মার্কিন দূতাবাস ভারতীয়দের সতর্ক করেছে যে 'বার্থ-ট্যুরিজম'-এর সন্দেহে ট্যুরিস্ট ভিসা সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করা হবে। পাশাপাশি, H-1B এবং H-4 ভিসার আবেদনকারীদের সোশ্যাল মিডিয়া পরীক্ষাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 

নয়াদিল্লি। আপনি যদি আমেরিকা ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন বা ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করার কথা ভাবেন, তবে এই খবরটি আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস এখন ট্যুরিস্ট ভিসায় ভ্রমণকারী যাত্রীদের জন্য একটি কঠোর সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষ করে সেই সমস্ত লোকদের জন্য যারা Birth Tourism অর্থাৎ “আমেরিকায় সন্তানের জন্ম দিয়ে তার নাগরিকত্ব পাওয়ার” উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করেন। মার্কিন দূতাবাসের বক্তব্য, যদি কোনো ট্যুরিস্ট ভিসা আবেদনকারীর উপর সন্দেহ হয় যে তিনি শুধু “সন্তানকে আমেরিকায় জন্ম দেওয়ার” উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন, তাহলে তার B-1/B-2 ভিসা সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করে দেওয়া হবে। এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্যানিং, H-1B এবং H-4 ভিসার আবেদনকারীদের জন্য নতুন তদন্ত প্রক্রিয়া এবং ইন্টারভিউয়ের সময়সূচি পরিবর্তনের মতো কঠোর নীতি প্রয়োগ করেছে। অর্থাৎ, এটা স্পষ্ট যে এখন আমেরিকার ভিসা পাওয়া আগের মতো সহজ নয়। আর বার্থ ট্যুরিজমের মতো কোনো উদ্দেশ্য আপনার যাত্রাকে চিরতরে থামিয়ে দিতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বার্থ ট্যুরিজম কী এবং কেন এটিকে প্রতারণা হিসেবে দেখা হয়?

প্রথমে বুঝতে হবে বার্থ-ট্যুরিজম আসলে কী। কিছু মানুষ শুধু এই উদ্দেশ্যেই আমেরিকায় যান যাতে তাদের সন্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করে এবং সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকান নাগরিকত্ব পেয়ে যায়। মার্কিন আইন অনুযায়ী এটি বৈধ, কারণ আমেরিকার মাটিতে জন্মগ্রহণকারী শিশুকে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এখন মার্কিন সরকার মনে করে যে এই পদ্ধতিটি সিস্টেমের একটি ভুল ব্যবহার। যদিও মার্কিন আইন অনুযায়ী আমেরিকায় জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশু নাগরিক হতে পারে, কিন্তু “ভিসা নিয়ে শুধু সন্তানের জন্ম দিতে যাওয়া” সিস্টেমের অপব্যবহার হিসেবে গণ্য করা হয়। মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট-এর মতে, এই ধরনের ক্ষেত্রে আমেরিকান করদাতাদের লক্ষ লক্ষ ডলারের চিকিৎসার খরচ বহন করতে হয় এবং অনেকেই এটিকে “শর্টকাটে মার্কিন নাগরিকত্ব” পাওয়ার উপায় হিসেবে ব্যবহার করে। এই কারণেই ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ম পরিবর্তন করে কনস্যুলার অফিসারদের সন্দেহ হলেই ভিসা বাতিল করার অধিকার দেয়। এখন কনস্যুলার অফিসারদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে বার্থ ট্যুরিজমের সন্দেহ হলেই যেন ভিসা বাতিল করা হয়।

মার্কিন দূতাবাসের নতুন সতর্কতা: ট্যুরিস্ট ভিসায় প্রথমবার এত কঠোর পদক্ষেপ

মার্কিন দূতাবাস X (টুইটার)-এ পোস্ট করে জানিয়েছে যে, "যদি কোনো আবেদনকারীর মূল উদ্দেশ্য আমেরিকায় সন্তানের জন্ম দেওয়া হয়, তবে তার ট্যুরিস্ট ভিসা বাতিল করা হবে।" এই সতর্কতা ২০২০ সালের সেই নিয়মকেই পুনরায় মনে করিয়ে দেয়, যেখানে বলা হয়েছিল যে B-1/B-2 ভিজিটর ভিসা শর্টকাটে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ, এখন আমেরিকা আপনার চিকিৎসার ইতিহাস, গর্ভাবস্থার অবস্থা, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ভ্রমণের পরিকল্পনা এবং থাকার তথ্যও স্ক্যান করতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়া তদন্ত আরও কড়া- বিশেষ করে H-1B এবং H-4 ভিসার জন্য

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন সোশ্যাল মিডিয়া তদন্তকেও বাধ্যতামূলক করেছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রত্যেক H-1B কর্মী, প্রত্যেক H-1B আবেদনকারী এবং তাদের H-4 নির্ভরশীলদের তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের অনলাইন বিবরণ মার্কিন সরকারকে দিতে হবে। এর মানে হলো, যদি আপনার পোস্ট, ছবি বা মন্তব্যে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়, তাহলে আপনার ভিসা আটকে যেতে পারে। অনেক ভারতীয়র জন্য এটি একটি বড় উদ্বেগের কারণ:

  • H-1B ভিসাধারীদের মধ্যে ভারতীয়দের অংশ প্রায় ৭০%।
  • H-4 EAD হোল্ডারদের মধ্যে ৯০%-এর বেশি ভারতীয়।
  • কেরিয়ার, লোন, সন্তানদের পড়াশোনা—সবই ভিসার স্ট্যাটাসের উপর নির্ভরশীল।

ভারতে মার্কিন ভিসার ইন্টারভিউও পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে - কিছু তো ২০২৬ পর্যন্ত

ভারতে বিপুল সংখ্যক H-1B এবং H-4 ভিসার ইন্টারভিউ হঠাৎ করেই নতুন করে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক তারিখ সরাসরি ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মার্কিন দূতাবাসের মতে, যদি আপনার ইন্টারভিউয়ের সময় পরিবর্তন করা হয়, তবে নতুন সময়েই আসুন; পুরনো তারিখে পৌঁছলে “প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।” এর মানে হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ভিসা ইন্টারভিউও নিজের সুবিধা এবং নিরাপত্তা অনুযায়ী পরিবর্তন করছে।

বার্থ ট্যুরিজম নিয়ে আমেরিকা এত কঠোর কেন?

এর প্রধান কারণগুলি হলো:

  • অনেক বিদেশি পরিবার চিকিৎসার বিল পরিশোধ করে না।
  • নাগরিকত্ব দেওয়ার কারণে সরকারকে অনেক খরচ বহন করতে হয়।
  • কিছু লোক ভিসা সিস্টেমের অপব্যবহার করছে।
  • এর ফলে নিরাপত্তা সংস্থাগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ বাড়ে।
  • আমেরিকা বার্থ ট্যুরিজমকে সরাসরি “ভিসা সিস্টেমের ভুল ব্যবহার” বলে মনে করে।

ভারত থেকে আবেদনকারীদের কি এখন সতর্ক হতে হবে?

যদি আপনার উদ্দেশ্য:

  • ভ্রমণ
  • পরিবারের সাথে দেখা করা
  • ব্যবসার মিটিং
  • স্টুডেন্ট ভিসা
  • ওয়ার্ক ভিসা

-এর মতো বৈধ কারণ থাকে, তবে আপনার চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু যদি কারও সোশ্যাল মিডিয়া বা ভ্রমণ পরিকল্পনায় বার্থ ট্যুরিজমের মতো কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তাহলে ভিসা চিরদিনের জন্য বাতিল হয়ে যেতে পারে।