সংক্ষিপ্ত
- এখানে বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে চলছে নাড়া পোড়ানো
- ফি-বছর শীতের মুখে দিল্লিতে ভয়াবহ দূষণের কারণ এই নাড়া পোড়ানো
- সেই দূষণের দুস্মৃতি ফিরে আসছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে
- কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার বদলে প্রশাসনের ভরসা শুধুই হ্য়ান্ডবিল
দিল্লির দূষণ থেকে কি কোনও শিক্ষাই নেবে না এ-রাজ্য়? পশ্চিম মেদিনীপুরে ফসলের নাড়া পোড়ানোর হিড়িকে এই প্রশ্নই এখন ঘুরেফিরে উঠে আসছে। পড়শি রাজ্য়ে ফসলের গোড়া বা নাড়া পোড়ানোয় শীতের মুখে ফি-বছর দূষণের শিকার হয় দেশের রাজধানী। গতবছর এই দূষণ ভয়াভয় হয়ে দেখা দিয়েছিল দিল্লিতে। বেশ কিছুদিনের জন্য় বন্ধ করে দিতে হয়েছিল স্কুল। রাজধানীর মানুষ মুখে মুখোশ পরেও রাস্তায় বেরোতে ভয় পেয়েছিলেন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন অনেকে। যাঁদের সামর্থ্য় ছিল, দূষণের হাত থেকে বাঁচতে তাঁরা গোয়ায় বেড়াতে চলে গিয়েছিলেন। কার্যত পরিবেশগত জরুরি অবস্থা বা এনভায়রনমেনটাল এমার্জেন্সি জারি করা হয়েছিল দেশের রাজধানীতে।
বলাই বাহুল্য়, ফি-বছর শীতের মুখে দিল্লিতে এই ভয়াভয় দূষণের কারণই হল পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মতো রাজ্য়ে ফসলের গোড়া বা নাড়া পোড়ানো। যদিও এই নাড়া পোড়ানো এখন আইনত নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। তবুও, গতবছর দিল্লির দূষণের সময়ে দেখা গিয়েছিল, পড়শি রাজ্য়ের বিভিন্ন জায়গায় আইন ভেঙেই চলছে নাড়া পোড়ানো।
এদিকে সম্প্রতি এই রাজ্য়েও শুরু হয়েছে নাড়া পোড়ানো। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে চলছে নাড়া পোড়ানো। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই হারে ফসলের গোড়া পোড়ানো হলে অচিরেই তার ফল ভুগতে হতে পারে আশপাশের শহরগুলোকে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, রাতে ফসলের গোড়া পুড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে চলে যাচ্ছেন কৃষকেরা। ভাবছেন, এক ঢিলে দুই পাখি মারা হল। একদিকে জমিকে চাষযোগ্য় করে তোলা হল। অন্য়দিকে পুড়ে যাওয়া ছাই সারের কাজ করা হল। এদিকে ধিকিধিকি ওই আগুন থেকে আশপাশের গাছ বা বাড়িতে আগুন লেগে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। যাতে করে রীতিমতো চিন্তিত প্রশাসন। কৃষি দফতর থেকে ইতিমধ্য়েই লিফলেট বিলি করে সচেতন করা শুরু হয়েছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, নাড়া পোড়ানোর ফলে শুধু দূষণই নয়, জমির উর্বরতা শক্তিও কমে যায়। ধীরে ধীরে তা বন্ধ্য়া হয়ে যায়।
সমস্য়ার মোকাবিলা করতে বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি দপ্তরের উদ্যোগে একটি স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ গিরি জানান "কৃষকদের দ্রুত সচেতন হতে বলা হচ্ছে। এই ধরনের কাজ করে তাঁরা লাভবান হবে বলে মনে করছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে উল্টে ক্ষতি হচ্ছে। তাই মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বৈঠক করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কৃষকদের সচেতন করতে বিশেষভাবে লিফলেট বিলি করা হবে। জমিতে থাকা নাড়া বা খড়কে না পুড়িয়ে বিকল্প উপায়ে তা ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হবে।"
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সমস্য়ার মোকাবিলা করা উচিত প্রশাসনের, প্রয়োজনে পুলিশকে কড়া হতে বলে অবিলম্বে নাড়া পোডা়নো বন্ধ করানো উচিত, সেখানে শুধু হ্য়ান্ডবিল বিলি করে আর শিবির করে কৃষকদের সচেতন করে কতটা কাজের কাজ হবে।