রাজ্যে লাগামছাড়া কোভিড পরিস্থিতিই অভিষেকের এমপি কাপেরও ফাইনাল ইস্যুতে  মমতা ও অভিষেককে খোঁচা দিয়েছেন টুইটে অ্য়াডভোকেট বিশ্বনাথ গোস্বামী । এদিকে  নিয়মবিধি নিয়েও মমতার সরকারকে নিশানা করেছেন বিজেপি সহ বামেরাও। 

রাজ্যে লাগামছাড়া কোভিড পরিস্থিতির মধ্য়েই উৎসব উদযাপন, 'খেলা-মেলা' সবই। সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগণার ডায়মন্ডহারবারে রাজ্য়ে লাগামছাড়া কোভিডের মাঝেই এমপি কাপেরও (MP Cup)ফাইনাল হয়। আর তারপেরই অ্য়াডভোকেট বিশ্বনাথ গোস্বামী তৃণমূলের বাবুল সুপ্রিয়কে (Babul Supriyo) ট্যাগ করে মমতা ও অভিষেককে খোঁচা দিয়েছেন টুইটে। এদিকে সোমবার থেকে রাজ্যে আংশিক লকডাউন শুরু হয়েছে, নিয়মবিধি নিয়েও মমতার সরকারকে নিশানা করেছেন বিজেপি সহ বামেরাও। কিন্তু একদিকে যেমন রাজ্যে ভয়াবহ কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই ফুটবল ম্যাচ শেষে উত্তাল জমায়েত প্রকাশ্যে উঠে এসেছে, ঠিক তেমনই যোগী রাজ্যে শাহ-র মিছিলও বাদ পড়েনি লিস্টি থেকে। এখন কথা হচ্ছে শাসকদলকে বিরোধীরা না হয় তোপ দাগল কিংবা যোগীরাজ্যে নিশানা করল অবিজেপিরা, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আদৌ কি চুপ করে বসে থাকবে মহামারির নির্বাচনে সিংহাসনে থাকা ওমিক্রন (Omicron)।

Scroll to load tweet…

সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগণার ডায়মন্ডহারবারে রাজ্য়ে লাগামছাড়া কোভিডের মাঝেই এমপি কাপের ফাইনাল হয়। অভিষেকের উপস্থিতিতেই ফুটবল শেষে চলে জমিয়ে অনুষ্ঠান। আর এই পুরো ফুটবল ম্যাচ এবং ম্যাচ শেষে অনুষ্ঠানে প্রচুর মানুষ এসে জমায়েত করেন। কোভিডের বেলাগাম পরিস্থিতির মাঝেই সেদিনের অনুষ্ঠানে আসর জমান খ্যাতনামা শিল্পী সান সহ টলিউডের প্রচুর শিল্পীরা। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ উগরে দেন অ্য়াডভোকেট বিশ্বনাথ গোস্বামী সহ রাজ্যে বিরোধী শীর্ষ নের্তৃত্বরা। অ্য়াডভোকেট বিশ্বনাথ গোস্বামী রীতিমত খোঁচা দিয়ে তৃণমূলের বাবুল সুপ্রিয়কে ট্যাগ করে বলেছেন, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এবংমাননীয় সাংসদ অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের নির্দেশে এবং ব্যাক্তিগত বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কড়া কোভিড বিধি পালন করে মাস্ক ছাড়াই লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হয়। এবং খেলা শেষে তারস্বরে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে প্রায় রাত দেড়টা পর্যন্ত জলসায় চলে নাচগান হইগুল্লোর।' তিনি আরও বলেন, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এবার পার্কস্ট্রিটের পর এবার এমপি কাপ খেলতে গুটিগুটি পায়ে বাটানগরে। এবং সমগ্র দায়িত্বে রয়েছেন মাননীয় সাংসদ অভিষেক। তারপর 'করোনা তিন বছরের পুরোনো বিপজ্জনক' বলে অভিষেককে 'করিৎকর্মা বলে খোঁচা ওই অ্য়াডভোকেটের। 

Scroll to load tweet…

 তৃণমূলকে ট্যাগ করে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সুমন চৌধুরী তৃণমূলকে তোপ দেগে বলেছেন, 'পাঠশালা বন্ধ, পানশালা খোলা। মোচ্ছব আর গান মেলা। একুশে আইন জেতা সরকার তবে শুধু গর্জেই যাবে, খেলা হবে, খেলা হবে, খেলা হবে।'

আদৌ এই বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান কোভিড পরিস্থিতিতে কি যুক্তি সঙ্গত, এই প্রশ্নের উত্তরে জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক আধিকারিক কাজল কৃষ্ণ বনিক বলেন, কোভিড রুখতে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বিনোদনমূলক স্থান বা যাবতীয় অনুষ্ঠান এবং দর্শনীয় স্থানগুলি বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে সংক্রমণ অনেকাংশ রোধ সম্ভব হত। ডিসেম্বরের শুরুতেই যদি কনটেন্টমেন্ট চিহ্নিত করে ভাগ করে দেওয়া হত, তাহলে এত বড় পদক্ষেপ রাতারাতি নিতে হত না। তিনি আরও একবার মনে করিয়ে দেন তিনটি অন্যতম বিধি। সংক্রমণ রুখতে অন্যতম হল স্যানিটাইজেসন, মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। পাশাপাশি অবশ্যই ভ্যাকসিনেশন করানো। তবে এর পাশাপাশি গঙ্গাসাগর মেলা, বইমেলা নিয়ে এখনও পরিষ্কার কিছু জানানো হলে ভালো হত বলে মত প্রকাশ করেছেন। 

Scroll to load tweet…

Scroll to load tweet…

অপরদিকে নবান্ন নতুন বিধিনিষেধ জারি করতেই রাজ্য সরকারকে নিশানা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। রবিবার বিকেলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর থানার ফুলবাড়ি এলাকায় বিজেপির কিষান মোর্চার অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সেখানে গিয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'অনেক দেরি করে ফেলেছে নবান্ন। আরও আগে এই নিয়ে ভাবতে হত রাজ্যকে। সন্ধ্যে সাতটার পর লোকাল ট্রেন বন্ধ হলে অফিস কর্মীরা কী করে ফিরবেন তা মাথায় রাখতে হত সরকারকে। এক দিকে বলছেন অফিসে আসতে, আবার বলছেন ট্রেন চলবে না। এমনটা তো আর হতে পারে না। ২৫ ডিসেম্বর থেকে বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে যে ভিড় হয়, তার আঁচ পেয়ে আগেভাগে বেশ কিছু রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছিল। শুধু এই রাজ্য সরকার কোন ব্যবস্থা নেননি। এই ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে গেছে।'পাশপাশি পুরভোটের ইস্যুতে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি বানিয়ে তাঁদের মতামত নিয়ে নির্বাচন করা উচিত। কারণ ক্রমশ ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা বাড়ছে।' 

Scroll to load tweet…

এখানেই শেষ নয় কোভিড সংক্রমণ নিয়ে রাজ্য সরকারকে জোর তোপ দেগেছেন শমীক ভট্টাচার্যও। 'কোভিডের তৃতীয় ঢেউ' নাকি 'স্পনসর করেছে নবান্ন'। আর এবার তা 'দেখছে সারা বাংলা', বলে তোপ দাগেন বিজেপি মুখপাত্র। তবে শুধু বিজেপির শীর্ষ নের্তৃত্বই নয় তোপ দেগেছেন বামেরা। বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী টুইট করে বলেছেন, 'মুখ্যমন্ত্রী অনপ্রেরণায় বড়দিনের অনুষ্ঠান, পার্কের জমজমাটি ভিড় কিংবা গঙ্গাসাগরের জমাটি ভ্রমণের ফল হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে। খেলা-মেলা উৎসবের আতিশয্য়ে স্কুল লোকাল ট্রেন এসব না হয় বাদই গেল। তারপর শেষে আরও খোঁচা দিয়ে বলেন উন্নয়ন হচ্ছে বটে, কোনও প্রতিবাদ চলবে না কিন্তু।'

Scroll to load tweet…

কিন্তু ভয়াবহ কোভিড পরিস্থিতিতে রাজ্যে হয়ে চলা ক্রমাগত উৎসব, খেলা, এবং নিয়ম বিধির ইস্যুতে বিরোধীরা গর্জে উঠলেও অদ্ভুতভাবে সেই বিজেপির সরকারের যোগী রাজ্যে যেন তারই প্রতিফলন প্রকাশ্যে এসেছে। 'খেলা-মেলা' না হলেও একুশের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই প্রচার-মিটিং-মিছিলের পর যে কোভিড গ্রাফ ভয়ঙ্করভাবে তির্যক রুপ নিয়েছিল, তা আবার মনে করেচ্ছে বলে চাপানউতোর রাজনৈতিক মহলে। কারণ সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের বরেলিতে কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিশাশ বর্নাঢ্য মিছিল দেখতে পাওয়া যায়। আর এখানেই শেষ নয় আরও একটি দৃশ্যও উঠে এসেছে সংবাদ সংস্থা এএনআই-র ভিডিওতে। যেখানে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নের্তৃত্বে শান্তি মার্চ চলে পঞ্জাবে পাতিয়ালাতে। তাই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ কি ক্রমশই সমান হতে চলেছে, অবিজেপি রাজ্যগুলির মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও কী সমানভাবে ব্যাট চালাবে ওমিক্রন।

Scroll to load tweet…