সংক্ষিপ্ত
- শেষ হল বহু প্রতীক্ষিত জুনিয়র ডাক্তার ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি মিটিং।
- দীর্ঘ দীর্ঘ ভোগান্তি, টালবাহানা যেভাবে শেষ হল, তাকে বলতে হয় মধুরেন সমাপয়েত।
শেষ হল বহু প্রতীক্ষিত জুনিয়র ডাক্তার ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি মিটিং। দীর্ঘ দীর্ঘ ভোগান্তি, টালবাহানা যেভাবে শেষ হল, তাকে বলতে হয় মধুরেন সমাপয়েত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রোতার আসনে, অন্যেরা বলছেন। এই দৃশ্য সাধারণত দেখা যায় না। ক্ষুব্ধ ছাত্রদের মন পেতে এদিন মমতা শুরু থেকেই অন্য স্ট্র্যাটেজি নিলেন। মনযোগ দিয়ে শুনলেন ছাত্রদের প্রতিটি অভাব অভিযোগ। নিদানও দিলেন তুরন্ত।
এদিন মোট ৩১ জন ছাত্র প্রতিনিধি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। বৈঠকের শুরুতেই এনআরএস-এর প্রতিনিধি বলেন, 'আমাদের ভয়ের সঙ্গে কাজ করতে হয়। আমরা আগে চেষ্টা করেছি আপনার কাছে বার্তাটা পৌঁছে দিতে। আমরা কাজে ফিরতে চাই। আমাদের কাজের পরিবেশ দেওয়া হোক। সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষেত্রে কষ্ট পান। আমরাও নিরূপায়। আমরা প্রতিবাদ না করে আর কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। কিছু মানুষের জন্যে এই ঘটনা আমাদের স্পর্ধায় পরিণত হয়েছে। আমাদের অনুরোধ আপনি যদি একবার পরিবহকে দেখতে যান।"
এইবার বল আসে মমতার কোর্টে। মমতা আর তাকে ছাড়েননি। ১২ দফা প্রস্তাবের প্রতিটি বিশ্লেষণ করে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই আশ্বস্ত করে বলেন, জুনিয়ার ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা হয়নি। তাঁদের ভয়ের কোনও কারণই নেই। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দেন, কোন কোন ধারায় এই কাণ্ডে অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়েছে, তা বিক্ষুব্ধদের পরিষ্কার জানানো হবে কলকাতা পুলিশের তরফে।
এবার আসে হাতেকলমে কাজের পালা। সমস্যা জানিয়ে, সরকারি দাওয়াই জানতে চান ছাত্ররা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি সমস্যা শুনে তাঁর নিদান দিয়েছেন। দেখে নেওয়া যাক নতুন কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে চিকিৎসকদের স্বার্থে-
- প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে এমারজেন্সিতে কোলাপসিপল গেট লাগানো হবে। মাত্র দুইজন ঢুকতে পারবে সেখানে। সংযোগরক্ষার জন্যেই এই দুজন ঢুকবে। পিডাব্লিউডি, মেডিক্যাল সার্ভিস কমিশনের সাহায্য নিয়ে এই কাজ করবে সরকার।
- এমারজেন্সি অ্যাপ তৈরি হবে চিকিৎসকদের সুরক্ষায়। চালু হবে টোল ফ্রি নং।
- নর্থ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে সিটি স্ক্যান ইউনিট।
- রাতে কর্মরত মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- পেশেন্টের ডেটা দেবে জনসংযোগ আধিকারিক। তৃতীয় পক্ষকে রাখতে চাইছেন মমতা।
- স্থির হয়, হাসপাতালে অবাধ বিচরণ যাতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাঁর জন্যে একজন করে নোডাল অফিসার থাকবে প্রতিটি হাসপাতালের দায়িত্বে।
- স্বাস্থ্যকর্মী কাজের জায়গায় মারা গেলে তাঁর পরিবারের লোককে চাকরি দেওয়া হবে।
- রোগীর পরিবারের ক্ষেত্রে রাজ্যজুড়েই অনলাইন বুকিং থেকে শুরু করে ঠিকানার ক্রস চেকিং করবে হাসপাতাল। স্বাস্থ্যসাথীর তথ্য নিয়ে কাজ হবে।
- প্রাইভেট সিকিউরিটি ও সরকারি সিকিউরিটি চিকিৎসকদের নিরাপত্তা স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করবে।
- নয়া আইন আনা হবে চিকিৎসকদের সুরক্ষায়।
- ঢেলে সাজানো হবে গ্রেভিয়েন্স সেল।
- অ্যালার্ম তৈরি হবে চিকিৎসকের সুরক্ষার জন্যে।
- স্বাস্থ্য দফতর বিজ্ঞাপন জারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জনসচেতনতা বাড়াতে।
- আউটডোরের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর খরচ হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন স্বাস্থ্যসাথীতে সেই খরচটাকেও অন্তর্ভুক্ত করতে।
মিটিং শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দেন পরিবাহকে দেখতে যাবেন। জুনিয়র ডাক্তারদের অনুরোধ করেন, কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার। মৌন ছিলেন ছাত্ররা। মমতা ধরে নিলেন মৌনতা সম্মতির লক্ষণ। করতালিতে শেষ হল ৭ দিনের যুদ্ধ।