সংক্ষিপ্ত

মোল্লা আবদুল ঘানি বরাদরকে ঘুষি মেরেছিল খলিলুল রহমান হাক্কানি। বেরিয়ে গেল তালিবানদের অন্তর্দ্বন্দ্বের গোপন কথা। 
 

তালিবানদের মধ্যে যে সবকিছু ঠিকঠাক নেই, সেই খবর গত কেয়ক সপ্তাহ ধরেই সংবাদমাধ্যমের সামনে চলে আসছিল। বিশেষ করে তালিবানদের দোহা ইউনিট ও ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন হিসাবে পরিচিত হাক্কানি নেটওয়ার্কের মধ্য়ে কাবুলে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কথা বলতে গেলে সবাই জানে। যে কারণে, দুবার আগে ঘোষণা করেও সরকার গঠনের ঘোষণা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল তালিবানরা। েবার ব্লুমবার্গের েক প্রতিবেদনে দাবি করা হল, সেপ্টেম্বরের শুরুতে কাবুলে আফগান প্রেসিডেন্টের প্রাসাদেই এক বৈঠক চলাকালীন, তালিবান সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরশাহির বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী তথা দোহা ইউনিটের প্রধান মোল্লা আবদুল ঘানি বরাদরকে ঘুষি মেরেছিল  হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিশিষ্ট নেতা তথা নবগঠিক আফগান সরকারের অন্যতম মন্ত্রী খলিলুল রহমান হাক্কানি। যা থেকে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদেই দুই পক্ষে শুরু হয়েছিল গুলির লড়াই। 

ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিল তালিবান সহ-প্রতিষ্টাতা মোল্লা বরদার। তারপর তাকে দোহায় তালিবানদের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় তালিবান পক্ষের নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেই। চুক্তি অনুযায়ী নয়া আফগান সরকারে অ-তালিবান নেতা এবং আফগান সংখ্যালঘু গোষ্ঠীাদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল। তালিবানদের দোহা ইউনিট সেই মতের সপক্ষেই ছিল। তাদের যুক্তি ছিল, তাতে করে আরও বেশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। 

"

কিন্তু, হাক্কানিরা প্রথম থেকেই ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা করার বিরুদ্ধে ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাতায় এখনও জঙ্গিদল হিসাবে পরিচিত হাক্কানিদের সাফ কথা ছিল, কাবুল তাদের গায়ের জোরে দখল করতে হয়েছে, তাই ক্ষমতা ভাগাভাগি হবে না। আর পাকিস্তান তথা চিনকে তাদের পক্ষে পাওয়ায় আর কোনও আন্তর্জাতিক শক্তির কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওযার বিষয়েও অনাগ্রহী ছিল তারা। এই নিয়ে আফগানিস্তান প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে আলোচনায় বসেছিল দুইপক্ষ।  

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী তালিবানদের দুই গোষ্ঠীতে উত্তপ্ত আলোচনার মধ্যেই, হাক্কানি নেটওয়ার্কের অন্যতম নেতা ততা নয়া আফগান সরকারের শরণার্থী মন্ত্রী খলিলুল রহমান হাক্কানি, তার চেয়ার থেকে উঠে বরদারকে একের পর এক ঘুষি মারতে শুরু করেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিদের উদ্ধৃত করে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, পরিস্থিতি দ্রুত আরও জটিল হয়ে উটেছিল। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে, ওই বৈঠক কক্ষেই হাক্কানি এবং বরাদরের দেহরক্ষীরা একে অপরকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। এতে, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হতাহতও হয়।

আফগান রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে যে গুলিবর্ষণ হয়েছে, সেই খবর আগেই শোনা গিয়েছিল। মোল্লা বরাদরের মৃত্যু সম্পর্কে গুজবও ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অবশয বলছে, তালিবান প্রতিষ্ঠাতা সেই গোলাগুলিতে বড় কোনও আঘাত পায়নি। ওই ঘটনার পরই সে কান্দাহারে চলে গিয়েছে তালিবানদের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লা আখুন্দজাদার সঙ্গে কথা বলার জন্য। প্রসঙ্গত, আখুন্দজাদাকেও দীর্ঘদিন জনসমক্ষে দেখা যায়নি। 

শেষ পর্যন্ত মোল্লা বরাদরের রাষ্ট্রপতি হওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের মাধথায় বসানো হয়েছে স্বল্প-পরিচিত তালিবান নেতা মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দকে। পাকিস্তানের অঙ্গুলিহেলনে মন্ত্রিসভায় বিরাট জায়গা পেয়েছে হাক্কানিরা। তাদের নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া-সহ, মোট চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছে তারা। ২০১৬ সালেই মূল তালিবান গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল হাক্কানিরা। স্বাভাবিকবাবেই অতালিবান কোনও নেতার স্থান হয়নি মন্ত্রিসভায়। 

আরও পড়ুন - অকুতোভয় আফগান মহিলাদের রুখতে ব্যর্থ তালিবানি বন্ধুকও - খোদ রাজধানীতেই বিক্ষোভ, দেখুন

আরও পড়ুন - পঞ্জশির কাদের দখলে, প্রবল ধোঁয়াশা - তালিবানদের সঙ্গেই লড়ছে আল-কায়েদা, পাকিস্তানও

আরও পড়ুন - সারাদিন পর্নোগ্রাফি দেখছে তালিবান, তৈরি হচ্ছে 'তালিকা' - কী চলছে কট্টরপন্থীদের মাথায়, দেখুন

ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন গুজব রটলেও, তালিবানদের পক্ষ থেকে বারবার কোনওরকম সংঘর্ষের খবর প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এমনকী মোল্লা বরাদর প্রথমে অডিও ক্লিপ প্রকাশ করে এবং পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হয়ে তাঁর মৃত্যু বা আহত হওয়ার খবর অস্বীকার করে। তিনি ঈশ্বরের কৃপায় নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন দাবি করে, সংবাদমাধ্যমে তাদিরে অন্তর্কলহের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তাকে মিডিয়ার তৈরি অসত্য খবর বলে দাবি করেছিল সে।

YouTube video player