সংক্ষিপ্ত

কিন্তু, কিছুদিন আগেও ছবিটা এই রকম ছিল না। রাস্তায় অবলীলায় ঘুরে বেড়াতেন মহিলারা। হিজাব বা বোরখা কোনওটাই পরতে হত না তাঁদের। এমনকী, পড়াশোনা করা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চাকরি করা সবই করতেন তাঁরা।

আশঙ্কাটা তৈরি হচ্ছিল কয়েকদিন আগে থেকেই। আর সেই আশঙ্কাকে সত্যি করেই ২০ বছর পর রবিবার ফের আফগানিস্তানের দখল নিল তালিবানরা। সেখানকার বয়স্ক মহিলাদের মনে ২০ বছর আগের স্মৃতি এখনও তাজা। আর তাই তালিবানরা কাবুল দখল করার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের রাতের ঘুম উড়ে যেতে শুরু করেছে। কীভাবে এতদিনের অভ্যেসের সঙ্গে আপোশ করবেন তা বুঝতে পারছেন না অনেকেই। সেই আশঙ্কা থেকে দেশ ছেড়েছে একাধিক বাসিন্দা। এখনও অনেকে নিজের ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করে শুধু প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে অন্য দেশে পাড়ি দেওয়ার প্রহর গুণছেন। 

কিন্তু, কিছুদিন আগেও ছবিটা এই রকম ছিল না। রাস্তায় অবলীলায় ঘুরে বেড়াতেন মহিলারা। হিজাব বা বোরখা কোনওটাই পরতে হত না তাঁদের। এমনকী, পড়াশোনা করা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চাকরি করা সবই করতেন তাঁরা। তবে কয়েকদিন ধরেই একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছিল সেই ছবি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, রাস্তার পাশে থাকা মহিলাদের একটি পার্লারের বাইরে সাদা রং করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগেও খোলা ছিল সেই পার্লার। ভিড় করতেন মহিলারা। তার বাইরে মহিলাদের সাজগোজ করা মুখের ছবি লাগানো ছিল। রবিবার থেকেই বদলে যায় সেই ছবি। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় পার্লারে। সাদা রং দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় পার্লারের বাইরে ছবিতে থাকা মেয়েদের মুখ। আর এই ছবি ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হতাশ হয়েছেন নেটিজেনরা। এক নেটিজেন লেখেন, "এর মধ্যেই মেয়েদের অস্তিত্ব মুছতে শুরু করেছে!"

আরও পড়ুন- তালিবান শাসনে বোরখা কেনার ধুম এখন কাবুলে, অথচ একটা সময় সেখানে মিনি স্কার্ট পরে বাইরে বেরোত তরুণীর দল

যদিও তালিবানের দাবি, মেয়েদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাঁদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হবে না। বরং তালিবান শাসনে আরও অধিকার পাবেন মহিলারা। কিন্তু, বাস্তব ছবিটা একেবারেই উল্টো। রবিবার কাবুল তালিবানের দখলে চলে যাওয়ার পরই শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়েদের ছবি নষ্ট করে দেওয়া হয়। কোথাও যেন অঘোষিত ফতোয়া জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রাস্তাঘাটে যেন কোনও মেয়ের মুখ দেখতে পাওয়া না যায়। তা সে জীবন্ত হোক বা কাগজের ছবি।

আর এরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মহিলাদের চোখে-মুখে। কারণ এতদিন তাঁরা যে স্বাধীনভাবে থাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন তা যে এক ঝটকায় শেষ হয়ে যাবে তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। সেই ২০ বছর আগের স্মৃতি ফের ঘিরে ধরছে তাঁদের। ২০ বছর আগে তালিবানের জমানায় মহিলাদের কী অবস্থা হয়েছিল তা সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল। যেখানে মহিলাদের বোরখা পরা বাধ্যতামূলক। তাঁদের শরীরের কোনও অংশই যেন দেখতে পাওয়া না যায়। এমনকী, পায়ের পাতা দেখতে পেলেও শাস্তি দেওয়া হবে। রাস্তা একা বের হওয়া কোনওভাবেই যাবে না। সব সময় কোনও পুরুষ আত্মীয়ের সঙ্গেই বের হতে হবে। মেয়েদের পড়াশোনা-চাকরি নিষিদ্ধ। আর এগুলি না মানলেই তাঁদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হবে, নয়তো হাত-পা কেটে ফেলে দেওয়া হবে। অথবা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে ফাঁসি কাঠে।

আরও পড়ুন- 'কোথায় আহমদি' - তালিবানভূমি থেকে কীভাবে পালালেন আফগান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের গভর্নর, দেখুন

পুরোনো সেই স্মৃতি মনে করে আঁতকে উঠছেন বহু আফগান মহিলা। একজন জানিয়েছেন, "২০ বছর আগের দিনগুলি কতটা কঠিন ছিল তা আমার মনে আছে। আমি কাবুলে থাকতাম। আর দেখতাম বোরখা না পরে যদি কোনও মহিলা রাস্তায় বেরিয়েছে তাহলে তাকে কীভাবে মারধর করত তালিবানরা।"

এক মহিলা সাংবাদিক বলেন, "তালিবানদের ভয়ে এখনই সিঁটিয়ে রয়েছে মহিলারা। আমার বন্ধুরা যারা কাবুলে রয়েছে তারা জানিয়েছে যে কীভাবে তারা দৌড়ে দৌড়ে বাড়ি ফিরছে। আর রাস্তায় তাদের দেখে পুরুষরা চিৎকার করছে। বলছে যে মহিলাদের শাসন করার জন্যই তালিবানরা ফিরে এসেছে। এটা কতটা ভয়ের জিনিস।"

আরও পড়ুন- Afghanistan Crisis: তালিবানদের সমর্থন 'নয়', খোয়াতে হতে পারে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট

আরও এক মহিলা সাংবাদিক বলেছেন, "আমরা আমাদের সারাটা জীবন কষ্ট পেয়েছি আর এখন আরও বেশি কষ্ট পাব।"

টুইটারে একজন লিখেছেন, "আতঙ্কের সবে শুরু। আফগানিস্তানের মেয়েদের জন্য ভয় করছে।" মুখে মহিলাদের সমান অধিকারের কথা বললেও তা আদতে কতটা সত্যি হবে তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় রয়েছেন আফগানবাসীরা। কারণ গত মাস থেকেই এলাকা ধরে মেয়েদের নামের তালিকা চেয়েছে তালিবান। ১৫ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত সব মহিলার নামের তালিকা চেয়েছে তারা। সেই তালিকায় বিধবারাও রয়েছেন। তালিবান যোদ্ধাদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হবে তাঁদের। তবে বিয়ে শুধুমাত্র লোকদেখানো বিষয়, আসলে তাঁদের 'যৌনদাসী' বানিয়ে রাখা হবে। আর কোনও কিছু করতে অস্বীকার করলেই মিলবে শাস্তি। 


YouTube video player