সংক্ষিপ্ত
প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে একের পর এক বিয়ে। বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা চলাকালীনই আইনের চোখে ধূলো দিয়ে তিনটে বিয়ে সেরে ফেলেছেন স্কুল শিক্ষিকা সোমা দাস। মেয়ের কুকীর্তি দেখে পরিবারের তরফেও স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে রাখা হয়েছে।
এ যেন একেবারে ফিল্মি স্টাইলে প্রতারণার ফাঁদ পেতে একের পর এর বিয়ের গল্প (Wedding)। আলিপুর থানা এলাকার বাসিন্দা এক স্কুল শিক্ষিকা (School Teacher) সোমা দাসের (Soma Das) বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগের তীর। রুপোলি পর্দায় আইনের চোখে ধূলো দিয়ে কার্যসিদ্ধ করাকে দর্শক এনজয় করেন, কিন্তু সেই একই ঘটনা যখন বাস্তবের মাটিতে ঘটে তখন ব্যাপারটা হয়ে যায় বিপরীতে থাকা মানুষটার জীবন নিয়ে খেলা। প্রসঙ্গত, বিবাহ বিচ্ছেদের (Divorce) আগেই রীতিমতো আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একটা নয়, দুটো নয়, তিনটে বিয়ে সেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে আলিপুর থানা এলাকার এই স্কুল শিক্ষিকার (School Teacher) বিরুদ্ধে। এক বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা (Divorce) দায়ের করার পর সেটি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। তার মাঝেই একের পর এক বিবাহ বন্ধনে (wedding) আবদ্ধ হয়েছেন সোমা দাস। শুধু বিয়েই নয়, পেশায় একজন শিক্ষিকা তিনি প্রতিনিয়ত ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ছেলের সঙ্গে ভাব জমিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা (Fraud)করতেন বলেও অভিযোগের আঙুল তাঁর দিকে।
সোমা দাস নামে এই মহিলার দ্বিতীয় স্বামী রাজু মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, স্ত্রী সোমা দাসের আগের বিয়ের কথা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না। ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট দেখাশোনা করেই প্রথমে প্রেম, আর তারপর পরিবারের মতে ছাদনাতলায় চার হাত এক হয় সেই প্রেমিকযুগলের। কিন্তু পরে নানান অছিলায় মোটা টাকা চাইতেন তাঁর স্ত্রী। তখনই গোটা বিষয়টা জলের মত পরিষ্কার হয়ে যায়। সেই সময়ই তিনি জানতে পারেন, প্রথম বিয়ের বিচ্ছেদের আগেই তাঁর সঙ্গে প্রেমের ফাঁদ পাতে সোমা দাস। আবার রাজুর সঙ্গে বিচ্ছেদ মামলা চলাকালীনই দুটো বিয়েও করে ফেলন এই স্কুল শিক্ষিকা। সব ক্ষেত্রেই বিচ্ছেদের পর স্বামীদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন তিনি। এই গোটা বিষয়টি নিয়ে দমদম থানায় এফআইআর রুজু করেন রাজু মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করেছেন দমদম থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন-বিয়ের পিঁড়িতে ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে 'শুভবিবাহ'-র ঘোষণা করতেই শোরগোল
আরও পড়ুন-রিল টু রিয়েল, ভ্যালেনটাইন্স ডে-র আগেই প্রেম পরিনতি পেল শুভ পরিণয়ে
ঘটনার তদন্ত শুরু হলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের মে মাসে বারুইপুরের বাসিন্দা দেবার্চন বিশ্বাস নামে এক স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী খাতায় কলমে এবং সামাজিকভাবে বিয়ে হয় সোমার। কয়েক বছর সংসারের পর শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন-সহ একাধিক অভিযোগ এনে বিবাহ বিচ্ছেদ চান তিনি। ২০১৯ সালে আলিপুর আদালতে সেই মামলা ফয়সালা হয়। এরই মাঝে দমদম নিবাসী রাজু মুখোপাধ্যায়ের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। পরে দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ এনে বিচ্ছেদ চান। আপাতত সেই মামলা বিচারাধীন রয়েছে ব্যারাকপুর আদালতে। বিবাহ অভিযান এখানেই শেষ নয়, ২০২০ সালের জুলাই মাসে ওড়িশার বাসিন্দা পেশায় সেনাবাহিনীর রেশনিং বিভাগে কাজ করা অশ্বিনী কুমারকে বিয়ে করেন সোমা। সেখানেও এই রকম নানান অজুহাতে বিচ্ছেদ চান তিনি। মোটা টাকাও খোরপোষও দাবি করেন। সেই মামলা এখন আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতে বিচারাধীন। সোমা দাসের বিরুদ্ধে রয়েছে পাহাড় সমান অভিযোগ, তার মাঝেই উঠেছে আরও এক অভিযোগ। আদালতে মামলা চলাকালীন সেখানের এক আইনজীবীর সঙ্গেও নাকি গাঁটছড়া বেঁধেছেন সোমা দাস।
সোমা দাসের পরিবারও তাঁর এই কুকর্মকে মোটই প্রশ্রয় দেয় নি। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী সোমা দাসের বাবা বলরাম দাস, ভাই গৌতম দাস জানান, তাদের পরিবারের মেয়ে একাধিক বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় সামাজিক স্থিতি নষ্ট হচ্ছে দেখে আলিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে রাখা হয়েছে। সোমার বিরুদ্ধে ওঠা কোনও প্রতারণার অভিযোগের ভাগীদার যাতে পরিবারের সদস্যরা না হয় সেই জন্যই এই পদক্ষেপ নিয়েছে দাস পরিবার। সোমা দাসের বিবাহ অভিযানের গল্প যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে।