সংক্ষিপ্ত
কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে কলকাতার স্মৃতিতে ফিরে গেলেন ইউক্রেনের সবথেকে ছোট সাংসদ সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশ। তিনি ৬ মাস কলকাতায় কাটিয়েছিলেন বলেও জানালেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগদিতে যুদ্ধের ইউক্রেন থেকে ভারতে এসেছেন সেই দেশের সবথেকে তরুণ সাংসদ সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশ। মাত্র ২৭ বছর বয়সী এই সাংসদ একাধিক সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার নিয়ে তিনি যেমন কথা বলেছেন, তেমনই দরাজ কণ্ঠে বলেছেন তাঁর কলকাতা যোগের কথাও। একটা সময় বেশ কয়েক মাসের জন্য তিনি কলকাতায় ছিলেন। এই শহরের ওলিগলির পাশাপাশি স্ট্রিটফুড আর মিষ্টি যে এখনও তাঁর মনে রয়েছে তাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশ।
সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশ জানিয়েছেন সালটা ছিল ২০১৩, তাঁর তখন মাত্র ১৭ বছর বয়স। সেই সময়ই তিনি কলকাতা এসেছিলেন। ভারত ও পোল্যান্ডের মধ্যে এক বছরের ছাত্র অদলবদল কর্মসূচি মাধ্যমেই তিনি প্রথম এই দেশে এসেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা করেছিলেন সেই সময়। মাত্র ৬ মাস পরেই তিনি ফিরে গিয়েছিলেন। তাঁর দেশে ফেরার কথায় পরে আসছি, আগে জানুন কলকাতা সম্পর্কে সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশের কী কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশ জানিয়েছেন কলেজস্ট্রিট তাঁর দারুন প্রিয় শহর। বইয়ের দোকানগুলি তাঁকে টানত। কলকাতার স্ট্রিট ফুডের তিনি একজন ভক্ত। তিনি আরও জানিয়েছেন, অনেকেই তাঁকে রাস্তার খাবার খেতে দেখে ভয় দেখাত। বলত পেটের সমস্যা হবে। কিন্তু কোনও দিন তার সেই সমস্যা হয়নি। তিনি আরও জানিয়েছেন, শরৎকালে তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। এই শহরের দুর্গাপুজোও দেখেছেন তিনি। তিনি আরও জানিয়েছেন কলকাতা মিষ্টি তাঁর দারুন প্রিয়। তাঁর বন্ধুরা তাঁকে 'সুইট লাভার' বলেও ডাকত। মাত্র ৬ মাসের কলকাতা সফর তাঁর দারুন ছিল বলেও এককথা জানিয়েছেন সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশ।
তবে তাঁর আরও থাকার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেই সময়এ একবার উত্তাল হয়েছিল কিয়েভ। সেই সময় রাশিয়ান অনুগত ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভিক্টোর ইয়ানকোভচের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন তিনি। সেই সময় তিনি দেশে ফিরে যান। সেই সময় দেশের কয়েক লক্ষ তরুণ কোভচের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল। তাদেরই একজন ছিলেন সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশ, জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেছেন, রাশিয়া যদি যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি নিয়ে আলোচনা করে তাহলে তারাও হাতিয়ার ত্যাগ করবে। কিন্তু আগে রাশিয়াকে ইউক্রেন যদি অস্ত্র ত্যাগ করে তাহলে ইউক্রেনের আর কোনও অস্তিত্ত্ব থাকবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেছেন রাশিয়ার মনোপলি কিছুতেই ইউক্রেন মেনে নেবে না।
২০১৯ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ভ্লাদিমিক জেলেনেস্কি। সেই বছরই সাংসদ হিসেবে ৪৫০ সদস্যের ইউক্রেন পার্লামেন্টে ঠাঁই হয় সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশ। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২১। তিনি আরও বলেছেন, দেশের জন্য দেশের প্রতিটি নাগরিকই অস্ত্র হাতে লড়াইয়ের ম.য়দানে যেতে প্রস্তুত। যখনই প্রয়োজন পড়বে তখনই তাঁরা যুদ্ধক্ষেত্রে যাবেন বলেও নির্ভিক কণ্ঠে জানিয়েছেন সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশ। তাঁর বাবা একজন ধর্ম বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। একটা সময় ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও কাজ করেছেন। সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশ ইউক্রেন পার্লানমেন্টের বিদেশ বিষয়ক প্যানেলর সদস্য।
সভিয়াতোস্লাভ ইউরাশ জানিয়েছেন গত বছর রাশিয়া যখন ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল তখন তিনি কিয়েভে ছিলেন। সেই সময় ইউক্রেন সংসদের অধিবেশন চলছিল। দিনটা ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি। তিনি আরও বলেছেন যুদ্ধের খবর পাওয়ার পরই তিনি দেশের পরিস্থিতি দেখতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তিনি লুকিয়ে থাকতে চান না। তিনি আরও বলেছেন তাঁর দাদু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন। তাই যুদ্ধকে তিনি ভয় পান না। যুদ্ধ তাঁর রক্তে রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যুদ্ধের রাশিয়ার সেলিং-এর কারণ তিনি তাঁর প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছেন। তাঁরা দীর্ঘ দিনের বন্ধু ছিলেন বলেও জানিয়েছেন। যুদ্ধ ইউক্রেনের কতটা ক্ষতি করেছে তাও বলেন তিনি।