সংক্ষিপ্ত

  • ২০১৯ সালে মধ্যবর্তী সময় লাভের মুখে দেখেছিল ইয়েস ব্যাঙ্ক
  • বছরের শেষেই বিরাট অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে ইয়েস ব্যাঙ্ক 
  • বেড়েছিল অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণও 
  • রানা কাপুরের সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছিল ব্যাঙ্কে

কেন ইয়েস ব্যাঙ্কের ভরাডুবি?  কেনই বা  ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি? কেনই বা ইয়েস ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের দিন কাটাতে হচ্ছে অনিশ্চয়তার সঙ্গে ? তাই নিয়ে রীতিমত শুরু হয়েগেছে হিসেবনিকেশ। ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্ট। যা বিশ্লেষণ করে বিশেজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত বছর মধ্যবর্তী সময় রীতিমত লাভের মুখ দেখেছিল ইয়েস ব্যাঙ্ক। লাভের অঙ্কটা ছিল ১০০১ কোটি টাকা। কিন্তু তারপরই কী এমন হল যে বছরের শেষে ইয়েস ব্যাঙ্কের ক্ষতির পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ১৮,৫৬৪ কোটি টাকায়। গোটা বছরের লাভক্ষতির হিসেব ধরলে ক্ষতির পাল্লাই ভারি ছিল। কারণ বছরের শেষের আর্থিক ক্ষতি মিলিয়ে গোটা বছরে আর্থিক ক্ষতি হয়েছিব ৬০০ কোটি টাকা। 

আরও পড়ুনঃ করোনা আক্রান্ত ইতালি ও ইরান থেকে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমান

খারাপ ঋণের কারণেই এই পরিণতি। কারণ এমন কিছু ঋণ দেওয়া হয়েছিল যা ঠিকমত শোধ করা হয়নি। বা শুদ আদায় করা যায়নি। যা ক্রমেই ব্যাঙ্কের বোঝা বাড়িয়ে তুলেছিল। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়ে গিয়েছেল ব্যাঙ্কর অস্থাবর সম্পত্তি। অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ হল ৪০, ৭০৯.২০ কোটি টাকা। যা ব্যাঙ্ক থেকে প্রদান করা ঋণের ১৮ শতাংশেরও বেশি। সেপ্টম্বরের শেষেও ব্যাঙ্কের খারাপ লোনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭.৩৯ শতাংশ। আর সেপ্টম্বরের শেষ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে ব্যাঙ্কের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ। ব্যাঙ্কের এই ক্ষতি সামনে আসার ধীরে ধীরে প্রভাব ফেলেছিল গ্রাহকদের মনে। যা গ্রাহকতালিকা দেখলেই বোঝা যায়। 

আরও পড়ুনঃ কাউন্টডাউন শুরু, সোমবার কঠিন পরীক্ষার মুখে দাঁড়িয়ে কমল নাথ চিঠি লিখলেন অমিত শাহকে

কিন্তু কেন, লাভজন ব্যাঙ্ক থাকা সত্ত্বেও এই ভরাডুবি? খতিয়ে দেখতে রীতিমত  তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল ব্যাঙ্ক। প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল প্রতিষ্ঠা ও প্রাক্তন কর্ণধার রানা কাপুরের একাধিক সিদ্ধান্তই  ব্যাঙ্কের ভরাডুবির জন্য দায়ী। যেখানে বলা হয়েছিল রানা কাপুরের নির্দেশে এমন কিছু রুগ্নপ্রায় সংস্থাকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল যে সেখান থেকে টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা ছিল খুবই কম। পুরো বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালেই একটি বেসরকারি আইনি সংস্থার দ্বারস্থ হয়। সেই সংস্থার তদন্তের রিপোর্ট চলতি মাসেই হাতে পেয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। 

ইয়েস ব্য়াঙ্কের ভরাডুবির কারণ খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই দায়িত্ব দিয়েছে ইডি ও সিবিআইকে। প্রাথমিক তদন্তে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাই রানা কাপুরকে নিশানা করেছেন। ইতিমধ্যে তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েদের। বেআইনি ভাবে রুগ্নপ্রায় একাধিক সংস্থাকে ঋণ দিয়ে কোটি কোটি টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রানা কাপুরের বিরুদ্ধে। কখন তাঁর স্ত্রীকে সুবিধে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। কখনও আবার সুবিধে পেয়েছেন তাঁর মেয়েরা। রুগ্নপ্রায় যে সব গোষ্ঠীকে ঋণ দিয়েছিল ইয়েস ব্যাঙ্ক সেই তালিকায় রয়েছেন অনিল অম্বানি, সুভাস চন্দ্রনের একাধিক সংস্থা। জেট এয়ার ওয়েজ ও এভারেডিকেও ঋণ দিয়েছিল ইয়েস ব্যাঙ্ক। 

 রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নির্দেশে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের ওপর টাকা তোলার উর্ধ্বসীমার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। ইয়েস ব্যাঙ্ক বাঁচাতে এসবিআই ৪৯ শতাংশ লগ্ন করবে বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে। চারটি বেসরকারি ব্যাঙ্কও টাকা ঢালবে ইয়েস ব্যাঙ্কে। তবে আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে ইয়েস ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের টাকা তোলার উর্ধ্বসীমা বাড়ানো হতে পারে বলেই সূত্রের খবর।