সংক্ষিপ্ত

আফগানিস্তানে (Afghanistan) ফিল্ম, নাটক বা টেলি সিরিয়ালে মহিলাদের অভিনয় নিষিদ্ধ করল তালিবান সরকার। নয়া  নির্দেশিকায় আর কী বলা হল?
 

আফগানিস্তানে (Afghanistan) মহিলাদের আরওই কোনঠাসা করল সেই দেশের নতুন তালিবান (Taliban) সরকার। এখন থেকে আর সেই দেশে কোনও ফিল্ম বা টেলি সিরিয়ালে মহিলারা অভিনয় করতে পারবেন না। মহিলা চরিত্র আছে, এমন কোনও ফিল্ম বা টেলি সিরিয়াল সেই দেশে আর দেখানোও যাবে না। রবিবারই ফিল্ম ও টিভি সম্প্রচারের বিষয়ে নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে 'নৈতিকতা প্রচার এবং অনৈতিকতা প্রতিরোধ' (Ministry for the Promotion of Virtue and Prevention of Vice) মন্ত্রক। মজার বিষয়, এই গালভরা নামের মন্ত্রকটি, আফগানিস্তানে তালিবান সরকার আসার পর মহিলা বিষয়ক মন্ত্রকের (Women's Affairs Ministry) পরিবর্তেই চালু করা হয়েছিল। 

সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মহিলারা আছেন, এমন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে পারবে না আফগান টেলিভিশন চ্যানেলগুলি। মহিলা অ্যাঙ্কর এবং টেলি উপস্থাপকদের, পর্দায় হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। চলচ্চিত্র ও নাটকেও আর মহিলারা অভিনয় করতে পারবেন না। তবে নতুন নির্দেশিকাটিতে যে শুধু মহিলাদের কথাই বলা হয়েছে, তা নয়। টিভি চ্যানেলগুলির অনুষ্ঠানে, পুরুষদেরও সবসময় বুক থেকে হাঁটু পর্যন্ত আবৃত রাখতে হবে। কোনওভাবেই খোলা রাখা যাবে না। ব্যঙ্গাত্মক অনুষ্ঠান, বা কমেডি এবং বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠানে ইসলামের অবমাননাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তালিবানরা বলেছে, 'অনৈতিকতা' প্রতিরোধ করা এবং শরিয়া নীতির বিরুদ্ধে যায় এমন দৃশ্যের প্রদর্শন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 

দীর্ঘ দুই দশকের যুদ্ধের পর, চলতি বছরের অগাস্টের মাঝামাঝি আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুনর্দখল করেছিল তালিবানরা। তারপর থেকে তারা বারবারই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের আশ্বাস দিয়েছিল, শরিয়া আইনের মধ্যে থেকে মহিলাদের সমাজে আরও বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী তাদের প্রথম জমানা, অর্থাৎ, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বিশ্ববাসীকে। গত সেপ্টেম্বর মাসেই তুলে দেওয়া হয় মহিলা বিষয়ক মন্ত্রক। তার বদলে ফের চালু করা হয় নৈতিকতা প্রচার ও অনৈতিকতা প্রতিরোধ মন্ত্রক। মহিলা বিষয়ক মন্ত্রকের ভবনগুলিতেই এই নতুন মন্ত্রক স্থাপিত হয়। ঘটনাচক্রে, এই নৈতিকতা ও অনৈতিকতা মন্ত্রকই, তালিবানদের প্রথম জমানায় নারী নির্যাতনের প্রধান মুখ ছিল। 

এই মন্ত্রকের অধীনেই কাজ করত তালিবানদের কুখ্যাত 'নীতি পুলিশ'। যারা যখন তখন যে কোনও অছিলায় মহিলাদের উপর নির্যাতন চালাতো। পুরো শরীর ঢাকা পোশাক না পরা, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বাইরে বের হওয়ার মতো ঘটনায় মহিলাদের প্রকাশে বেত্রাঘাত করা হত। প্রাথমিক শিক্ষার পর মহিলাদের পড়াশোনা করা নিষিদ্ধ ছিল। নাচ, গান-সহ যে কোনওরকম বিনোদনের উপরেই ছিল নিষেধাজ্ঞা। আর তা মেনে চলা হচ্ছে কিনা, সেই নজরদারির জন্য ছিল নীতি পুলিশ। এই সব কালাকানুন না মানলেই বেত্রাঘাত তো ছিলই এমনকী এমনকি প্রকাশ্যে অঙ্গচ্ছেদ, মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হতো। ক্রমে, সেই দিকেই ফের এগোচ্ছে আফগানিস্তান, এমনটাই বলছেন মহিলা অধিকার রক্ষা কর্মীরা।

তালিবানরা ক্ষমতার ফেরার পর বলেছিল, মহিলাদের নিরাপত্তার জন্যই নাকি, তাদের কাজ করতে যাওয়া উচিত নয়। তালিবান নেতারা জানিয়েছিলেন, নারী ও পুরষ সহকর্মীরা আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করতে পারবে, এটা নিশ্চিত করার পরই মহিলাদের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসেও, মাঝে পর্দা টাঙিয়ে মহিলা ও পুরুষদের আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে, বহু আফগান মহিলাই এখনও পর্যন্ত তালিবানদের বিরুদ্ধে, তাদের কাজে ফিরতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। অনেক মহিলা সাংবাদিকও জানিয়েছেন যে, তাদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।