সংক্ষিপ্ত

  • অনেকেই বলছেন বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছি।
  • বিশেষত সুন্দরবনের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে বলছেন, এবারটা সেবারের মতো নয়।
  • ফণী আয়লার মতো সাংঘাতিক দৈত্য নয়।

ক্রমে ফরসা হচ্ছে কলকাতার আকাশ। দুরাশা কাটিয়ে পথে নামছে কলকাতাবাসী।  ওড়িশায় দাপালেও পশ্চিমবঙ্গের খুব বড় ক্ষতি করতে পারেনি ফণী। খড়্গপুরে দুই ঘণ্টা জুড়ে চলা ঝড়ে বেশ কিছু বাড়়ি তছনছ হয়েছে। তবে অনেকেই বলছেন বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছি। বিশেষত সুন্দরবনের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে বলছেন, এবারটা সেবারের মতো নয়। ফণী আয়লার মতো সাংঘাতিক দৈত্য নয়।

ফিরে দেখা আয়লার বীভৎসতা

ভারতে আয়লার প্রকোপে অন্তত ১৪৯ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে দু'জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং বাকি শতাধিক ব্যক্তি অতিবৃষ্টিজনিত বন্যায় আক্রান্ত হয়ে নিহত হন। প্রবল ঝড়ে সমস্ত অঞ্চল জুড়ে গাছ উপড়ে পড়ায় রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আটটি গ্রামের ১৫,০০০-এরও বেশি মানুষ প্রবল বন্যায় ত্রাণ সরবরাহ প্রকল্প থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ঝড়ের দাপটে কলকাতা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে জনজীবন কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়।পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, কলকাতা এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে আয়লার প্রভাবে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হন। অন্তত ১০০টি নদীবাঁধ ঝড়ের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সারা দেশে ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা ১,৫০,০০০-এর কাছাকাছি দাঁড়ায়। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং-এ প্রবল বর্ষণে পাহাড়ে ধস নামায় ৬ জন নিখোঁজ এবং ২২ জন নিহত হন। ওই অঞ্চলে অন্তত ৫০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ন্যূনতম ৫০,০০০ হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতির শিকার হয়, যার নির্ধারিত মূল্য ১২৫ কোটি টাকা। সারা রাজ্যে মোট ৪০,০০০ বাড়ি ধ্বংস হয় এবং এছাড়া ১,৩২,০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্তত ৩,৫০,০০০ মানুষ আয়লার দাপটে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন।পরবর্তীকালে প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে ১,৭৫,০০০ বাড়ি ধ্বংস হওয়ার ফলে ও ২,৭০,০০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে ২৩,০০,০০০-এরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।

বাংলাদেশ আয়লা

বাংলাদেশের আয়ালা আছড়ে পড়েছিল খুলনা, পটুয়াখালি, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায়। সেই বার এক ধাক্কায় খুলনা ও সাতক্ষীরায় ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়। খুলনার দাকোপ ও কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন লোনা জলে তলিয়ে যায়। ৭৬ কিলোমিটার বাঁধ পুরোপুরি এবং ৩৬২ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ভাবে ধ্বসে পড়ে।

ঘূর্ণিঝড়ের এক বছর পর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদ বলা হয়ঃ

১ প্রায় ২,০০,০০০ একর কৃষিজমি নোনা জলে তলিয়ে যায়।
২  কাজ হারায় ৭৩,০০০ কৃষক ও কৃষি-মজুর
৩  আক্রান্ত এলাকাগুলোয় পানীয় জলের উৎস সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।
৪ জলোচ্ছাস ও লোনা জলের প্রভাবে, গবাদি পশুর মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ গরু ও ১,৫০০ ছাগল মারা যায়।
৫ ঘূর্ণিঝড়ের কয়েক মাস পর থেকে এলাকাগুলোয় গাছপালা মরতে শুরু করে।
৬ কমপক্ষে ৩,০০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।
৭ খুলনা ও সাতক্ষীরায় প্রাণ হারান ১৯৩ জন মানুষ।


ওড়িশায় ফণীর তেজ

তবে কলকাতার ভয়ানক ক্ষতি না হলেও ওড়িশাকে লণ্ডভন্ড করেছে ফণী। প্রাণ গিয়েছে ৮ জনের। পুরী, পারাদ্বীপ, জাজপুর, কটক যেখানেই গিয়েছে এই সাইক্লোন ছাপ ছেড়ে গিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।   উপকূলবর্তী এই রাজ্য সাইক্লোনের সঙ্গে পরিচিত হলেও এই মহাপ্রলয় বারবার মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছে কুড়ি বছর আগের সেই বিভীষিকাময় দিন।  ১৯৯৯ এর সুপারসাইক্লোনের পরে এতবড় প্রলয় দেখেনি ওড়িশা। সেবার অবশ্য তছনছ হয়েছিল আরও বেশি। কেননা ঝড়ের গতিবেগ ছিল ২৭০-৩০০ কিলোমিটার।  প্রাণ গিয়েছিল ১০ হাজার মানুষের। এবার ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কম। প্রাণ গিয়েছে আটজন মানুষের।

কলকাতাকে নিস্কৃতি দিয়েছে ফণী। ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকা হিঙ্গলগঞ্জ , কুলতলী, গোসাবা বাসন্তীর মানুষরা আজও ভুলতে পারেননি দশ বছর আগের স্মৃতি। বিপন্মুক্ত মানুষ নিজেদের মধ্যে হাসিমস্করা করে বলছেন 'ফণী ফ্লপ'। হাসির মধ্যে চিকচিক করছে চোখের কোণে নোনাজল। সেই জলেই তলিয়ে গিয়েছিল ভিটেমাটি সর্বস্ব।