সংক্ষিপ্ত
২০২৩ সাল বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরও শেষ হতে চলল প্রায়। দেখে নিন ২০২৩ সালের সবচেয়ে বড় ও নজরে রাখার মতো ১০ রাজনীতির খবর।
২০২৩ সাল বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরও শেষ হতে চলল প্রায়। ২০২৪ সালে পা রাখার আর মাত্র কিছু সময় বাকি। বিগত বছরের স্মৃতি মনে তাজা থাকাই স্বাভাবিক। কারণ এই বছরটি ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। দেশ ও দশের রাজনীতিতে ছনিজের ছাপ রেখেছিল ভারত। দেখে নিন ২০২৩ সালের সবচেয়ে বড় ও নজরে রাখার মতো ১০ রাজনীতির খবর।
জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন
ভারত এ বছর জি-২০ আয়োজন করেছিল। এই ঘটনা বিশ্বের অনেক দেশের সামনে ভারতের শক্তিশালী ছবি তুলে ধরে। ভারতকে ২০২২ সালের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালি শহরে G20 এর সভাপতিত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই দায়িত্ব এমন এক সময়ে হস্তান্তর করা হয়েছিল যখন পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং করোনার মতো মহামারী থেকে তখনও সেরে ওঠেনি। কিন্তু ভারত এমনভাবে G-20 অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল যে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়। সব রাষ্ট্রপ্রধান ভারতের প্রশংসা করেন। ৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৬০টি শহরে এই অনুষ্ঠানের জন্য ২২০টিরও বেশি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রায় ১২৫টি দেশ থেকে ১ লাখেরও বেশি অতিথি ভারত সফর করেন। G-20 শীর্ষ সম্মেলনে এক পরিবার, এক পৃথিবী, এক ভবিষ্যত থিমের মাধ্যমে, ভারত বিশ্বের আশাকে নতুন ডানা দিয়েছে এবং যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছে।
চন্দ্রযান-৩ এবং আদিত্য-এল১
এ বছরও মহাকাশের বিশ্বে ভারতের সাফল্য প্রশ্নাতীত। চন্দ্রযান-৩-এর মাধ্যমে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা যা আজ পর্যন্ত বিশ্বের কেউ করতে পারেনি। চন্দ্রযান-৩ এর মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে ভারত। এছাড়াও, আদিত্য-এল1-এর সাফল্যের মাধ্যমে, ভারত আবারও বিশ্বকে তার শক্তি উপলব্ধি করিয়েছে। আদিত্য L-1 এর উদ্দেশ্য হল সূর্যের চারপাশের বায়ুমণ্ডল পরীক্ষা করা।
নতুন সংসদ
২০২৩ সালে, ভারত একটি নতুন সংসদ ভবন পেয়েছে, যা নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনা হয়। পুরনো সংসদ ভবনের নতুন নাম দেওয়া হয় 'সম্ভাবনা সদন'। ৯৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন সংসদ ভবনে মোট ১২৮০ জন সদস্যের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। ৬৪,৫০০ বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই চারতলা ভবনটি ত্রিভুজাকার। এটি বৈদিক যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের কাহিনী চিত্রিত করে।
ভারতীয় সেনায় মহিলাদের আরও সুযোগ
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারী অফিসারদের ভূমিকার দিক থেকে এই বছরটি ছিল ঐতিহাসিক। সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের প্রথম দিকে আর্টিলারি রেজিমেন্টে মহিলা অফিসারদের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা করে। সেনাবাহিনীর ঘোষণা অনুযায়ী, এপ্রিল মাস থেকেই শুরু হওয়া আর্টিলারি রেজিমেন্টে প্রতি ব্যাচের ১০ শতাংশের বেশি নারী কর্মকর্তা যোগ দেন। সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে জানুয়ারিতে এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছিলেন। গত মার্চে এই প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকার।
'স্বচ্ছ ভারত' অভিযান
২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তী উপলক্ষ্যে তার আগের দিন, অর্থাৎ ১ অক্টোবর সারা ভারত জুড়ে ‘স্বচ্ছতা’-র ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সমগ্র দেশের নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 'এক তারিখ, এক ঘণ্টা, একসঙ্গে' - ‘মন কি বাত' অনুষ্ঠানের বক্তব্যে দেশবাসীকে এমনই বার্তা দিয়েছিলেন নমো।
ইন্ডিয়া জোটের গঠন
২৬টি রাজনৈতিক দল দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুতে এক বৈঠক করে তৈরি হল ইন্ডিয়া বিরোধী জোট। দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে বলেন, ইন্ডিয়া (INDIA) বলতে 'ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ এলায়েন্স' বোঝানো হয়েছে। ইন্ডিয়া জোটের নেতারা দেশের ৬০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ভোটে বিজেপি কোনও অবস্থায় জিততে পারবে না, এমনই আশা নিয়েই তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়া জোট।
সংসদে টিয়ার গ্যাসের হামলা
গণতন্ত্রের মন্দির সংসদে নিরাপত্তাহীনতার একটি বড় ঘটনা প্রকাশ্যে এল। শীতকালীন অধিবেশন চলাকালে দর্শক গ্যালারিতে বসা দুই ব্যক্তি হঠাৎ লাফিয়ে পড়েন। এরপরই লোকসভায় হট্টগোল শুরু হয় এবং সাংসদরা এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। এদিকে লোকসভা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। তা দেখে সাংসদরা একজন অভিযুক্তকে ধরে বেধড়ক ধোলাই দেন।
বিভেদের আগুনে জ্বলল মণিপুর
জাতি বিভেদের অশান্তির আগুনে জ্বলল মণিপুর। প্রথম দিকে অশান্তি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও তারপর সারা রাজ্য জুড়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা, বিক্ষোভ। ১৯ এপ্রিল, মণিপুর হাইকোর্ট তার একটি সিদ্ধান্তে বলেছিল যে সরকারের মেইতি সম্প্রদায়কে উপজাতি বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত এবং হাইকোর্ট এর জন্য রাজ্য সরকারকে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে। রায়ের প্রতিবাদে মণিপুরের বিষ্ণুপুর ও চন্দ্রচুড়পুর জেলায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে উড়ল সবুজ আবীর-ঝরল রক্ত
প্রাক্ নির্বাচন থেকে নির্বাচনের সময়, এমনকী ভোটগণনার দিনও বাংলায় জুড়ে চলে ব্যাপক হিংসা-রক্তলীলা। রাজ্যে অন্তত ৪৫ জন প্রাণ হারায়। এরপর সোমবার রাজ্যের ৬৯৬টি বুথে পুনর্নির্বাচন হয়। ১১ জুলাই সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় গণনা। অশান্তির হাত থেকে রেহাই মেলেনি সেদিনও। পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে এপর্যন্ত রাজ্যে হিংসার ঘটনায় ৩৫ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যদিও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দাবি মৃতের সংখ্যা ১০ ছাড়ায়নি। অন্যদিকে বিরোধীদের দাবি শুধুমাত্র ভোটের দিনেই মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। তাও মানতে নারাজ ছিল নির্বাচন কমিশন।
জি ২০ প্রথম বৈঠকে সাজল কলকাতা
৯-১১ জানুয়ারি জি-২০ ইন্ডিয়া প্রেসিডেন্সির প্রথম বৈঠক G-20 গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুয়েন্স বা GPFIএর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা হয় ইকো পার্কের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে। সেই উপলক্ষ্যে সেজে ওঠে কলকাতা। তিলোত্তমা কলকাতায় উপস্থিত হন দেশ বিদেশের অতিথিরা।
আরও খবরের জন্য এশিয়ানেট নিউজ বাংলা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে চোখ রাখুন, এখানে ক্লিক করুন।