নেপালে (Nepal) ফিরুক গণতন্ত্র। তেমনই দাবি জানিয়েছে নেপালের সাধারণ মানুষ। রবিবার নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ (Gyanendra Shah) দেশে ফিরেছেন। তাঁকেই স্বাগত জানাতে কাঠমান্ডুর রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। 

Nepal: আর রাজনীতি নয়। এবার নেপালে (Nepal) ফিরুক গণতন্ত্র। তেমনই দাবি জানিয়েছে নেপালের সাধারণ মানুষ। রবিবার নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ (Gyanendra Shah) দেশে ফিরেছেন। তাঁকেই স্বাগত জানাতে কাঠমান্ডুর রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। তাঁরা নেপালে রাজতন্ত্র ফেরার পক্ষেই স্লোগান দেন। নেপালে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থির অবস্থার বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছেন। হিমালয়ের এই দেশটির শেষ রাজার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে পথে নামে মানুষ। বিক্রম দুলাল নামের একজন বিক্ষোভকারী এএনআইকে বলেন, "আজ আমরা এখানে (এয়ারপোর্টের বাইরে) দেশের রাজাকে স্বাগত জানাতে এবং গ্রহণ করতে এসেছি।"

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশপথ ঢেকে যায় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে। বহু বিক্ষোভকারী টিকিট কেটেও বিমানবন্দরের প্রবেশ করেন দেশের রাজাকে স্বাগত জানাতে। নেপালের বিমানবন্দের এত মানুষ ঢুকে পড়ে যে বিমান পরিষেবা সাময়িক ব্যহত হয়। বিক্ষোভকারী দুলাল আরও বলেন, "রাজতন্ত্র সময়ের দাবি। দেশে একজন অভিভাবকের অভাব রয়েছে। সেই ভূমিকা পূরণ করার জন্য রাজার প্রয়োজন, তাই আমরা এখানে আমাদের রাজাকে গ্রহণ ও স্বাগত জানাতে এসেছি।" তিনি চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন। ওই রাজতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারী দাবি করেন, "বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভালো নয়। ২০৬৩ থেকে ২০৮১ বিএস (২০০৬ থেকে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ) সময়কাল ভালো নয়, রাজনৈতিক দলগুলো দুর্নীতি ও অন্যান্য কেলেঙ্কারিতে জড়িত। তারা সবাই নিজেদের রাজা - শ্রেষ্ঠ হিসেবে উপস্থাপন করে। কেন্দ্র থেকে স্থানীয় স্তর পর্যন্ত যারা উচ্চ পদে আছেন, তারা রাজার মতো ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। দেশ পিছিয়ে গেছে।"

প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র রবিবার পোখরার পর্যটন শহর থেকে কাঠমান্ডুতে একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ফিরে আসেন। তিনি সম্প্রতি শাহ রাজবংশের পৈতৃক মন্দির সিয়াংজার আলমদেবী মন্দির পরিদর্শন করেন এবং বেশ কয়েক দিন ধরে পোখরার ছিলেন।

বিমানবন্দরের প্রবেশপথ থেকে প্রাক্তন রাজাকে বহনকারী গাড়িটি বের হওয়ার সময় সমর্থকেরা "রাজা আউ দেশ বাচাউ" (রাজা আসুন, দেশ বাঁচান) এবং "নেপালী জনতা কে ভাঞ্চা? রাজতন্ত্র লেই ভাঞ্চা" (নেপালের জনগণ কী বলে? রাজতন্ত্র পুনর্বহাল হোক), ইত্যাদি স্লোগান দেয়। বিমানবন্দরের প্রবেশপথ থেকে বের হওয়ার পর প্রাক্তন রাজা শাহ তার গাড়ি থেকে উঠে নমস্কার ও হাত নেড়ে ভিড়কে অভিবাদন জানান। সমর্থকেরা কাঠমান্ডুর রিং রোডের একটি অংশ জুড়ে ফুল ও অন্যান্য উপহার দিয়ে তাকে বরণ করে নেয়।

২০০৬ সালে নেপালে কয়েক শতাব্দীর পুরনো সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করা হয়, যখন তৎকালীন রাজা জ্ঞানেন্দ্র ক্ষমতা দখল করেন এবং জরুরি অবস্থা জারি করে সব নেতাকে গৃহবন্দী করেন। এই আন্দোলন "গণআন্দোলন ২" নামেও পরিচিত, যেখানে সরকারের দমন-পীড়নে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী নিহত হন। সপ্তাহব্যাপী হিংসা বিক্ষোভ ও ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের পর জ্ঞানেন্দ্র নতি স্বীকার করেন এবং ভেঙে দেওয়া সংসদ পুনর্বহাল করেন। প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ, যিনি ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পোখরার ছিলেন, রবিবার বিকেলে কাঠমান্ডুতে ফিরে আসেন। তিনি তার পরিবারসহ একটি চার্টার্ড সামিট এয়ারের বিমানে বিকেল ৩:৫০ মিনিটে পৌঁছান।

পোখরার থাকাকালীন রাস্ত্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি) কাস্কি প্রাক্তন রাজাকে বিদায় জানাতে একটি বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রাক্তন রাজার প্রত্যাবর্তন তার সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহের ঢেউ জাগিয়েছে, যা দেশের রাজকীয় দলগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তৎকালীন রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাজনৈতিক দল গঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর ১৯৯০-এর দশকে রাস্ত্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি) গঠিত হয় এবং তখন থেকে এটি রাজতন্ত্রকে সমর্থনকারী শক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে। এটি পর্যায়ক্রমিক নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে এবং তার দাবি পেশ করেছে।

২০০৮ সালে নেপালে রাজতন্ত্র উৎখাতের পরপরই রাস্ত্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি) ৫৭৫ আসনের সংসদে ৮টি আসন লাভ করে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে এটি ১৩টি আসন পেতে সক্ষম হয়। ২০১৭ সালে এটি ১টি আসনে নেমে আসে, কিন্তু ২০২২ সালের নির্বাচনে ১৪টি আসন নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। সেই সময় থেকেই হিন্দু রাষ্ট্র এবং রাজতন্ত্রকে দুটি বৃহৎ শক্তি ভারত ও চীনের মধ্যে অবস্থিত ক্ষুদ্র দেশটির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সমর্থন করে আসছে। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, হিমালয়ের দেশ নেপালের জনসংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ এবং হিন্দু জনসংখ্যা ৮১.১৯ শতাংশ।

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।