সংক্ষিপ্ত

নয়া ফতোয়া জারি করেছে তালিবান সরকার। ৪৫ মাইলের বেশি (৭২ কিলোমিটার) ভ্রমণকারী মহিলাদের যাত্রার প্রস্তাব দেওয়া উচিত নয়

মহিলা? তাও আবার একা ? ভ্রমণে যেতে চান? এই সবকটা প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়. তাহলে প্ল্যান বাতিল করুন। কারণ নয়া ফতোয়া জারি করেছে তালিবান সরকার। তালিবানদের (Taliban) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কোনও মহিলা (Afghan woman) একা দূরে ভ্রমণে বা রোড ট্রিপে (long distance trips) যেতে পারবেন না। তাঁদের সঙ্গে কোনও না কোনও পুরুষ সঙ্গী (male escort) থাকতেই হবে। 

ফের একবার নিজেদের রক্ষণশীল ও গোঁড়া মূর্তি তুলে ধরে তালিবানরা জানিয়েছে এই নির্দেশিকা মেনে চলতে বাধ্য দেশের প্রত্যেক মহিলা। প্রমোশন অফ ভার্চিউ অ্যান্ড প্রিভেনশন অফ ভাইস মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। নির্দেশ আসার পরেই তার সমালোচনায় সরব হয়েছে দেশের মানবাধিকার কর্মীরা। নির্দেশিকায় আরও জানানো হয়েছে পুরুষ সঙ্গী থাকলেও মহিলাদের হেডস্কার্ফ পরা বাধ্যতামূলক। 

মন্ত্রকের মুখপাত্র সাদেক আকিফ মুহাজির রবিবার বলেন, ৪৫ মাইলের বেশি (৭২ কিলোমিটার) ভ্রমণকারী মহিলাদের যাত্রার প্রস্তাব দেওয়া উচিত নয় যদি তাদের সঙ্গে পরিবারের কোনো ঘনিষ্ঠ সদস্য না থাকে। নতুন নির্দেশিকা, সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলিতে প্রচার করে গাড়িতে গান বাজানো বন্ধ করতে বলা হয়েছে। 

দীর্ঘ দুই দশকের যুদ্ধের পর, চলতি বছরের অগাস্টের মাঝামাঝি আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুনর্দখল করেছিল তালিবানরা। তারপর থেকে তারা বারবারই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের আশ্বাস দিয়েছিল, শরিয়া আইনের মধ্যে থেকে মহিলাদের সমাজে আরও বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী তাদের প্রথম জমানা, অর্থাৎ, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বিশ্ববাসীকে। 

গত সেপ্টেম্বর মাসেই তুলে দেওয়া হয় মহিলা বিষয়ক মন্ত্রক। তার বদলে ফের চালু করা হয় নৈতিকতা প্রচার ও অনৈতিকতা প্রতিরোধ মন্ত্রক। মহিলা বিষয়ক মন্ত্রকের ভবনগুলিতেই এই নতুন মন্ত্রক স্থাপিত হয়। ঘটনাচক্রে, এই নৈতিকতা ও অনৈতিকতা মন্ত্রকই, তালিবানদের প্রথম জমানায় নারী নির্যাতনের প্রধান মুখ ছিল। 

এই মন্ত্রকের অধীনেই কাজ করত তালিবানদের কুখ্যাত 'নীতি পুলিশ'। যারা যখন তখন যে কোনও অছিলায় মহিলাদের উপর নির্যাতন চালাতো। পুরো শরীর ঢাকা পোশাক না পরা, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বাইরে বের হওয়ার মতো ঘটনায় মহিলাদের প্রকাশে বেত্রাঘাত করা হত। প্রাথমিক শিক্ষার পর মহিলাদের পড়াশোনা করা নিষিদ্ধ ছিল। নাচ, গান-সহ যে কোনওরকম বিনোদনের উপরেই ছিল নিষেধাজ্ঞা। আর তা মেনে চলা হচ্ছে কিনা, সেই নজরদারির জন্য ছিল নীতি পুলিশ। এই সব কালাকানুন না মানলেই বেত্রাঘাত তো ছিলই এমনকী এমনকি প্রকাশ্যে অঙ্গচ্ছেদ, মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হতো। ক্রমে, সেই দিকেই ফের এগোচ্ছে আফগানিস্তান, এমনটাই বলছেন মহিলা অধিকার রক্ষা কর্মীরা।