এই গ্রামগুলোতে সারাক্ষণ ছেলেরা ক্রিকেট খেলে যায় এরা কিন্তু কেউ স্নাতক, কেউ স্নাতকোত্তর কাউর চাকরি চলে গিয়েছে, কেউ চাকরি পায়নি এমবিএ পাশ করেও গ্রামে ফিরে এনে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে

উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ আর রামপুরের সীমান্ত গ্রামের নাম পারসপুরাশীতের সকাল জনাকুড়ি যুবক মিলে বল পিটিয়ে চলেছেন এঁরা কিন্তু এখন কেউই পড়ুয়া ননসবাই পড়াশোনার পালা শেষ করে ফেলেছেনকেউ স্নাতক, কেউবা স্নাতকোত্তরকাউর বয়স কুড়ির কোঠায়কাউর-বা তিরিশ ছাড়িয়েছেসাত সকালে বাড়ির টুকিটাকি কাজ সেরেই সবাই এসে জড়ো হন মাঠেশুরু হয় ক্রিকেটচিন্তা শুধু একটাইখেলা শেষ হয়ে গেল কী হবে? সারাদিন তো আর করার মতো কিছুই নেই

পড়াশোনার পাল শেষ করে কেউ কেউ চাকরি করতে গিয়েছিলেন শহরে কিন্তু কপাল মন্দমন্দার বাজারে কাজ চলে গিয়েছে কেউ-বা আবার নোটবন্দির সময়ে কাজ হারিয়েছেন কেউ-বা এমবিএ পাশ করে চাকরি করতে-করতেও ফিরে এসেছেন গ্রামেকারণ, শহরে থেকে ওই সামান্য় বেতনে আর চালানো সম্ভব নয় আর তাই গ্রামে ফিরে এসে ধার করে মোষ কিনে দুধের ব্য়বসা শুরু করে দিনগুজরান করছেনস্বপ্নভঙ্গের এই গ্রামগুলোতে তাই ক্রিকেটই হল দুঃস্বপ্নের বাস্তব থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজতম ফ্য়ান্টাসি

গতবছর দেশের বেকারি ৪৫ বছরের মধ্য়ে সর্বোচ্চ হার ছুঁয়েছেগাড়ি কারখানা থেকে চলেছে অনবরত ছাঁটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে আবাসন শিল্পও বাজারে চাহিদা নেই তাই বিনিয়োগও নেই কৃষক আত্মহত্য়াকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে বেকার আত্মহত্য়া এমতাবস্থায় ভরসা তাই ক্রিকেট

তাহলে এঁদের সংসার চলে কীভাবে? খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে গ্রামেরই এক যুবক এসে বললেন, "আমার স্ত্রী স্কুলে পড়ান আমাদের একটু জমিজমাও রয়েছে কোনওরকমে চালিয়ে নিই আর কিগ্রামের ছেলেদের অবস্থা আমার মতোই ক্রিকেট খেলা ছাড়া ওদের কিছু করার নেইওরা যে পড়াশোনা করেনি তা কিন্তু নয় বরং লেখাপড়ার পিছনে ভালরকম খরচা করেছে কেউ কেউ তো এমবিএ পড়েছে কিন্তু কেউ চাকরি খুইয়েছে তো কেউ চাকরি পায়নি"

শুধু এই গ্রামই নয়এমন অনেক গ্রামে এখন একই অবস্থা একই ছবিএই যেমন বছর সাতাশের শশাঙ্ক ত্য়াগীগাজিয়াবাদ জেলার বানারিয়া গ্রামের এই যুবক এমবিএ পাশ করে কিছুদিন পড়িয়েছিলেনচাকরি করেছিলেন কিছু বেসরকারি সংস্থায় কিন্তু এইবাজারেএকজনএমবিএয়েরযাবেতন, তাতেকরেগ্রামেফিরেএসে ধার করে মোষ কিনেদুধবেচতেশুরুকরা অনেক শ্রেয় বলে মনে করেছেন তিনি শশাঙ্কের কথায়, "আমাদের জমিজমা ভালই ছিল কিন্তু আমি ভাল করে পড়াশোনা করেছি গ্রামে আমি অন্য়দের আদর্শ হয়ে উঠেছিলাম এক সময়েনয়ডায় গিয়ে পড়াশোনা করি আর সেখানে চাকরিও পাই কিন্তু যেখানেই যাই না কেন ১৫ হাজার টাকার বেশি মাইনে দিতে কেউ রাজি হচ্ছিল না এমবিএ পাশ করে এই মাইনেতে চাকরি করার চাইতে গ্রামে ফিরে এসে দুধ বেচা অনেক বুদ্ধিমানের কাজ"

তাহলে কি, ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় দাঁড়িয়ে মোষ তাড়ানো আর বল পেটানো ছাড়া শিক্ষিত যুবকদের আর কোনও 'কাজ' নেই আপাতত?