সংক্ষিপ্ত
- ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে সাবর্ণ চৌধুরী পরিবার ছিল কলকাতার জমিদার
- ইব্রাহিম খাঁর আমন্ত্রণে জব চার্নক ফিরে আসেন কলকাতায়
- অনেকেই মনে করেন চার্ণক আসার আগেই কলকাতার অস্তিত্ব ছিল
- কলকাতার জন্ম তারিখ নিয়েই এক মামলা করে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাশিমবাজারের একটি কুঠিতে বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলন তথাকথিত কলকাতার জনক জব চার্ণক৷ সে সময় হুগলিতে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে তিনি চলে গিয়ছিলেন পাটনায়। পাটনায় বহুদিন কুঠির অধ্যক্ষ হিসেবে চাকরি করেছিলেন তিনি। তবে নানান টাকা পয়সা ও বহু অসঙ্গতিতেও নাম জড়ায় তাঁর। সেই কারনে পাটনা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। ফেল আবার ফিরে আসেন কলকাতাতেই। এখানে ফিরে এসে তিনি নিয়োজিত হন বাংলার এজেন্ট হিসেবে। তৎকালীন কলকাতার সুবেদার ছিলেন শায়েস্তা খাঁ৷ সেই সময় হুগলি নদীর পূর্ব পাড়ের এক নিরিবিলি জায়গা বসবাসের জন্য খুঁজে নেন৷ সুতানুটিতে সেই প্রথম পদার্পণ করেন জব চার্কণ৷
এদিকে ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে সাবর্ণ চৌধুরী পরিবার ছিল কলকাতার জমিদার। ১৬৯৮ সালের ১০ নভেম্বর সুতানুটি, কলিকাতা ও গোবিন্দপুর গ্রাম তিনটির সত্ত্ব সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের থেকে ইজারা নেয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সেই সময় ১৬৯০ সালের ২৩ এপ্রিল এক আদেশনামায় আওরাঙ্গজেব বার্ষিক তিন হাজার টাকা শুল্কের বিনিময়ে ইংরেজদের বাংলায় বাণিজ্যের অনুমতি দিলেন। ইব্রাহিম খাঁর আমন্ত্রণে জব চার্নক ফিরে আসেন কলকাতায়। ২৪ আগস্টই চার্ণক প্রথমবার পা রেখেছিলেন এমনটা কিন্তু নয়৷ ইতিহাসবিদরা সাল তারিখ মিলিয়ে দেখছেন চার্ণকের তৃতীয়বার সুতানুটিতে আসার দিন ছিল ২৪ অগাস্ট দিনটি৷ আর এই দিনটি নিয়েই অর্থাৎ কলকাতার জন্মদিন নিয়ে রয়েছে বেশ ধোঁয়াশা৷
অনেকেই মনে করেন চার্ণক আসার আগেই কলকাতার অস্তিত্ব ছিল৷ তবে সেই সময়ের কলকাতার কোনও নির্দিষ্ট জন্মদিন স্থির করতে পারেননি ইতিহাসবিদরা৷ বিপ্রদাস পিপ্লাইয়ে মনসামঙ্গল কাব্যে প্রক্ষিপ্ত অংশে ছিল কলকাতার উল্লেখ। কলকাতার জন্ম তারিখ নিয়েই এক মামলা করে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ৷ সেই মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্ট এক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন৷ তাঁদের মত অনুসারেই সেই মামলার রায়ে জানানো হয় যে, কলকাতার কোনও নির্দিষ্ট জন্মদিন নেই, কোনও প্রতিষ্ঠাতাও নেই৷
সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্য পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায় যিনি পাঁচু শক্তিখান নামেও পরিচিত, পঞ্চদশ শতাব্দীতে মুঘল সাম্রাজ্যের পাঠান বাহিনীতে অশ্বারোহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। বীরত্বের জন্য তিনি‘খান’উপাধি লাভ করেন। হালিশহর থেকেই এই পরিবার পরবর্তীকালে উত্তরপাড়া, বিরাটি ও বড়িশা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন। ২০০১ সালে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় দাবি করা হয় যে, জব চার্নক সত্যই কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হোক। হাইকোর্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০০৩ সালের ১৬ মে রায় দেন যে, জব চার্নক কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা নন এবং ২৪ অগস্ট কলকাতার জন্মদিনও নয়। তবুও জব চার্ণকের সুতানুটিত তথা কলকাতায় পদার্পণের দিন হিসেবে ২৪ আগস্টকেই কলকাতার জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়৷