Gaza: যুদ্ধবিধস্ত গাজার ভয়াবহ রূপ প্রকাশ্যে। গাজায় অনাহারে মরছে শিশুরা। ক্ষুধার্ত গাজার বিভৎস রূপ দেখে তা পৃথিবীর জীবন্ত নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন রেড ক্রস প্রধান। আর কী বলেছেন তিনি? জানতে বিশদে পড়ুন…
Gaza: দিন যত যাচ্ছে ততই সামনে আসছে গাজাবাসীর বুভুক্ষ চেহারা। গাজার ব্যর্থ হয়েছে মানবতা। এমনই অভিযোগ তুলে সরব হলেন রেড ক্রস প্রধান। জানা গিয়েছে, গাজার পরিস্থিতি এখন নরকের চেয়েও ভয়াবহ বলে জানিয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (ICRC) প্রধান বলেছেন যে, ''গাজায় মানবিক পরিস্থিতি "নরকের চেয়েও খারাপ" এবং মানবতা সেখানে ব্যর্থ হয়েছে।''
কারণ, গাজায় ইজরায়েলি আগ্রাসন এখনও অব্যাহত রয়েছে। এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে প্রতিদিন মানুষের দুর্ভোগ প্রত্যক্ষ করা অসহনীয় হয়ে উঠেছে বলে তিনি দাবি করেছেন। বিবিসিকে (BBC) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পোলজারিক বলেন, ''পরিস্থিতি যেকোনও গ্রহণযোগ্য আইনি, নৈতিক এবং মানবিক মান অতিক্রম করেছে।"
কয়েক সপ্তাহ আগে গাজা সফরের সময় উদ্বিগ্ন রেড ক্রস প্রধান মন্তব্য করে বলেছিলেন যে, ‘’গাজা এখন পৃথিবীতে নরকে পরিণত হয়েছে।'' মঙ্গলবার বিবিসির জেরেমি বোয়েনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জোরের সঙ্গে বলেন, "গাজা এখন নরকের চেয়েও খারাপ।" আর তার এই মন্তব্য গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকটের গভীরতাকেই তুলে ধরে বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
সূত্রের খবর, গণহারে অসুস্থতা, শিশুদের ক্ষুধার্ত কান্না, এবং মৃতের ক্রমবর্ধমান স্তূপের খবরের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস (International Red Cross) প্রধান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, "গাজায় যা ঘটছে, তা আমরা আর দেখতে পারি না। আমরা আর এই মাত্রার দুর্ভোগ ও ধ্বংস দেখতে পারবো না।" রেড ক্রস প্রধান আরও বলেন, "একটি জাতিকে সম্পূর্ণভাবে তার মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হতে দেখা, আমাদের সম্মিলিত বিবেককে সত্যিই নাড়া দেওয়া উচিত।" শুধু তাই নয়, তিনি গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও জোর দেওয়া বা পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে জানিয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস কমিটির (International Red Cross Committee) প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক আরও উল্লেখ করেছেন যে, গাজায় বর্তমানে যে ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে, তা "পুরো বিশ্বের নীরব দর্শকের ফল।" তিনি বলেন, ‘’এই ধরনের যুদ্ধ সাধারণ নাগরিকদের প্রতি চরম অসম্মান দেখাচ্ছে এবং তাদের মানবিক মর্যাদাকে সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নিচ্ছে।''
স্পোলজারিকের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা এবং গাজায় অব্যাহত সংঘাতের ভয়াবহতার প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার ওপর একটি কঠোর বার্তা বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল। তার মতে, যেভাবে গাজায় সাধারণ মানুষদের তাদের মৌলিক অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তা বিশ্ববাসীর সম্মিলিত বিবেকের জন্য একটি বড় ধাক্কা। ইজরায়েলের নেতৃত্বের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ এবং সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন রেড ক্রস কমিটির প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আজ আমরা এর মধ্যে আছি, আজই আমরা এটি ফিরিয়ে দিতে পারি... আজ আমরা জীবন বাঁচাতে পারি। তাই এখনই কাজ করা জরুরি।" তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন যে, ‘’রাষ্ট্রীয় নেতাদের নিরীহ জীবন রক্ষা এবং মানবিক মর্যাদা বজায় রাখার জন্য কাজ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।''
রেড ক্রস প্রধান আরও বলেন, "আমি তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি কিছু করার জন্য... আরও বেশি কিছু করার জন্য... তারা যা কিছু করতে পারে তা করার জন্য, কারণ এর প্রতিধ্বনি হবে। এটি তাদের তাড়া করবে। এটি (একদিন) তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে।" তার এই বক্তব্য গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইসরায়েলি নেতৃত্বের উপর দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপের জন্য একটি জোরালো নৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, 'রেড ক্রস' হল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা যুদ্ধাঞ্চলে কাজ করে থাকে। গাজায় রেড ক্রসের ৩০০-এর বেশি কর্মী রয়েছে, যাদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনি। যুদ্ধাঞ্চলে রেড ক্রসকে জেনেভা কনভেনশনের অভিভাবক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সংঘাতের সময় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়াই এর প্রধান কাজ।
গাজার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস ইজরায়েলে একটি সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এই হামলায় ১,২০০-এর বেশি ইজরায়েলি নাগরিক নিহত হয় এবং ২৫০-এর বেশি সাধারণ নাগরিককে বন্দি করা হয়। এটি হল হলোকাস্টের পর ইহুদিদের উপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইজরায়েল গাজায় বিস্তৃত হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যা এখনও অব্যাহত।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।


