সংক্ষিপ্ত
একুশের ক্রাইমপটে অনেকই চোখ জল ফেলেছে রাজ্যবাসী। হাড় হিম করা একের পর অপরাধের ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়, চলুন ফিরে দেখা দেখা যাক বছরের অপরাধের অন্যতম ঘটনাগুলিকে।
একুশের ক্রাইমপটে (Crime Scene) অনেকই চোখ জল ফেলেছে রাজ্যবাসী। হাড় হিম করা একের পর অপরাধের ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়। অনেকেই তা মনেও করতে চায় না। তবুও যে মনে পড়ে যায়। কেনা-কাটি, বাজার ঘাট, ঘুরতে যাওয়া, জমিয়ে খাওয়ার মাঝেই মাল্টিপ্লেক্স ক্রাইম থ্রিলার যে রিল ছেড়ে রিয়েল লাইফে ঢুকে পড়বে, তা হয়তো ভাবতে পারেনি একুশের শহর কলকাতাও। কারণ চলতি বছরের শুরু থেকেই একের পর এক খুন, ধর্ষণ, পর্ণ কেসের (Murder Case, Rape Case, Porn Case)কিছু ব্যতিক্রমী অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, যা জানলে সত্যিই শিউরে উঠতে হয়। এদিকে নাগরিক জীবনের মাঝেই রয়েছে রাজনৈতিক জীবন। একুশ সালে ক্রাইমপটে নাম জড়িয়েছে রাজনৈতিক হেভিওয়েটরও। চলুন ফিরে দেখা দেখা যাক বছরের অপরাধের অন্যতম ঘটনাগুলিকে।
বছরের শুরুতেই অন্যতম নৃশংস অপরাধের ঘটনা ঘটে জোড়াবাগানে। সেখানে নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন করে খুনের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ। আর এরপরেই বেরিয়ে আসে অপরাধের শিকড়। ঘটনার তদন্তে পেশায় মার্বেল মিস্ত্রি রঘুবীর তাঁতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এলাকারই এক মার্বেল ব্যবসায়ীর কাছে কাজ করত সে। এবং ওই নাবালিকার মামাবাড়ির নীচের একটি ঘরে ভাড়া থাকত সে। তার আসল বাড়ি বিহারের বেগুসরাইয়ে। সেখানে তার তিন মেয়ে এবং স্ত্রী আছেন। ওই বাড়ির দাডো়য়ানকে গ্রেফতার করার পরেই এলাকা ছেড়ে সে পালিয়ে যায়। যদিও তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। পুলিশ সূত্রে খবর মেলে, বিরিয়ানির লোভ দেখিয়ে ওই নাবালিকাকে প্রথমে ডেকে নিয়ে যায় রামকুমার। সেই ঘরেই উপস্থিত ছিল রঘুবীর। মদ এবং বিরিয়ানি খাওয়ার পরেই ওই নাবালিকার উপরে যৌন নির্যাতন চালায় দুই জনেই। এরপরেই নিজের হাতে খুন করে রঘুবীর তাঁতি। ঘটনাস্থলঘুরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ওই নাবালিকার ৪ টি দাঁতও খুজে পায়। অনুমান প্রথমে ওই বিরিয়ানির সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাওয়ানো হয় এবং তারপেরই যৌন নির্যাতনের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আরও একটি অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে বর্ধমানে। যাকে লোকে বিশ্বাস করে সমস্যার সমাধান পেতে চায়, সেই মানুষই যে এত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে পারে, তা ঘটনা প্রকাশ্য়ে আসতে বোঝা যায়। ঝাঁড়ফুকের নাম করে ১৯ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে এক ওঝা। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের ঝিলেরা গ্রামের ধুমকেতু বলে এক শ্মশানে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এরপরেই গ্রেফতার করা হয় বছর তেতাল্লিশের মারু শেখ নামের ওই ওঝাকে।
কলকাতা পাশ্ববর্তী এলাকার মধ্য়ে নিউটাউন পর্ণকাণ্ডেরও পর্দা ফাঁস করে পুলিশ। তবে এই ঘটনা সত্যিই অনেকের বুক কেঁপে যায়। কারণ কলকাতা থেকে বহু দূরেও নয়, অথচ লালবাজারের নাকের ডগায় এতবড় ক্রাইম চলছিল রমরমিয়ে। অভিযোগ দায়ের না হলে কেউ জানতেই পারতো না এই বড় ঘটনা।পেশায় এক মডেল এক যুবতী বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ করেন। তিনি বয়ানে বলেন যে, এক ব্যক্তির সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয়েছে তাঁর। রাণীকুঠি এলাকায় তাঁর প্রোডাকশন হাউজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই ব্যাক্তি। যুবতীকে টলিউড ইন্ড্রাস্ট্রিতে সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। এই কথায় বিশ্বাস করেই ওই ব্যাক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিন তাঁকে প্রথমে দুটো ছোট কাজ দেন। এরপর বেশ কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় পর্ব চলে। এরপরেই একদিন তাঁকে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট এলাকার একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে মাদক পান করিয়ে জোর করিয়ে পর্ণগ্রাফি করায় বলে অভিযোগ। বিষয়টি ফাঁস করলে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এবং এরপর বারবার নগ্ন ফটোশুটে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। এই পর্ণগ্রাফী শুটিয়ের জাল শুধু নিউটাউনেই নয়, ছড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ কলকাতায় বিস্তীর্ণ এলাকায়। গড়ফা-বালিগঞ্জের স্টুডিওতেও শুটিং চলত। সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠতি মডেলদের টার্গেট করে তাঁদের বিদেশি কোনও ওটিটি অ্যাপ বা কোনও টেলিভিশনে সুযোগ দেওয়ার নাম করে ডাকা হত। এরপর সেখানেই জোর করে হুমকি দিয়ে পর্ন ভিডিও শুট করা হত। তবে অভিযোগ দায়ের পরেই ঘুম ছোটে পুলিশের।
তবে শিক্ষাক্ষেত্রে এই যৌন নির্যাতন নেহাত কম নয়। রাজ্যের তথা দেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়-যাদবপুরেও একটি অপরাধের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ । বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক বিরুদ্ধে।জানা গিয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্গুইস্টিক্সের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক-ছাত্রী। ওই গবেষক ছাত্রীর দাবি, ওই অধ্যাপক কথা দিয়ে কথা রাখেননি। এদিকে তাঁর উপর এখন শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করেছেন। যার জেরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ২৫ অগাস্ট যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ছাত্রী।
চলতি বছরে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগ উঠে শাসকদলের নেতার ছেলেরও। মালদহে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে তূণমূল নেতা বৈশিষ্ট্য ত্রিবেদীর ছেলের বিরুদ্ধে।গোটা বিষয়টি নিয়ে সরব হয় বিজেপি। যার জেরে চরম অস্বস্তিতে পড়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। আইন আইনের পথে চলবে, পরে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। পুরাতন মালদা এলাকার বাসিন্দা রাজেশ দাস পেশায় টোটো চালক তার অভিযোগ, 'তাঁর স্ত্রীকে বেশ কিছুদিন থেকে কটুক্তি করছে এলাকার মালদা পৌরসভার পৌর প্রশাসক তথা তূণমূল নেতা বৈশিষ্ট্য ত্রিবেদীর ছেলে অমিত ত্রিবেদী । এমনকি পথে-ঘাটে বের হলেই স্ত্রীকে দেখে অশালীন আচরণ করেছে। সম্প্রতি আমি কাজে বাইরে ছিলাম সেই সময় ওই যুবক বাড়িতে ঢুকে স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।' যদিও প্রতিবেশীদের তৎপরতায় রক্ষা পায় স্ত্রী।
পুজোর মরশুমে গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়ায় জোড়া খুনেও আতঙ্কে কেঁপে ওঠে কলকাতা। ১৭ অক্টোবর রবিবার মধ্যরাতে গড়িয়াহাট থানা এলাকার কাকুলিয়া রোডের একটি বাড়ির ভেতর থেকে দুটি দেহ উদ্ধার হয়। একটি কর্পোরেট সংস্থার শীর্ষকর্তা সুবীর চাকী এবং তার গাড়িচালক রবিন মন্ডলের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ। তাঁদের গলায়, পায়ে এবং হাতে ধারালো অস্ত্রের দাগ পাওয়া যায়, যার থেকে অনুমান নিশংসভাবে তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। এই ঘটনার তদন্ত হাতে নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখা। গড়িয়াহাটে সুবীর চাকি হত্যাকাণ্ডে মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা।