সংক্ষিপ্ত
হাঁসখালির ঘটনায় সরব হল স্বরাজ ইন্ডিয়ার গণসংগঠন মহিলা স্বরাজ। এই ঘটনাকে উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছে তারা। পাশাপাশি অপরাধী ও ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবীও জানানো হয়েছে।
নদিয়ার হাঁসখালিতে নাবালিকাকে গণধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমশই চড়ছে উত্তেজনার পারদ। এই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সমর গোয়ালার ছেলে ব্রজগোপাল গোয়ালাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও গোয়েন্দাদের দাবি, পুলিশি জেরায় ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত। এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরব হয়েছে বিরোধীরা। শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে তারা। আর এবার এই ঘটনায় সরব হল স্বরাজ ইন্ডিয়ার গণসংগঠন মহিলা স্বরাজ। এই ঘটনাকে উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছে তারা। পাশাপাশি অপরাধী ও ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবীও জানানো হয়েছে।
আজ মহিলা স্বরাজের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, 'ব্রজগোপাল গোয়ালার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নাবালিকাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মদ খাইয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। তারপর গুরুতর ভাবে জখম নাবালিকার উপযুক্ত চিকিৎসা না করিয়ে বাড়ি পাঠানো হয় এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য পরের দিন সে মারা যায়। অপরাধের সব প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য তাড়াহুড়ো করে তার দেহ ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই দাহ করতে পরিবারকে বাধ্য করা হয়। ঘটনার চার দিন পরে চাইল্ড লাইনের উদ্যোগে পরিবার থানায় ডায়েরি করতে পারে। তার আগে থানা থেকে ডায়েরি নিতে অস্বীকার করে। মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে ও প্রবল চাপের মধ্যে আছে। অভিযুক্ত ছেলের পরিবার থেকে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।' এই ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবারের সুরক্ষার দাবি জানিয়েছে মহিলা স্বরাজ।
আরও পড়ুন- 'হাঁসখালিতে ছেলেটির সঙ্গে নাকি মেয়েটির লাভ অ্যাফেয়ার ছিল', বললেন মমতা
হাঁসখালির ঘটনার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ঘটনার তুলনা করা হয়েছে সংগঠনের তরফে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "এই নারকীয় ঘটনা ২০২১ সালে উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ভয়াবহ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিচ্ছবি।" এরপর মুখ্যমন্ত্রীকে একহাত নিয়ে সংগঠনের তরফে বলা হয়, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাথরসের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু নদিয়ার এই কাণ্ডে উনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন। হাথরসের শাসক দলের নেতার ঘটানো নির্যাতন, ধর্ষণ ও তথ্য লোপাট আজ বাংলায় এসে পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে তাঁর নীরবতা ভঙ্গ করুন এবং কঠোর ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা করুন।"
আরও পড়ুন- 'আরশোলা বের হলেও এখানে খবর হয়', হাঁসখালিকাণ্ড প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মিডিয়াকে নিশানা মমতার
বিবৃতিতে এই ঘটনা প্রসঙ্গে আরও জানানো হয়, "গোটা ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে যে তৃণমূলের সঙ্গে পুলিশের অশুভ আঁতাতে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার কি বেহাল দশা হয়েছে। রাজ্যের শাসক দলের নেতা কর্মীরা পাল্লা দিয়ে প্রতিদিন খুন, ধর্ষণ, রাহাজানির মত ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে, যার প্রতিটির পিছনে কোনও না কোনও ভাবে পুলিশি যোগ স্পষ্ট হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী না পারছেন নিজের দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে, না পারছেন প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিতে, কারণ অপরাধীদের সকলের সঙ্গেই তৃণমূল দল যুক্ত।"
এদিকে সোমবার হাঁসখালির ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর আজই এই ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেন মমতা। তিনি বলেন, "হাঁসখালিতে ধর্ষণ বলবেন না কি প্রেম না অন্তঃসত্ত্বা নাকি লাভ অ্যাফেয়ার্স বলবেন...আমি পুলিশকে বলেছি, ঘটনাটি কী? ঘটনাটা অত্যন্ত খারাপ। গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু, শুনেছি ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির নাকি লাভ অ্যাফেয়ার ছিল।" এরপর মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, "মেয়েটি মারা গিয়েছে ৫ তারিখে। অভিযোগ জানানো হয়েছে ১০ তারিখে। যদি কারও কোনও অভিযোগ থাকে তবে ৫ তারিখে অভিযোগ দায়ের করলেন না কেন? কাউকে কিছু না জানিয়ে নির্যাতিতার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন কী ভাবে এর তদন্ত করবে পুলিশ?" আর মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আরও বাড়ছে বিতর্ক।