সংক্ষিপ্ত
তিনিই প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁর কথায় কান দেয়নি।
বদলে গুজব রটানোর অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
এবার করোনায় প্রাণ গেল সেই ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং-এরই।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের মহামারীতে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। চিনে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এই রোগ। অথচ, এই রোগ এতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করত না যদি কর্তৃপক্ষ শুরুতেই ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং-এর সতর্কবার্তায় কান দিত। যে, আটজন চিনা চিকিৎসক সবার প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিলেন তাঁদেরই একজন লি। কিন্তু চিনা সরকার প্রথমে তাদের কথায় পাত্তা তো দেয়ইনি, বদলে পুলিশ তাদের হেনস্থা করেছিল। সেই লি ওয়েনলিয়াং বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাস-এরই বলি হলেন।
আরও পড়ুন - অবশেষে স্বস্তি, 'করোনা'র ওষুধ পাঠাচ্ছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ
চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৩৪ বছর বয়সী চিকিৎসক, লি ওয়েনলিয়াং চিনের উহান প্রদেশের এক হাসপাতালেই বৃহস্পতিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। গত বছর ডিসেম্বরে লি-ই অন্যান্য চিকিৎসকদের এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তিনি যে মেডিকেল স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন, সেখানকার প্রাক্তনীদের একটি সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ রয়েছে। সেখানেই তিনি বলেছিলেন, স্থানীয় এক সিফুড বাজার থেকে সাতজন রোগীকে তাঁর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে, যাদের সার্স-জাতীয় রোগের লক্ষণ ধরা পড়েছে।
আরও পড়ুন - জন্মের ৩০ ঘণ্টার মধ্যেই শিশুর দেহে পাওয়া গেল করোনাভাইরাস
লি আরও বলেছিলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিনি দেখেছেন, এই রোগটি করোনভাইরাস সংক্রান্ত। এই ভাইরাস একটি একটি বৃহত ভাইরাস পরিবারের অংশ, যে ধরণের ভাইরাস সংক্রমণে তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা যায়, যেমন সার্স। ২০০৩ সালে চিন এবং গোটা বিশ্ব মিলিয়ে সার্স-এর বলি হয়েছিলেন ৮০০ মানুষ। লি তার বন্ধুদের বলেছিলেন, প্রিয়জনদের গোপনে সতর্ক করতে। কিন্তু, কয়েক ঘন্টার মধ্যে তাঁর সেই বার্তাগুলির স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। তার নামও ব্লার বা ঝাপসা করা হয়নি।
আরও পড়ুন - করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের জন্য এল ১৭ হাজার টনের জাহাজ, জাপান সরকারের কীর্তি দেখে থ সকলে
এর পরপরই লি-এর বিরুদ্ধে গুজব রটানোর অভিযোগ এনেছিল উহান পুলিশ। লি নিজেই জানিয়েছিলেন, অনলাইনে যেভাবে তার বার্তাগুলি প্রচারিত হচ্ছিল, তাতে তিনি বুঝেছিলেন পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে এবং সম্ভবত তিনি শাস্তি পেতে চলেছেন। শুধু তাঁকেই নয়, সেই সময় আরও বেশ কয়েকজন ডাক্তারকে নিশানা করেছিল চিনা পুলিশ। বদলে তাঁদের কথা শুনলে হয়তো এই ভাইরাস এতটা মারাত্মক আকার ধারণ করতো না। বৃহস্পতিবার, পর্যন্ত শুধু চিনেই নভেল-করোনাভাইরাস মহামারীতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩৬. আর আক্রান্তের সংখ্যা ৩১,০০০ ছাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন - করোনা আতঙ্কে ছাদনাতলা হল ভিডিও কনফারেন্স, ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে-ই বিয়ে সারলেন দম্পতি
এই তরুণ ডাক্তারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিনে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তাঁর এই অকালমৃত্যুর জন্য কর্তৃপক্ষের উদাসিনতাকেই দায়ী করছে চিনা নাগরিক সমাজ। একযোগে সকলেই বলছেন, 'নায়ক' লি-কে তাঁরা ভুলবেন না। আর ভুলবেন না, সতর্ক করার জন্য তাঁকে কী পরিমাণ হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল।