সংক্ষিপ্ত

এক জাতি যখন দেবীকে সাজিয়ে গুছিয়ে সর্বাঙ্গ নিখুঁত করে গড়ে তুলে পুজো অর্চনায় নত হয়, আরেকদিকের শাসক তখন নারীকে মুড়ে ফেলতে চান নিজের হুঁশিয়ারির আতঙ্কের আবরণে। পৃথিবীর দুই প্রান্তে দেবীপক্ষের ভিন্ন রূপ।

শরীর থেকে হিজাব টেনে উপড়ে ফেলে আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন নারীরা, কেটে উড়িয়ে দিচ্ছেন বহু বছরের যত্ন করে বাড়িয়ে তোলা সুন্দর ঘন চুল। মাথার বিচ্ছিন্ন কেশ জুড়ে জুড়ে প্রতিবাদের নিশান হয়ে উড়ছে ইরানি মেয়েদের স্বাধীনতার ধ্বজা। সারা বিশ্ব জুড়ে আওয়াজ উঠছে, ‘স্বাধীনতা’, ‘স্বাধীনতা’। গোটা ইরান জুড়ে যখন এলিট রাজনীতিকদের অগণিত দুর্নীতি, ৫০ শতাংশেরও বেশি মুদ্রাস্ফীতি, হু হু করে বেড়ে চলা দারিদ্র, দেশের পারমানবিক আলোচনায় অচলাবস্থা, প্রত্যেক জনগণের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব, তখন সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ইরানের প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিলেন?

ইরানের সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন রিসার্চ ইন্সটিটিউট যখন জানিয়েছে, এই দেশটির অন্তত আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে এবং ক্রমশ এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে, তখন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ঘোষণা করে দিলেন, দেশের সমস্ত মহিলাকে কঠোরভাবে হিজাব পরার নিয়ম মানতে হবে। এখন সমালোচকদের প্রশ্ন, এতে কি ইরানের ব্যাপক দুর্দশার কোনও সুরাহা হবে? প্রেসিডেন্ট রাইসি কিন্তু সেসব বিষয়ে কান দিতে একেবারেই নারাজ। এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তরও তাঁর কাছে নেই। ফলত, প্রেসিডেন্টের নির্দেশমতো ‘অনৈতিক’ পোশাক পরা নারীদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখেছে ইরানের পুলিশ এবং ১৩ সেপ্টেম্বর আটক করা হয়েছিল হিজাব না পরা ২২ বছরের মাহাশা আমিনকে। তৎপর পুলিশের অভিযোগ, তাঁর হিজাবের তলা দিয়ে তাঁর চুলের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীনই মাহাশা আমিন অজ্ঞান হয়ে যান এবং সঙ্গে সঙ্গে কোমায় চলে যান। তিন দিন পর তিনি হাসপাতালে মারা যান।

এরপরেই জ্বলে ওঠে বিক্ষোভের আগুন। ইরানজুড়ে পোড়া হিজাবের গন্ধ, বাতাসে উড়তে থাকে মেয়েদের নিজের হাতে কাটা চুল। ৮০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন মহিলারা। বিক্ষোভকারীদের দমাতে উঠেপড়ে লেগেছে পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষী। বিক্ষোভকারীদের উপরে অবাধে লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষণ করেছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। পুলিশের গুলিতে এখনও অবধি প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন বিক্ষোভকারী। এই পরিস্থিতিতে ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার ইব্রাহিম রাইসি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দেশে কোনও রকম বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না।


ইরানের নারীদের উপরে বহু বছর ধরেই একাধিক বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া চলছে। সম্প্রতি মাহাশার মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই ইরানের কুর্দি-জনবহুল উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রথমে শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। সেই আগুনের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে। চুল কেটে, উন্মুক্ত বুকে স্লোগান লিখে, চিৎকার করে, নেচে গেয়ে প্রতিবাদে স্ফুরিত হয়ে উঠছেন এতদিনের মুখ চেপে রাখা নারীরা। প্রশাসনের লাঠি, গুলি আর জলকামানের ব্যাপক তোড় তাঁদের আগুনের স্ফুরণের কাছে নেহাতই তুচ্ছ। 

বিক্ষোভকারীদের দমাতে এবার হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, “ইরানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও, তার আড়ালে কোনও রকমের বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না।” প্রেসিডেন্ট রাইসি বলেন, “ইরানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়”। একইসঙ্গে তিনি জানান, মাহশা আমিনির মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অযথা বিক্ষোভের আগুন ছড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। 


 

ইরানের মহিলারা বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরার নিয়ম প্রত্য়াহারের দাবি জানালেও, সূত্রের খবর এই নিয়ম একচুলও পরিবর্তন করতে রাজি নন প্রেসিডেন্ট। বিশ্বের কাছে আরও আশ্চর্যের খবর এটাই যে, নিউইয়র্কের বিখ্যাত সঞ্চালিকা খ্রিশ্চিয়ান অ্যামানপোর শুধুমাত্র হিজাব পরতে চাননি বলে সিএনএন চ্যানেলে সাক্ষাৎকারই দেননি ইরানের প্রেসিডেন্ট। তাঁর দাবি ছিল, হিজাব না পরে ওই সঞ্চালিকা তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না। তাঁর দাবির প্রত্যুত্তরে খ্রিশ্চিয়ান অ্যামানপোর স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘এটা নিউইয়র্ক। ইরান নয়’।

আরও পড়ুন-
হাসপাতালের পথে হঠাৎ বিকল অ্যাম্বুলেন্স, গুরুতর অসুস্থ রোগীর উদ্ধারে নিজেই লেগে পড়লেন কলকাতা পুলিশের সুপ্রভাত
ইডেনে 'চাকদহ এক্সপ্রেস'-কে বিদায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ ম্যাচে নামলেন ঝুলন গোস্বামী
ফাইভ-জি ইন্টারনেট পরিষেবায় প্রভূত উন্নতি লাভ করবে ভারত, অক্টোবরেই আসতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে