সংক্ষিপ্ত

এসএসসি দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় কি নিজের দায় এড়াতে পারেন? এখন এমন প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে অনুসন্ধান কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা করেছে, এতে যা ইঙ্গিত তাতে এসএসসি-এর একাধিক কেস্টবিস্টু এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের একাধিক প্রশাসনিক কর্তার নাম জড়িয়ে পড়েছে।   

এসএসসি-তে দুর্নীতি হচ্ছে তা নিয়ে রব উঠেছিল অন্তত ২০১৩-১৪ সাল থেকে। কিন্তু, বারবারই সেইসব অভিযোগকে আমল দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী তাঁর সরকারও একাধিকবার এই নিয়ে প্রকাশ্যে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। কিন্তু, সোমবার অর্থাৎ ১১ এপ্রিল, ২০২২-এ কলকাতা হাইকোর্ট দ্বারা নিযুক্ত অনুসন্ধান কমিটি যে রিপোর্ট জমা করেছে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট। রিপোর্টে পরিস্কার উল্লেখ করা হয়েছে যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুমতি সাপেক্ষে এমন কমিটি তৈরি হয়েছে যা বেআইনি। 

এসএসসি দুর্নীতি মামলায় গ্রুপ-ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে অনুসন্ধান কমিটি। এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন রঞ্জিতকুমার বাগ। এছাড়াও এই কমিটির অন্যতম সদস্য আইনজীবী অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায়। রিপোর্টে বলা হয়েছে গ্রুপ ডি-তে চাকরি হওয়া ৬০৯ জনের নিয়োগই বেআইনি। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি আনন্দকুমার মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এই রিপোর্ট জমাও করেছে অনুসন্ধান কমিটি। 

আরও পড়ুন- 'হাথরস নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন, হাঁসখালি নিয়ে মুখে কুলুপ মমতার', অভিযোগ মহিলা স্বরাজের

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুমতিতে তৈরি পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি বেআইনি। সরাসরি রাজ্য সরকারের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। এই দুর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিংহ। কল্যাণময় ও শান্তিপ্রসাদের বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের করা উচিত। ভারতীয় ফৌজদারির দণ্ডবিধি অনুসারে ৪২০, ১২০ বি ধারায় এফআইআর দায়ের করা উচিত। সমরজিৎ আচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিংহের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ভুয়ো নথি বানানোর জন্য এফআইআর দায়ের করা উচিত। ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুসারে ৪৬৫, ৪১৭, ৪৬৮ এবং ৩৪ নম্বর ধারায় এফআইআর দায়ের করা উচিত। ষড়যন্ত্রের জন্য সৌমিত্র সরকার, অলোক কুমার সাহা, সমরজিৎ আচার্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা উচিত। ষড়যন্ত্রের জন্য ১২০ বি ধারায় এফআইআর দায়ের করা উচিত। ৬০৯টি সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই সুপারিশপত্রের হিসাব রাখার জন্য আলাদা রেজিস্টারও তৈরি করা হয়েছিল।’

আরও পড়ুন- 'আরশোলা বের হলেও এখানে খবর হয়', হাঁসখালিকাণ্ড প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মিডিয়াকে নিশানা মমতার

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ‘৬০৯টি ভুয়ো সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই সুপারিশপত্রের হিসেব রাখার জন্য আলাদা রেজিস্টার ছিল। চেয়ারম্যানকে অন্ধকারে রেখেই এই সুপারিশপত্র দেওয়া হত। স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, স্কুল সার্ভিস কমিশনের অপর এক প্রাক্তন চেয়ারম্যান শর্মিলা মিত্র, এসএসসি-র আধিকারিক মহুয়া বিশ্বাস, শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও শেখ সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপ করা উচিত। সমরজিৎ আচার্য ও এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হা ভুয়ো সুপারিশপত্র তৈরি করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং ভুয়ো নথি বানানোর জন্য জালিয়াতি, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের ধারায় এফআইআর করা উচিত। স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন সচিব অশোককুমার সাহা, প্রোগ্রাম অফিসার সমরজিৎ আচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিন্হা  মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এফআইআর করা উচিত। সুপারিশপত্রগুলি শান্তিপ্রসাদ সিন্হা নিজে কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়েছেন এবং কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় নিজে নিয়োগপত্র ছাপার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি রাজেশ লায়েক বলে একজন কর্মীকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। নিয়োগপত্রগুলি পর্ষদের অফিস থেকে না দিয়ে এসএসসি-র নবনির্মিত ভবন থেকে দেওয়া হয়েছে।’