সংক্ষিপ্ত

আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কনফেডারেশন (আইবিসি)-এর একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দল মায়ানমারে চার দিনের সফর শেষ করেছে। এই সফর ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে বৌদ্ধ সংযোগ আরও শক্তিশালী করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে শক্তিশালী বৌদ্ধ সংযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে, ইন্টারন্যাশনাল বুদ্ধিস্ট কনফেডারেশন (আইবিসি)-এর একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দল মায়ানমারে চার দিনের সফর শেষ করেছে। আইবিসি-এর সেক্রেটারি জেনারেল শার্তসে খেনসুর রিনপোচে জাংচুপ চোয়েডেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি মায়ানমারের সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মঠ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আইবিসি-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "ভারত পালিকে ২০২৪ সালের অক্টোবরে একটি ক্লাসিক্যাল ভারতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে ভাষাটির প্রতি একাডেমিক ও আধ্যাত্মিক আগ্রহ বেড়েছে।"

মায়ানমারের প্রাচীন বৌদ্ধ ঐতিহ্য থাকায়, আলোচনাগুলোতে উভয় দেশের বৌদ্ধ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারে পালি ভাষার ভূমিকার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই সফরের প্রধান আকর্ষণ ছিল আইবিসি এবং মায়ানমারের বিশিষ্ট বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেমন সিতাগু ইন্টারন্যাশনাল বুদ্ধিস্ট একাডেমি (এসআইবিএ) এবং শান স্টেট বুদ্ধিস্ট ইউনিভার্সিটি (এসএসবিইউ)-এর মধ্যে একাধিক সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর। এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সাঙ্ঘের প্রবীণ সদস্য এবং মায়ানমারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অভয় ঠাকুর উপস্থিত ছিলেন। এটি শিক্ষা সহযোগিতা ও জ্ঞান আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। প্রতিনিধি দলটি মায়ানমারের তথ্যমন্ত্রী ইউ মাউং মাউং ওহনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে এবং বুদ্ধ ধর্ম প্রচারে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করে।

অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয় মায়ানমারের ধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ইউ টিন ও লুইনের সঙ্গে। সেখানে পালি ভাষার চর্চা এবং ধর্ম সম্পর্কিত কার্যক্রম প্রসারে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়াও প্রতিনিধি দলটি মায়ানমারের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া হাউস স্কাইনেট বুদ্ধ চ্যানেল এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক "মায়ানমার ন্যারেটিভ"-এর সঙ্গে কৌশলগত আলোচনা করে এবং বৌদ্ধ বিষয়ক আলোচনা ও জ্ঞান আদান-প্রদানের বিষয়ে চুক্তি করে।

প্রতিনিধি দলটি ইন্টারন্যাশনাল থেরবাদা বুদ্ধিস্ট মিশনারি ইউনিভার্সিটি (আইটিবিএমইউ) এবং স্টেট পরিয়াত্তি সাসন ইউনিভার্সিটির (এসপিএসইউ) মতো গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করে এবং সম্ভাব্য প্রশিক্ষণ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করে। এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল স্টেট সাঙ্ঘা মহানায়কা কমিটির চেয়ারম্যান হিজ এমিনেন্স ক্যান্ডিমাভিভামসার সাথে সাক্ষাৎ। এটি উভয় দেশের মঠ নেতৃত্বের মধ্যে ধারাবাহিক সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরে। এছাড়াও, প্রতিনিধি দলটি ধম্ম জ্যোতি বিপাসনা কেন্দ্র পরিদর্শন করে এবং বিপাসনা ধ্যান অনুশীলনের প্রসার ও সংরক্ষণের বিষয়ে আলোচনা করে।

ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই সফরের সমাপ্তি ঘটে। অনুষ্ঠানে মায়ানমারে বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানটি ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে ঐতিহাসিক বৌদ্ধ সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক আদান-প্রদানের বৃহত্তর তাৎপর্য তুলে ধরে। আইবিসি-এর এই কূটনৈতিক ও একাডেমিক উদ্যোগ শিক্ষা, গণমাধ্যম এবং মঠের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুই দেশের বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা যায়।