সংক্ষিপ্ত

'বাংলার মানুষ জোর গলায় কোনওদিনই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্য লড়াই করেনি। যদি করত তাহলে তো সংসদে বাংলার যত সাংসদ রয়েছেন তাঁরা কেন এতদিনে মিলিতভাবে এই দাবি পেশ করতে পারলেন না! নেতাজির মূর্তি বসানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর ঘোষণার পিছনে রয়েছে জেনারেল জিডি বক্সির তৎপরতা এবং উদ্যোগ। '

ইন্ডিয়া গেটের কাছে রাজপথে অবশেষে বসছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি। রাজপথে যে ক্যানোপিতে পঞ্চম জর্জের মূর্তি ছিল এবং তা সরিয়ে দেওয়া হয়, সেখানেই এই মূর্তি বসছে।  এমনটাই জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানিয়েছেন যে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি যেমন হচ্ছে তেমনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-রও জন্মদিন ১২৫ বছরে পড়ছে। সেই জন্য রাজপথে বসানো হচ্ছে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি। এই নিয়ে নেতাজি গবেষক অনুজ ধরের সঙ্গে কথা বলেছেন  এশিয়ানেট নিউজ বাংলার এডিটর দেবজ্যোতি চক্রবর্তী। 

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, এডিটর, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- নরেন্দ্র মোদী যেভাবে রাজপথে নেতাজির মূর্তি স্থাপনের কথা ঘোষণা করলেন তাকে কীভাবে দেখছেন? 

অনুজ ধর, নেতাজি গবেষক- আপনারা সকলেই জানেন আমাদের মতো কিছু মানুষ বেশ কিছু বছর ধরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-কে প্রকৃত রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান এবং মৃত্যু রহস্যের যবনিকা টানতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন মহলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-কে নিয়ে তথ্য মেলে ধরা থেকে শুরু করে কীভাবে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক নম্বর মানুষটির প্রাপ্য সম্মানকে সরকারি স্তরে স্বীকার করানো যায় তা নিয়ে কাজ করে চলেছি আমরা। জেনারেল জি ডি বক্সি-র মতো মানুষরা এগিয়ে এসেছেন। তাঁরাও রাজপথে ফাঁকা ক্যানোপি-তে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি স্থাপনের প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদী রাজপথে ইন্ডিয়া গেটের কাছে এই ক্যানোপি-তে নেতাজি-র মূর্তি স্থাপনের কথা ঘোষণা করেছেন তা এককথায় একটা বিশাল পদক্ষেপ। 

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, এডিটর, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- স্বাধীনতার পর থেকে অনেকগুলো সরকার এসেছে, কিন্তু কেউ তো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মতো ঘোষণা করতে পারেনি। কী বলবেন? 

অনুজ ধর, নেতাজি গবেষক- যে ফাঁকা ক্যানোপি-তে নেতাজির মূর্তি বসছে সেখানে আগে ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জজের মূর্তি ছিল। স্বাধীনতার পরও দেশের সরকারের ক্ষমতা হয়নি ওই মূর্তি-কে ওখান থেকে সরিয়ে ফেলার। শেষমেশ গণরোষের আশঙ্কায় ১৯৬৮ সালে ওই মূর্তি সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর থেকে ক্যানোপি ফাঁকাই পড়েছিল। গান্ধীবাদীরা ওখানে জাতির জনকের মূর্তি স্থাপনের জন্য সমানে তদ্বির করে আসছিলেন। কিন্তু, নেতাজির প্রতি অনুরক্ত কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং দেশবাসীর ভালোবাসা গান্ধীবাদীদের কাছে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, দিল্লির রাজপথ এমন এক স্থান যেখানে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ হয়। রাজপথের এক প্রান্তে ইন্ডিয়া গেট-এর মতো এক ঐতিহ্যশালী স্থান। কাছেই ওয়ার মেমোরিয়াল। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ১ নম্বর ব্যক্তি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি স্থাপনের জন্য এত থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান আর কোথাও হতে পারে না। দিল্লির রাজপথে ক্যানোপি-তে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের মূর্তি প্রতিস্থাপন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর দ্বারা এটাও প্রমাণিত হল যে দেশের সরকার স্বীকার করে নিচ্ছে যে নেতাজি  স্বাধীন ভারতের এক নম্বর ব্যক্তি। গান্ধীবাদীদের কাছে এটা বলতে গেলে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে লাগার মতো। এমনকী বাংলার বুকেও এমন কিছু মানুষ রয়েছেন যারা হয়তো নেতাজির জন্য এই সম্মানকে আজ সহ্য করতে পারবেন না। কারণ, এই সব মানুষের দল-ই একদিন নেতাজিকে 'তোজোর কুকুর' বলে সম্বোধন করেছিলেন। 

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, এডিটর, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-  দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। কিন্তু স্বাধীনতার পর তেমন কোনও প্রচেষ্টা নেতাজির জন্য ধরা পড়েনি যাতে তাঁর এই ঐতিহাসিক আহ্বানকে স্মরণিয় করে রাখা যায়। আপনার কী মনে হয়? 

অনুজ ধর, নেতাজি গবেষক-  বাংলার মানুষ জোর গলায় কোনওদিনই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্য লড়াই করেনি। যদি করত তাহলে তো সংসদে বাংলার যত সাংসদ রয়েছেন তাঁরা কেন এতদিনে মিলিতভাবে এই দাবি পেশ করতে পারলেন না! নেতাজির মূর্তি বসানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর ঘোষণার পিছনে রয়েছে জেনারেল জিডি বক্সির তৎপরতা এবং উদ্যোগ। এই উদ্যোগ বা তৎপরতা কেন বাংলার মানুষ স্বাধীনতার পর থেকে দেখাতে পারল না ? সেকথা একবারও কি কেউ ভেবেছে! স্বাধীনতার পর থেকে বাংলার বুক থেকে নেতাজি-র প্রভাবকে শেষ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বাংলাবাসীর ভালোমতো ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে দশকের পর দশক। যার ফলে নেতাজিকে নিয়ে বাংলার মানুষের আবেগ থাকলেও তা কোনও দিনই দানা বাঁধতে পারেনি। দেশের এমন কিছু ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যাদের সম্পর্কে যে কোনও রাজ্যের মানুষের প্রবল শ্রদ্ধা রয়েছে। আজ মহারাষ্ট্রের মানুষ যে মাত্রায় শিবাজীমহারাজকে নিয়ে আবেগের প্রকাশ ঘটাতে পারবেন তা আপনার-আমার পক্ষে দেখানো সম্ভব নয়, আমরা যতই শিবাজীমহারাজকে শ্রদ্ধাভরে প্রণাম করি না কেন যে কোনও মহারাষ্ট্রবাসীর থেকে তাতে কমতি থেকেই যাবে। নেতাজিকে নিয়ে এই আবেগ বাংলা দেখাতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা একটিও রেজলিওশন পাস হয়নি যেখানে নেতাজির প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় সম্মানের জন্য ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ডাক দেওয়া হয়েছে। বাংলার বুকে নেতাজিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য হয়। আজ পঞ্জাবের বুকে কেউ ভগৎ সিং-কে নিয়ে এমন অশ্রদ্ধা প্রকাশ করার সাহস দেখাতে পারে না। নেতাজি, ভগৎ সিং-এরা দেশবরেণ্য। বাংলার বুক থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। দেশের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা সংগ্রামীর জন্ম দিয়েছে বাংলা। এই ভূমি থেকে পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনে সবচেয়ে বেশি মানুষ শহিদ হয়েছেন। অথচ, নেতাজির জন্য বাংলা কোনওদিন ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে পারল না। একবারের জন্য  গান্ধীবাদীদের মুখের উপর গিয়ে বাংলার মানুষ বলতে পারলো না স্বাধীনতা সংগ্রামের ১ নম্বর মানুষটির নাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।  

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, এডিটর, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- দিল্লি-তে বসবাস করলেও কলকাতা-বাংলার আপনার হৃদয়ের খুব কাছে, এমন দিনে কলকাতা এবং নেতাজিকে নিয়ে তপ্ত আলোচনা মিস করছেন? 

অনুজ ধর, নেতাজি গবেষক-  ২২ তারিখেই কলকাতায় আমার স্পিচ দেওয়ার কথা ছিল নেতাজিকে নিয়ে। কোভিড ১৯-এর জন্য সে সব বাতিল হয়ে গিয়েছে। ২১ তারিখ সন্ধ্যাতেই ফ্লাইট ছিল কলকাতার জন্য। এখন সব বাতিল করতে হয়েছে। শীতের এই সময়টা কলকাতায় থাকা এবং নেতাজি নিয়ে কথা বলাটা খুবই মিস করছি। কিন্তু, একটা জিনিস আজ বলতে চাই আমরা যে বাঙালি গর্ববোধের কথা বলি সেটা কি শুধুই রসগোল্লা খাওয়ায়, নেতাজির জন্য কি একটাফোঁটা গর্ববোধ বাংলার মানুষের নেই! মাঝে মাঝে এই প্রশ্ন সত্যি সত্যি চলে আসে সামনে। কারণ, বাংলা যদি মনে করে নেতাজি তাঁদের কাছে গর্বের তাহলে স্বাধীনতার পর থেকে যে নাটকবাজী চলেছে তার বিরোধিতা বাঙালিরা করতে পারেনি? 

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, এডিটর, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- আপনি আওয়াজ তোলার কথা বলছেন, কিন্তু নেতাজির তৈরি করা পার্টি ফরওয়ার্ড ব্লক-ই তো সেভাবে গলা দিয়ে আওয়াজ বের করতে পারলো না কোনওদিন! 

অনুজ ধর, নেতাজি গবেষক-   স্বাধীনতার পর থেকেই কংগ্রেসের তৎকালীন নেতৃত্বের পরিকল্পিত পদক্ষেপে বাংলা থেকে নেতাজির প্রভাবকে নিস্ক্রিয় করা হয়েছিল। বিধানচন্দ্র রায় এই কাজ করেছিলেন। পরবর্তীকালে বাকি কংগ্রেস নেতা থেকে শুরু করে লাল পার্টির নেতারাও এটা করে গিয়েছেন। বোঝাই যায় বেশ ভালো করেই নেতাজির বিরোধিতায় বাংলায় ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছিল। আমি গবেষণার কাজে কংগ্রেস থেকে শুরু করে লাল পার্টি -সকল নেতাদের সঙ্গেই কথা বলেছি। তথ্য ঘেঁটে দেখেছি। ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গেও কথা হয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লক নিয়ে নেতাজি বেশিকিছু করতে পারেননি। এই পার্টিটা একটা আকার নেওয়ার আগেই নেতাজি দেশ ছাড়েন। এরপর ফরওয়ার্ড ব্লক ছিল কার্যত একটা অনাথ শিশু। তারমধ্যে এর নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ দমন-পীড়ন মাত্রারিক্তভাবে বেড়ে গিয়েছিল কংগ্রেস নেতাদের জন্য। পরবর্তী সময়ে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতাজিকে নিয়ে বহু আওয়াজ তুলেছে। মুখার্জি কমিশনও ফরওয়ার্ড ব্লকের চাপে পড়ে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা ছিল ফরওয়ার্ড ব্লক বামদের শরিক। ফলে বাম শিবিরের অধিকাংশ দলেরই নেতাজিকে নিয়ে অ্যালার্জি ছিল। শরিকদের নেতাজির প্রতি এই বিরূপ মনোভাব ফরওয়ার্ড ব্লককেও সেভাবে এগোতে দেয়নি। 

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, এডিটর, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-  মমতা না মোদী- নেতাজি নিয়ে কারা সবচেয়ে বেশি রাজনীতি করছেন এই সময়ে? 

অনুজ ধর, নেতাজি গবেষক-  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা নরেন্দ্র মোদী নেতাজি এরা যে এই সময়ে বেশি করে কথা বলছেন- এই ধরনের তথ্য ঠিক নয়। কারণ নেতাজির জন্য ১৯৯৭ সাল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানা সময়ে সরব হয়েছেন। আমার গবেষণাপত্রে সে সব তথ্যও তুলে ধরেছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতাজি যখন থেকে কথা বলছেন তখন তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন না। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় মোদী বরং নেতাজিকে অনেক বেশি কথা বলতেন। নেতাজির আদর্শকে সামনে রেখে তিনি বারোদা-তে একটি মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। এই মূর্তি বারোদার এর অন্যতম পবিত্র স্থান। নেতাজিকে নিয়ে মোদীর আবেগ বহু পুরনো। একটা জিনিস বারবার দেখা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদী যখনই নেতাজিকে নিয়ে কথা বলতে যান তখনই একদল রাজনৈতিক মানুষ তেড়ে আসেন রাজনীতি হচ্ছে এই ধুয়ো তুলে। তাহলে এখন যে নেতাজি মূর্তি স্থাপনের কথা প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করছেন তখন তো বাংলায় কোনও নির্বাচনই নেই। এগুলো আসলে রাজনৈতিক তরজা। এর কোনও ভিত্তি নেই। 

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, এডিটর, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-  নেতাজি-কে রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর পিছনে আপনার হাতও রয়েছে! এমন কথাও শোনা যায়। কী বলবেন? 

অনুজ ধর, নেতাজি গবেষক- এমন কথা প্রচুর মানুষ বলেছেন। আমার মুখের উপরও বলেছেন যে আমরা নাকি নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি করছে। এই ধরনের অভিযোগে আমার কিছু যায় আসে না। এটা আমার কাছে প্রশংসা। আজ নেতাজি ইস্যুকে যদি রাজনীতির আঙিনায় না আনা যেত তাহলে নিশ্চিতভাবে দেবজ্যোতি এই মুহূর্তে আপনার সঙ্গে বসে আমি এই নিয়ে কথাই বলতাম না। এই রাজনীতির জন্য যদি নেতাজিকে তাঁর প্রাপ্ত সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া যায় তার থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। তৃণমূল কংগ্রেস আজ থেকে দুই বছর আগেও মহাত্মা গান্ধীর ছবি লাগিয়ে ট্যাবলো নিয়ে ছুটেছে প্রজাতন্ত্র দিবসে। এখন আবার নেতাজিকে নিয়ে ট্যাবলো বানাচ্ছে। আমি এই নিয়ে আর কিছু বলবো না। তবে এই প্রসঙ্গে একটাই কথা বলতে চাই মোদীজির নেতাজি মূর্তি স্থাপনের ঘোষণা খুব ভালো খবর। আবার তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের নেতাজির ট্যাবলো বানানোটাও ভালো খবর। আমাদের দুহাতেই তো এখন লাড্ডু। সুতরাং, আমার মতো মানুষরা এখন আনন্দে। কারণ প্রত্যেকেই নেতাজিকে সম্মান করছেন। 

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, এডিটর, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন প্রকাশ্যে এসে বলছেন বিমান দূর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি, এই নিয়ে পরিস্কার অবস্থান সরকারের দেখানো উচিত। কী বলবেন? 

অনুজ ধর, নেতাজি গবেষক-  এটা খুবই ভালো বিষয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতদিন বাদে হলেও প্রকাশ্যে এসে বলছেন যে নেতাজির মৃত্যু বিমান দুর্ঘটনায় হয়নি। গান্ধীবাদীদের মুখের উপরে এটা একটা কড়া থাপ্পড়। বিশেষ করে সুগত বসু-র মতো মানুষদের মুখের উপরে এটা কড়া জবাব। আমরাও সমানে বলে আসছি নেতাজির মৃত্যু বিমান দুর্ঘটনায় হয়নি। গুমনামি বাবার সঙ্গে নেতাজির যে যোগ রয়েছে সেটাও তুলে ধরেছি আমরা। সৃজিত মুখোপাধ্যায় আবার গুমনামিবাবাকে নিয়ে আমাদের তথ্যের উপরে সিনেমা করেছেন। লোকে যেমন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, তেমনি আমরাও বলি যে আমরা নেতাজির এজেন্ট। আমরা সব মহলের লোকেদের থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নেতাজিকে নিয়ে লবিং করি। তাদের বোঝাই আমাদের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য। প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই নেতাজির প্রতি অনুরক্ত মানুষ রয়েছেন। আমদের এই মুহূর্তে মূল লক্ষ্য নেতাজির মৃত্যু রহস্যকে বিমান দূর্ঘটনার মোড়কে না বেঁধে আরও পরিস্কার করে সামনে আনা। আমাদের এই প্রচেষ্টা থামাতে কম আঘাত করা হয়নি। কখনও বলা হয় জেএনইউ-এর অমূক অধ্যাপক নেতাজি নিয়ে অমুক তথ্য খাড়া করেছেন। আবার কখনও বলা বয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুক অধ্যাপক অমুক তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এসব লোকেদের আমি চিনি। এরা দিনের শেষে ইউকে-র ভিসা পাওয়ার জন্য লম্বালাইন দিয়ে থাকেন। এদের কথাকে আমি আমল দেই না। 

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, এডিটর, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- মহাত্মা গান্ধী ও নেহরুর ব্রিগেড না নেতাজি- দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য কে সবচেয়ে এগিয়ে? 

অনুজ ধর, নেতাজি গবেষক- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শুরু হয়েছিল নেতাজি তখন চেন্নাই-এর মেরিনা বিচে ছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো ব্রিটিশদের প্রতি সহানুভূতি দেখালে হবে না। কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারত ব্রিটিশদের পাশে দাঁড়ালেও তাঁরা আমাদের জালানিওয়ালাবাগের মতো নৃশংসতা উপহার দিয়েছে। সুতরাং ব্রিটিশের দূর্বলতাকে আমাদের হাতিয়ার বানাতে হবে বলে ডাক দিয়েছিলেন নেতাজি। পরিণামে কি হয়েছিল! মহাত্মা গান্ধীদের ব্রিটিশের কাছে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য সমর্থন দেওয়ার পর নেতাজির গৃহবন্দিদশা শুরু হয়েছিল। এই অবস্থায় নেতাজি যখন দেশ ছাড়লেন এবং জার্মানি থেকে রেডিও-তে ভাষণ দিলেন তখন তড়িঘড়ি কংগ্রেস নেতা ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিলেন। সেই আন্দোলনের তো কোনও ফল বের হয়নি। উল্টে গান্ধী, নেহরুদের পাল্লায় পড়ে বহু সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান। পরবর্তীকালে এই ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে দেখানো হয়। অথচ এটা ভুল। খোদ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি তাঁর রায়ে সুভাষচন্দ্র বসু-কেই ভারতের স্বাধীনতার প্রধান চরিত্র বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। সেখানে গান্ধী বা নেহরুদের নাম তিনি নেননি। এরপরও কীভাবে প্রমাণ লাগে যে নেতাজি-র অবদান-ই দেশকে স্বাধীনতা পেতে সাহায্য করেছিল। সুতরাং স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের এক নম্বর মানুষ নেতাজি ছাড়া আর কেউ হতে পারেন না। 

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, এডিটর, এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-  নেতাজিকে নিয়েও কি মিডিয়ার কোনও ধরি মাছ না ছুঁই পানি-র মতো কোনও অবস্থান রয়েছে? 

অনুজ ধর, নেতাজি গবেষক- অবশ্যই। বাংলার মিডিয়া তো নেতাজিকে নিয়ে সেভাবে কোনও সক্রিয় থাকার প্রমাণ দেইনি। আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে, দ্য টেলিগ্রাফে হয়তো দেখবো শনিবার প্রথম পাতা জুড়ে শুধুই অমর জওয়ান জ্যোতি বিতর্কের খবর। নেতাজি হয়তো সেখানে খুব ক্ষুদ্র স্থান পাবে। বাংলার বুকে যদি নেতাজিকে নিয়ে এত অনীহা থাকে তাহলে সেটাই অতি দুঃখের। "