সংক্ষিপ্ত
রবিবার একটি বিভাজনমূলক রান অফ নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে জয়লাভ করে ফের ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি পদে প্রত্যাবর্তন করলেন লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। দক্ষিণপন্থী দলের নেতা জাইর বলসোনারোকে পরাজিত করেই লুলার এই ঐতিহাসিক জয়।
ফের ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি হলেন লুলা। রবিবার একটি বিভাজনমূলক রান অফ নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে জয়লাভ করে ফের ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি পদে প্রত্যাবর্তন করলেন লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। দক্ষিণপন্থী দলের নেতা জাইর বলসোনারোকে পরাজিত করেই লুলার এই ঐতিহাসিক জয়। জয়লাভের পরই ব্রাজিলের জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ঐক্য ও শান্তির বার্তা দিলেন তিনি।
জয়টি নিঃসন্দেহে ক্যারিশম্যাটিক - এমনই জানাচ্ছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহল। লুলা একসময় ছিলেন ব্রাজিলের বেশ জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি। তার কর্ম ও কৃতিত্ব আপামর ব্রাজিলবাসীর মন জয় করে নিয়েছিল। কিন্তু জিনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকাকালীনই তিনি পদত্যাগ করেন রাষ্ট্রপদী পদ থেকে। সেই কারণেই দানা বাঁধে বিতর্ক। দুর্নীতির অভিযোগে ১৮ মাসের জেল -উস্কানি দেয় সেই বিতর্কে। অবশেষে আবার তার প্রত্যাবর্তন। ৭৭ বছর বয়সে তৃতীয় বারের জন্য আবার রাষ্ট্রপতি পদাসীন হলেন লুলা।
ব্রাজিলে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং সিস্টেমে জালিয়াতি করা হয়েছে - একসময় এমন অভিযোগ উঠেছিল লুলার বিরুদ্ধে। এমনকি আদালত, মিডিয়া, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সবাই উগ্র দক্ষিনপন্থীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে লুলার নির্দেশে এমন অভিযোগও তোলেন ডানপন্থী নেতা বলসোনারো এবং তার সমর্থকরা। তারপর লুলার এই অভূতপূর্ব জয় কি কোথাও ধূলিস্যাৎ করে দিলো তাদের এই অভিযোগকে ? প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সাও পাওলোতে সেদিন বিজয়ী ভাষণে লুলা উল্লাস করতে করতে বলেন , "এই দেশে শান্তি ও ঐক্য দরকার।" তিনি আরও বলেন ," ক্ষুধার সংকট, অর্থনীতি, তিক্ত রাজনৈতিক বিভাজন এবং অ্যামাজনে বন উজাড়ের - এইসব সমস্যায় জর্জরিত একটি দেশ সামলানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন তিনি , চ্যালেঞ্জটি বিশাল। " পরে ওয়ার্কার্স পার্টির লাল পোশাকে শহরের কেন্দ্রে এক অভিনন্দনসূচক সমাবেশে তিনি হাজার হাজার জনতার উদ্দেশ্যে বলেন , " গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। "
লুলার রাজনৈতিক জীবনের উত্থান নিয়ে চর্চিত আছে বেশ কয়েকটি কাহিনী। ১০ বছর পর্যন্ত লেখাপড়া জানতেন না লুলা। দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর তিনি ছেড়ে দেন পড়াশুনা। তারপর সংসার চালানোর জন্য তাকে নামতে হয় কাজে। ১৯ বছর বয়সে এক অটোমোবাইল ফ্যাক্টরিতে কাজ করা কালীন তার বাম হাতের কোনে আঙ্গুলটি যায় কেটে। তারপর ছোট বড়ো নানান হাসপাতালে দৌড়োনোর পরও যখন ডাক্তাররা তার চিকিৎসা করতে অস্বীকার করেন। এই ঘটনার পর থেকেই শুরু তিনি নানা শ্রমিক উন্নয়নের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে তার ভাই ফ্রাই চিকোর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে লুলা শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেন। ভিলারেলস মেটালস এ কাজ করা কালীন তার রাজনৈতিক যোবন শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে তিনি সাও বার্নার্ডো ডো ক্যাম্পো এবং ডায়াডেমার ইস্পাত শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন. এই দশকের শেষের দিকেই লুলা প্রথম ধর্মঘট করেন।ধর্মঘটের উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিক উন্নয়ন। কিন্তু শ্রম আদালত এই ধর্মঘটকে বেআইনি বলে আখ্যা দিলে লুলাকে এক মাসের জন্য জেলে যেতে হয়। সামরিক শাসনের পতনের পর তাকে তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য আজীবন পেনশন দেওয়ার অনুমোদন দেয় তৎকালীন ব্রাজিল সরকার। এই তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সূচনা। তারপর গেছে অনেক উত্থান পতন। অবশেষে সমস্ত ঝড় ঝাপ্টা সামলে তিনি আবার ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আবার স্বর্ণাক্ষরে লেখা হলো তার নাম , লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা।