সংক্ষিপ্ত

সময় যত এগোচ্ছে রাশিয়ার মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠছেন ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান যেভঘেনি প্রিগোঝিন। কারণ, এখনও পর্যন্ত রুশ বাহিনী এমন কিছু করে উঠতে পারেনি যাতে ওয়াগনার বাহিনীকে কাবু করা যায়।

 

প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এক্কেবারে নিরাপত্তার বাহুডোরে। নিরাপত্তা বূহ্যে দূর্ভেদ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রেমলিন ও মস্কো। এই অবস্থায় রাশিয়ার মাথা ব্যাথা আচমকা বিভীষণ হয়ে ওঠা ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান যেভঘেনি প্রোগোঝিন। যিনি এবং তাঁর বাহিনী রাশিয়ার সাউদার্ন আর্মি মিলিটারি কমান্ড হেডকোয়ার্টার দখল করে নিয়েছেন। এই কমান্ড হেডকোয়ার্টার রাশিয়ার দক্ষিণে রোস্তভ অন ডন শহরে অবস্থিত। ওয়াগনার পিএমসি বাহিনী এই শহরেরও দখল নিয়ে রেখেছে বলে খবর।

টেলিগ্রামে অ্যাপ চ্যাটে ভাইরাল হওয়া যেভঘেনি-র একটি অডিও ক্লিপ ঘিরে আলোড়ন পড়েছে। যেভঘেনি এই অডিও ক্লিপে স্পষ্টতই হমকির সুরে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আমাদের অত্যন্ত ছোট করে দেখেছেন। ভাবতে পারেননি যে আমাদের শক্তি কতটা। প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর অনুরক্তরা মাতৃভূমির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আমরা সত্যিকারের যোদ্ধা এবং দেশপ্রেমিক। মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে যে কোনও কিছু করতে পারি।

এই টেলিগ্রাম অডিও মেসেজে যেভঘেনি আরও জানিয়েছেন যে, রাশিয়ান সেনা এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন আমাদের আত্মসমর্পণের জন্য যে দাবিগুলো রেখেছেন আমরা তার সামনে মাথা নথ করবো না। আমরা এমন দেশে বসবাস করতে চাই না, যেখানে দুর্নীতি, অসততা, আমলাতন্ত্রে কব্জা করে নিয়েছে।

এদিকে, পাল্টা আক্রমণ করতে ছাড়েননি প্রেসিডেন্ট পুতিন। সরকারি টেলিভিশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, আজ আমরা যেটা মোকাবিলা করছি এর জন্য বিশ্বাসঘাতকতাই দায়ী। একটি মানুষের একটা অনৈতিক অতি উচ্চাকাঙ্খা এবং নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেশ ও দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং এর পরিণামে ওয়াগনার বাহিনীর অসংখ্য যোদ্ধা আমাদের বাহিনীর সদস্যদের মতো যুদ্ধে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন।

পুতিন আরও কড়া ভাষায় বলেছেন, এরা বুকে হাত রেখে বলতে পারবে যে এরা এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য সজ্জিত এবং মিলিটারি মিউটিনির জন্য প্রস্তুত? একজনের নির্দেশে আচমকাই এরা অস্ত্র তুলে নিয়ে নিজেদেরই কমরেডদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। এতে এরা দেশ ও দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং এর জন্য এদের জবাব দিতেই হবে। পুতিন আরও বলেছেন, এটা রাশিয়া এবং তার দেশবাসীর কাছে একটা ধাক্কা, আমরা আমাদের পিতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য জান লড়িয়ে দেব এবং এই প্রতিরোধটা অত্যন্ত মারাত্মক হবে।

রোস্তভ-অন-ডন শহর ওয়াগনার বাহিনীর দখলে

শনিবারই একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। তাতে ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান যেভঘেনি প্রিগোঝিনকে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। এই ভিডিও-তে তিনি জানান যে, রোস্তভ অন ডন শহর এবং সেখানে থাকা রাশিয়ান সাউদার্ন আমি-র মিলিটারি কমান্ড হেডকোয়ার্টার তাঁদের দখলে। সেই সঙ্গে যেভঘেনি পুরো দায় ফের একবার রাশিয়ান ডিফেন্স মিনিস্টারের উপরেই চাপান। তিনি বলেন রাশিয়ার সরকারি মিলিটারি ফোর্স তাদের সঙ্গে যা করেছে তাতে কড়া জবাব দেওয়া ছাড়া গতি ছিল না। আর সেই সঙ্গে দাবি করেছেন ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়ার তাদের যে মৃতের সংখ্যা বলছে, বাস্তবে তার থেকে অনেক বেশি রুশির মৃত্যু হয়েছে।

যেভঘেনি অন্য একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, তাঁরা মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত। ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে ২৫ হাজার বাহিনী রয়েছে। আরও ২৫ হাজার বাহিনী তাঁর সঙ্গে যোদ দিতে তৈরি হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন যেভঘেনি।

সন্দেহ নেই এই মুহূর্তে যেভঘেনি ও পুতিনের মধ্যে যে লড়াইটা চলছে তা অতি নাটকীয় চেহার নিয়েছে। শোনা গিয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই পুতিন এবং তাঁর বন্ধু যেভঘেনির বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য চলছিল। যেভঘেনি কোনওভাবে রাশিয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের উপরে নিয়ন্ত্রণ চাইছিলেন। কিন্তু, এই ডিফেন্স সিস্টেম একদিকে যেমন পুতিনের শক্তি, তেমনি অন্যদিকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে শুরু করার পর এই ডিফেন্স সিস্টেমের বহু ফাঁক তৈরি হয়েছে যা রুশ প্রেসিডেন্টকে বিভ্রান্ত করে রেখেছে। এমন এক সময়ে যেভঘেনির এই বিদ্রোহ স্বাভাবিকভাবেই পুতিনকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছে। এই মুহূর্তে গত ১৬ মাসে এটাই প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে।