সংক্ষিপ্ত

হঠাৎ করেই পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি থেকে বেঁকে বসেছে চিন। এই পরিস্থিতিতে শাহবাজ সরকারের একেবারে ভরাডুবি অবস্থা। বাতিল হয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের একের পর এক উন্নয়নমূলক প্রকল্প।

ভারতের বিরোধিতা করে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব পাতিয়েছিল দুই প্রতিবেশী দেশ, চিন এবং পাকিস্তান। উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিকের এই দুই দেশের সঙ্গেই ভারতীয় জওয়ানদের সম্পর্ক অতি তিক্ত। চিন-পাকিস্তানের ‘অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব’-ও গাঢ় হয়েছিল আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে। পাকিস্তানে প্রচুর টাকা দিয়ে একাধিক প্রকল্পের সূচনা করেছিল চিন। কিন্তু এবার হয়তো গাঢ় বন্ধুত্বে ফাটল ধরতে চলেছে।

শক্তি, জল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কাজ এগোনোর জন্য শাহবাজ শরিফের দেশকে অনেকখানি সাহায্য করেছিল শি জিনপিং-এর দেশ। সেই প্রকল্প আরও বর্ধিত করার জন্য আর টাকা দিতে রাজি নয় রেজিং। পাকিস্তানে ৩০০০ কিলোমিটারের চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডরে (CPEC) বিপুল বিনিয়োগ করেছে জিনপিং সরকার। এই প্রকল্পের দ্বারা যেমন একদিকে চিনের আর্থিক লাভ হওয়ার কথা, তেমন পাকিস্তানেও কর্মসংস্থান এবং বাণিজ্যিক উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু, হঠাতই বেঁকে বসেছে চিন প্রশাসন। CPEC প্রকল্প এখন বেশ বড়সড় ধাক্কার মুখে। 

আর্থিক সাহায্য না পেয়ে পাকিস্তানের গোয়াদারে আমদানিকৃত কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে ইসলামাবাদকে। বিদ্যুৎশক্তি, জলবণ্টন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সিপিইসি-র অধীনে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা ছিল। গিলগিট বাল্টিস্তান, খাইবার পাখতুনখোয়া, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটন বিষয়ক পরিকল্পনাও বাতিল হয়ে গেছে। চিন-পাকিস্তান চুক্তি সই করার ৯ মাস পর ১১ তম জয়েন্ট কো-অপারেশনের বৈঠকে বেঁকে বসেছে জিনপিং প্রশাসন। জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নাগরিক কাঠামোর উন্নয়নকে সিপিইসি-র আওতাভুক্ত করতে চেয়েছিল পাকিস্তান। এতে চিন মোটেই রাজি হচ্ছে না। নতুন একটি যৌথ গোষ্ঠী তৈরি করার প্রস্তাব-সহ ধাতব খনিজের যৌথ অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং বিপণনের প্রস্তাবও চিন খারিজ করে দিয়েছে।

সূত্রের খবর, নিরাপত্তা-বিষয়ক কারণে পাকিস্তানের উপর রেগে গেছেন জিনপিং। আরও বড় কোনও কারণও থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। করাচিতে সিপিইসি সংক্রান্ত কাজে চিনা নাগরিকদের নিরাপত্তার অভাব লক্ষ্য করেছেন জিনপিং, এতেই তিনি রুষ্ট হয়েছেন বলে খবর। তাছাড়া, পাকিস্তানের আরেকদিকের ‘শত্রু’দেশ আফগানিস্তান, তার সঙ্গে চিনের হঠাৎ ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানকে আর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। CPEC প্রকল্পের অর্থমূল্য ছিল ৪,৬০০ কোটি ডলার, যা বাড়িয়ে ৬,২০০ কোটি ডলার করেছিল চিন সরকার। ২০১৫ সালে জিনপিং পাকিস্তানে গিয়ে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। পরে আফগানিস্তানেও এই প্রকল্পের সম্প্রসারণ করে চিন। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিনের ভূমিকা। আর্থিক সংকটের দিনে চিনের সাহায্যেই দেশ বাঁচাতে পেরেছেন শাহবাজ শরীফ। কিন্তু, এখন আচমকা চিন এই সাহায্য থেকে সরে গেলে পাকিস্তান মহা বিপদে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।