সংক্ষিপ্ত
- নেতাজি ইন্ডোরে দলের ছাত্র যুব সংগঠনের কর্মশালায় মুখ্যমন্ত্রী
- নিজের কলেজ জীবনের গল্প শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী
- ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হতে হবে দলের পরবর্তী প্রজন্মকে, মন্তব্য মমতার
দলের ছাত্র যুব সংগঠনের কর্মশালায় ভাষণ দিতে গিয়ে নিজের কলেজ জীবনের গল্প শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাত্র রাজনীতির মধ্যে দিয়েই যে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি, সেকথাই মনে করাতে গিয়েই কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন মমতা। এর পর একের পর এক গল্প উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। কলেজের প্রিন্সিপালকে ঘেরাও করা থেকে শুরু করে সিপিএম-এর গুন্ডার কলার টেনে ধরা, ছাত্র রাজনীতি করার সময় নানা ঘটনার গল্প শুনিয়ে নেতাজি ইন্ডোর মাতিয়ে দিলেন তৃণমূলনেত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁদের সময়ে কলেজ রাজনীতিতেও যেভাবে নিয়মিত সংঘর্ষ, অশান্তি হতো, সেই তুলনায় এখন প্রায় কিছুই হয় না। পুরনো কথা মনে করিয়ে মমতা বলেন, কলেজ জীবনে তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে কেউ লড়াইয়ের জন্য দাঁড়াতই না। মুখ্য়মন্ত্রীর কথায়, 'এমন নয় যে দাঁড়াতে দিতাম না। ভালবেসেই দাঁড়াত না। কারণ জানত যে দাঁড়ালেই হারবে।' এর পরেই মমতা মনে করিয়ে দেন, কীভাবে মনোনয়ন নিয়ে গন্ডগোল চলাকালীন গাছতলাতেও প্রিন্সিপালকে ঘেরাও করে রেখেছিলেন। এই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে অবশ্য মমতা বলেন, 'আপনারা শুনলে হয়তো বলবেন এটা ঠিক হয়নি। কিন্তু এটাও আমরা করেছিলাম।'
কলেজ জীবনের রাজনীতির কথা মনে করতে গিয়ে বার বারই তাঁর সেই সময়ের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গী সুব্রত বক্সির কথা উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। মমতা বলেন, 'এখন তো কলেজে ছোট একটা গন্ডগোল হলেই টিভি-তে এমনভাবে দেখায় যেন গোটা দেশটার সর্বনাশ হয়ে গেল। কিন্তু আমাদের সময় প্রতিদিনই মারপিট হতো। ভবানীপুর থানার লোকেরা জানে এই আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের কী করতে হয়েছে।'
এই প্রসঙ্গেই পুরনো আরও একটি ঘটনার উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথা অনুযায়ী, আশুতোষ কলেজের নির্বাচনের সময় একবার তাঁর সামনে দিয়েই ছাত্র পরিষদের দু' জন সদস্যকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল সিপিএম-এর গুন্ডারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা অনুযায়ী সেই মুহূর্তে তাঁর সঙ্গে ছিলেন বর্তমানে কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অশোকা মণ্ডল। মমতা বলেন, 'হঠাৎ দেখি একটা ট্যাক্সিতে সিপিএম-এর বড় বড় গুন্ডা আমাদের দুটো ছেলেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। দেখেই আমি একজনের কলার টেনে ধরলাম, আর অশোকা দুমদাম ঘুষি মারল। এইভাবে আমরা সেদিন ওদের ছাড়িয়েছিলাম।'
মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী এর পরেই বন্দুক নিয়ে তাঁকে তাড়া করে সিপিএমের গুন্ডারা। শেষ পর্যন্ত ভবানীপুরে বিজলি সিনেমার উল্টোদিকে একটি দোকানের ভিতরে আশ্রয় নিয়ে কোনওক্রমে বাঁচেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'নাহলে সেদিনই ওরা আমাকে মেরে ফেলত।' কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'সিপিএমের সেই হার্মাদরা আজ সব বড় বড় বিজেপি হয়েছে। এদের থেকে নাকি আমার রাজনীতি শিখতে হবে।' মুখ্যমন্ত্রীর মুখে তাঁর কলেজ জীবনের এই সমস্ত গল্প শুনেই হাততালিতে ফেটে পড়েছে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম।
এরকমই আরও অনেক গল্প এ দিন শুনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যেমন বেহালার পৈলানে সিপিএম-এর বাহিনীকে ফাঁকি দিতে বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক সোনালি গুহর সঙ্গে শাড়ি অদল বদল করে নিয়েছিলেন তিনি। আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে ভোরবেলা কলকাতা বিমানবন্দরে ফারুক আবদুল্লাহকে আটকাতে যেতে গিয়ে গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনার কথাও উঠে এসেছে মমতার মুখে। প্রায় চার দশকের পুরনো সেই ঘটনা মনে করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'সেদিন বক্সিদা ভাবছিল আমি মরে গিয়েছি আর আমি ভাবছি বক্সিদা মরে গিয়েছে। কিন্তু রাখে কৃষ্ণ মারে কে!'