ে জ়োন বিভাজনের তথ্য জানান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব। এর আগে করোনা-আক্রান্তের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার হারের নিরিখে জেলাগুলিকে হটস্পট বা রেড জ়োন, অরেঞ্জ ও গ্রিন জ়োনে ভাগ করা হয়েছিল। এখন করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। তাই আক্রান্তের সংখ্যা, আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার হার, করোনা-পরীক্ষা এবং নজরদারির তথ্যের উপর ভিত্তি করে জেলাগুলির জ়োনভিত্তিক পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, নতুন নিয়মে সেই জেলাগুলিকেই গ্রিন জ়োনের আওতাভুক্ত ধরা হবে, যেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও করোনা-আক্রান্ত নেই অথবা গত ২১ দিন ধরে কোনও ‘কেস’ রিপোর্ট হয়নি।
সেই অনুযায়ী কেন্দ্রের দেওয়া তালিকায় রাজ্যের অরেঞ্জ জ়োনের সংখ্যা ১১ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচে এবং গ্রিন জ়োনের সংখ্যা একই রয়েছে— ৮। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের চিঠির সঙ্গে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে এখন রেড জ়োনের সংখ্যা চার থেকে বেড়ে হয়েছে দশ। আগে রেড জোনের আওতায় ছিল কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুর। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এই জেলাগুলি এত দিন অরেঞ্জ জ়োন-এর আওতাভুক্ত ছিল। যদিও এই তথ্য মানতে রাজি নয় রাজ্য। রাজ্যের দাবি, কেন্দ্রের স্থির করে দেওয়া মাপকাঠি অনুযায়ীই, রেড জ়োনের মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর রয়েছে। ফলে কেন্দ্রের এই মূল্যায়ন ‘ত্রুটিপূর্ণ’।
এদিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব নিজের চিঠিতে জানিয়েছেন, কেন্দ্রের পাঠান এই তালিকা পরিবর্তনশীল। প্রতি সপ্তাহে সেই তালিকা সংশোধিত হবে, তাও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তৃণমূল স্তর থেকে পাওয়া সমীক্ষা এবং তথ্যের ভিত্তিতে রাজ্যগুলি কোনও নতুন এলাকাকে রেড বা অরেঞ্জ জ়োন-ভুক্ত করতে পারে। কিন্তু মন্ত্রকের স্থির করে দেওয়া রেড বা অরেঞ্জ জ়োনের তালিকা থেকে কোনও এলাকাকে শিথিল করতে পারবে না।
কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের সফর নিয়ে আগেই নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল রাজ্য সরকার। প্রশাসনের তরফে এও বলা হয়, কেন্দ্রীয় দল বাস্তবসম্মত রিপোর্ট দেবে বলেই তাঁরা আশা করছেন। সেই আবহে কেন্দ্রের এই তালিকায় ফের একবার ক্ষুব্ধ রাজ্য প্রশাসন। প্রশ্ন উঠছে, কালিম্পং এবং জলপাইগুড়িকে অরেঞ্জ থেকে রেড জ়োনের তালিকায় আনা নিয়ে। এই ২ জেলা থেকে আক্রান্তের শেষ তথ্য পাওয়া গিয়েছিল ২ এবং ৪ এপ্রিল। কেন্দ্রীয় মাপকাঠি অনুযায়ী, ২১ দিনের সময়সীমা এই ক্ষেত্রে পেরিয়ে গিয়েছে। ফলে কোন যুক্তিতে এগুলি লাল-তালিকাভুক্ত তা নিয়ে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।
এদিকে রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অরেঞ্জ থেকে লাল-তালিকায় ঢুকে পড়া দার্জিলিং জেলায় শেষ কেস রিপোর্ট হয়েছে ২১ এপ্রিল। পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ২৮ এপ্রিল শেষ কেস পাওয়া গিয়েছে। সেগুলির ক্ষেত্রে ২১ দিনের সময়সীমা এখনও পেরোয়নি।