সংক্ষিপ্ত

  • অসমের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর হচ্ছে
  • এখনও পর্যন্ত বন্যার বলি হয়েছেন ৬৬ জন
  • কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানে ১৬টি গন্ডার-সহ প্রায় ১৮০টির বেশি প্রাণী মারা গিয়েছে এই ভয়াল বন্যায়
  • বন্যা কবলিতে অসমে পৌঁছে গেলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন পড়ুয়ার একটি দল

অসমের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত বন্যার বলি হয়েছেন ৬৬ জন। কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানে ১৬টি গন্ডার-সহ প্রায় ১৮০টির বেশি প্রাণী মারা গিয়েছে এই ভয়াল বন্যায়। এই পরিস্থিতিতেই বন্যা কবলিতে অসমে পৌঁছে গেলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন পড়ুয়ার একটি দল। 

চোখের সামনে কোনও ঘটনা না দেখলে তা অনুভব করা খুব একটা সহজ নয়। ব্যস্ততার যুগে অন্য রাজ্যে এমন দুর্গতি নিয়ে ভাবে এমন মানুষ হাতে গোনা যায়। ভাবলেও সোশ্য়াল মিডিয়ায় স্টেটাস দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন তাঁরা। কিন্তু সেই ভয়াল পরিস্থিতিকে ছুঁয়ে দেখে অন্য রাজ্যের অসহায় মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছে প্রকাশই বিরল ঘটনা। আর এই পড়ুয়াদের দল সেই ইচ্ছেকেই বাস্তবায়িত করে দেখাল। 

আরও খবরঃ বন্যার জেরে বিহার ও অসমে মৃত ১৭০, বিপর্যস্ত অন্তত ১ কোটি মানুষ

শুরুটা হয়েছিল ফেসবুক স্টেটাসের মাধ্যমে। দলের ৮ পড়ুয়া রাহুল, অরিত্রা, প্রদীপ্ত, জ্যোতিষ্ক, শ্রেয়া, তিতলি, পায়েল, বিয়াস, অরুণাভরা নিজেদের ফেসবুকে স্টেটাস দিয়ে জানান, তাঁরা অসম যাচ্ছেন। ১৮ জুলাই করা এই পোস্ট থেকেই জানা যায়, কোচবিহার, তুফানগঞ্জ হয়ে ওঁরা  অসমে পৌঁছবেন। ২১ জুলাই রওনা দেন ওঁরা। ফেসবুকে এই পোস্ট দেখে সাড়া দেন বহু মানুষ। মাত্র ৩দিনে ৪৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে অসমের উদ্দেশ্যে রওনা দেন অরিত্রা-রাহুলরা। 

অসমে বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই বাসিন্দাদের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে চাপ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে বাসিন্দাদের। অসমের এই সঙ্গীন অবস্থায় পাশে দাঁড়াতে তাই দেরি করেননি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রছাত্রীরা। এক লহমায় সিদ্ধান্ত নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে। তাঁদের গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে ধুবুরি, বারপেটা ও বহুরি-সহ অসমের বেশ কয়েকটি এলাকা।  

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অরিত্রা দাশগুপ্ত ধুবুরি থেকে বলছেন,  "রিলিফ ক্যাম্পগুলিতে তিন বেলা করে খাবার দেওয়া হয়। এছাড়াও রাস্তার ধারে রিলিফ ক্যাম্পের কাছে অস্থায়ী বাড়ি বানিয়ে যারা রয়েছেন, তাঁদের কাছে ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, খাবার, দুধ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ওঁদের অবস্থা খুব খারাপ। সরকার থেকে ১০ জনের জন্য ২ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে, যা মোটেই ওঁদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। সরকারি তরফ থেকে কোনও ওষুধপত্রেরও ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রত্যেকের কাছে ত্রাণ পৌঁছচ্ছেও না।"

এক ঝাঁক পড়ুয়াদের সংগ্রহ করা অর্থে অসমের ঘরহারা বন্যা দুর্গতদের জীবনে কিছুটা সুরাহা হবে, তা বলাই যায়। অরিত্রা জানিয়েছেন, তাঁরা কাল অর্থাৎ ২৪ জুলাই ফিরছেন কলকাতায়। তবে ওঁদের এমন উদ্যোগের এখানেই ইতি পড়বে না। আবারও অসহায় পরিস্থিতিতে মানুষকে বাঁচার দিশা দেখাতে এভাবেই যে আবার ওঁরা বাক্স প্যাঁটরা গুছিয়ে বেরিয়ে পড়বেন, তা আশা করাই যায়।