সংক্ষিপ্ত

হতবম্ভ হয়ে গিয়েছিলেন দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্ট সালভা কির। বিস্ময়ে কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিরোধী নেতা রিক মাচার-এরও। আবেগে চোখ দিয়ে জল পড়েছে ভাইস প্রেসিডেন্ট রেবেকা ন্যানদেং গারাং-এর। কারণ, নতজানু হয়ে বসে খ্রীস্ট ধর্মের সর্বোচ্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিস একের পর এক তাঁদের পায়ে চুমু খেয়েছেন। বরাবরই পোপ হিসেবে তিনি ব্যতিক্রমী। কিন্তু তাঁর এই অভুতপূর্ব আচরণে সারা বিশ্বে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।

 

হতবম্ভ দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্ট সালভা কির। বিস্ময়ে কথা বন্ধ বিরোধী নেতা রিক মাচার-এরও। আবেগে চোখ দিয়ে জল পড়ছে রেবেকা ন্যানদেং গারাং-এর। কারণ নতজানু হয়ে বসে খ্রীস্ট ধর্মের সর্বোচ্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিস একের পর এক তাঁদের পায়ে চুমু খাচ্ছেন। বরাবরই পোপ হিসেবে তিনি ব্যতিক্রমী। কিন্তু তাঁর এই অভুতপূর্ব আচরণে সারা বিশ্বে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।

কিন্তু কেন এই অদ্ভুত আচরণ করলেন পোপ? লক্ষ্য একটাই, আফ্রিকার নবতম দেশটিতে শান্তি রক্ষা। দুই পক্ষের যুযুধান নেতারা যাতে নিজেদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখেন, সেই প্রার্থনা করেই তাঁদের পায়ে চুমু খেলেন খ্রীষ্ট ধর্মের সর্বোচ্চ নেতা।

প্রায় দুই দশকের রক্তাক্ত লড়াইয়ের পর ২০১১ সালের ৯ জুলাই সুদান থেকে স্বাধীন হয়ে তৈরি হয়েছিল দক্ষিণ সুদান দেশ। কিন্তু সেই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০১৩ সালেই প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাচারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। যা ছড়িয়ে পড়ে সেনাবাহিনীর মধ্যেও। সেই রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে ইতিমধ্যেই ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

তবে ২০১৫ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে দুই পক্ষের মধ্যের উত্তাপ থিতিয়ে আসে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিবেশী সুদানের রাজধানী খারতউম-এ দুই পক্ষ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। সেই চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১২ মে তারিখে রিক মাচার ফের দক্ষিণ সুদানে ফিরে গিয়ে কির-এর ডেপুটি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা। সমস্যা হল, সেই চুক্তির অনেক কিছুই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ মাচার পক্ষের। গোদের উপর বিষফোরার মতো চলতি সপ্তাহেই সুদানের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে তাঁর পদ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

এতে দক্ষিণ সুদানের শান্তি প্রক্রিয়া ব্যহত হওয়ার জোরালো আশঙ্কা তৈরি হয়। এর মধ্য়েই পোপের আমন্ত্রণে মাচার, সালভা কির ও তাঁর তিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভাটিকানে এসেছিলেন এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। দুদিনের সেই অনুষ্ঠানের শেষ দিনে যাতে দক্ষিণ সুদানের নেতারা নিজেদের মধ্যে ফের ঝামেলায় না জড়ান, তা নিশ্চিত করতেই পোপ আচমকাই ওই অদ্ভুত আচরণ করেন।

প্রথমে কির ও মাচারের হাত নিজের বুকে রেখে তাঁদের শান্তির শপথ নেওয়ান পোপ ফ্রান্সিস। তারপরই নতজানু হয়ে বসে একে একে দুই পক্ষের সকল নেতার পা চুম্বন করেন তিনি। সাধারণত অপরাধীদের, কারাগারে বন্দীদের অপরাধের রাস্তা থেকে সড়িয়ে আনতে পোপ 'হোলি থার্সডে'-তে পা ধুইয়ে দেন। কিন্তু, রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করতে এই পথ নিতে কোনও পোপকেই আগে দেখা যায়নি।

দুদিনের ওই অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে দেওয়া বিবৃতিতে পোপ বলেন, তাঁর আশা দক্ষিণ সুদানের যুদ্ধ-বিগ্রহ অবশেষে শেষ হবে। যুদ্ধ-বিরতির সিদ্ধান্তকে সম্মান করা হবে। রাজনৈতিক ও জাতিগত ভেদাভেদ দূর হয়ে নতুন দেশ গঠনের স্বপ্নে বিভোর সমস্ত নাগরিকদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপিত হবে।

শেষ পর্যন্ত, দক্ষিণ সুদানের শান্তি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে তা সময়ের হাতে রয়েছে। তবে পোপের এই অভুতপূর্ব উদ্যোগ যে দক্ষিণ সুদানের নেতাদের মনে ভালোরকম প্রভাব ফেলেছে তা তাঁদের বক্তব্যেই স্পষ্ট। বিরোধী নেতা মাচার আশা করেছেন সুদানের আল-বশির প্রশাসন যেরকমভাবে তাঁদের শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে সহায়তা করেছিল, নতুন ব্যবস্থা সেই চুক্তির ধারাগুলি ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না তা সুনিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা নেবে। অপর দিকে পোপ তাঁদের দেশের শান্তিকে এতটা গুরুত্ব দিলেন দেখে এখনও অভিভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট রেবেকা ন্যানদেং গারাং। তিনি জানিয়েছেন, এরকমটা তিনি আগে কখনও দেখেননি।