সংক্ষিপ্ত
উপন্যাসের মধ্যে প্রকৃতির বর্ণনার পাশাপাশি পুরুষ ও মহিলার প্রেমজীবনের অন্তরচিত্র তিনি এমনভাবে আঁকতেন যা পাঠকদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাই বদলে দিত। দেখে নেওয়া যাক তাঁর সেরা ১০টি উপন্যাস।
পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে। সেখানেও তাঁর বেশ নাম-ডাক ছিল। দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। এছাড়াও কাজ করেছেন আকাশবাণী কলকাতার অডিশন বোর্ডের সদস্য হিসেবে। তবে এই সবকিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁর কলমের জোর। তাঁর একের পর এক লেখা সমৃদ্ধ করেছে বাংলা সাহিত্যকে। পুরোদস্তুর শহুরে জীবন কাটিয়েও বন, জঙ্গল ছিল তাঁর বড়ই প্রিয়। সময় পেলেই পাড়ি দিতেন জঙ্গলে। অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতির বর্ণনা ফুটে উঠত তাঁর লেখায়। পাঠকের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠত মুহূর্তগুলি। তবে শুধু লেখাই নয়, ভালো ছবিও আঁকতেন বুদ্ধদেব গুহ। একাধারে আবার গায়কও ছিলেন তিনি।
উপন্যাসের মধ্যে প্রকৃতির বর্ণনার পাশাপাশি পুরুষ ও মহিলার প্রেমজীবনের অন্তরচিত্র তিনি এমনভাবে আঁকতেন যা পাঠকদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাই বদলে দিত। দেখে নেওয়া যাক তাঁর সেরা ১০টি উপন্যাস।
জঙ্গলমহল
- বুদ্ধদেব গুহর প্রথম প্রকাশিত 'জঙ্গলমহল'। এই বইও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল পাঠকদের কাছে। তারপর একাধিক উপন্যাস লিখেছেন তিনি।
মাধুকরী
- এই উপন্যাসের পটভূমি জঙ্গলমহল। কেন্দ্রীয় চরিত্র পৃথু ঘোষ, যে চেয়েছিল বড় এক বাঘের মতো বাঁচবে। কারও উপর সে নির্ভরশীল থাকবে না। তার বন্ধু ছিল সমাজে তথাকথিত অপাঙ্তেয়রা। কিন্তু সত্য হল, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে এর ওর মনের, শরীরের দোরে দোরে ঘুরে হাত পেতে বেঁচে থাকতে হয়। এই পরিক্রমাই হল মাধুকরী। এই উপন্যাস মূলত ভবিষ্যৎ প্রজন্মর পাঠকদের জন্যে লিখেছিলেন তিনি। সাহিত্যিক একথা নিজেই জানিয়েছিলেন। এই উপন্যাসটি বহু দিন ধরে বেস্টসেলার ছিল।
হলুদ বসন্ত
- বুদ্ধদেব গুহ 'হলুদ বসন্ত' উপন্যাসের জন্য আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৬ সালে। বন্ধুর ছোট বোন নয়নার প্রেমে পড়ে যায় ঋজু। তা নিয়েই উপন্যাসটি লেখা হয়েছে। তবে প্রেমের পাশাপাশি একাধিক অনুভূতি রয়েছে এই উপন্যাসে। অনিশ্চয়তা, মস্তিষ্কের যুক্তির টানাপোড়েন, হিংসা, ক্রোধ, নিজের কাছে হেরে যাওয়া, ছলকলা সহ নানা ধরনের মানসিক প্রবৃত্তি উঠে এসেছে বইয়ের পাতায়।
একটু উষ্ণতার জন্য
- এই বাংলা প্রেমের উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আধুনিক এক লেখক। যার মানসিক সত্ত্বা খুঁজে বেড়াত এক নারীকে। ভালোবেসে বিয়ে করা স্ত্রী সরে গিয়েছে দূর থেকে আরও দূরে, তাঁর সমস্ত অস্ত্বিত্বকে পৌঁছে দিয়েছিল এক অনিশ্চয়তায়। ঠিক সেই সময়ে তাঁর জীবনে আসে ছুটি। সেই হল উপন্যাসের নায়িকা।
লবঙ্গীর জঙ্গলে
- এই উপন্যাসকে 'পারিধী'-র সম্প্রসারণ বলা যেতে পারে। এটি বুদ্ধদেব গুহর 'জলসম্ভার' প্রথম খন্ডে অন্তর্ভুক্ত দ্বিতীয় উপন্যাস। 'পারিধী' শেষ হয়েছিল নবদম্পতি চন্দ্রকান্ত-চন্দনীকে নতুন সংসারের পথে মহানদীর বুকে ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে। এই বইয়ের পরতে পরতে রয়েছে প্রকৃতির বর্ণনা। প্রকৃতিকে যিনি মন থেকে ভালোবাসবেন তিনিই একমাত্র এই ধরনের বর্ণনা করতে পারবেন।
কোজাগর
- উপস্থাপন করেছেন স্বাধীনোত্তর ভারতের সামাজিক ও মানবিক জটিল সমস্যাগুলি। এই উপন্যাস প্রতিটি পাঠককে আত্মসচেতনায় সজাগ সতর্ক করে তুলবে। 'কোজাগর' বর্তমান সমস্যাজর্জর ভারতকে আগামী দিনের উদার অভ্যুদয়ের পথপ্রদর্শন করায়।
বাবলি
- লন্ডন থেকে ডিগ্রি লাভ করা অভি, একটু গোবেচারা ভান করা ছেলে। প্রচন্ড এই মেধাবী ছেলেটি নিজেকে লুকিয়ে রাখে সবসময় নিজের মধ্যে। ভদ্র ছেলে হিসেবে অভির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। মোট কথা একজন সুপুরুষ যাকে বলে। অন্যদিকে উপন্যাসের নায়িকা বাবলি-র মধ্যে মোটেও নায়িকাসুলভ ব্যাপার নেই। খুব সাধারণ দুটো চরিত্র নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে উপন্যাসের গল্প। দুটো চরিত্রই ঘটনাক্রমেই আকর্ষণ অনুভব করতে থাকে একে অন্যের প্রতি। কিন্তু কেউ নিশ্চিত হতে পারেনা এই অনুভূতির মানে কি।
পরদেশিয়া
- ধূলো-বালির শহর কলকাতার মেয়ে অরাদেবী। মা-বাবা মরা মেয়ে অরা থাকে নিজের বড় ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে। ত্রিশ বছর বয়সী অরা বিয়ে করেনি। অরা বেড়াতে যাচ্ছে তার বড় বোনের কাছে। মধ্যপ্রদেশের বিলাসপুরের কয়লা খনির বড় চাকুরে অরার দুলাভাই। অরণ্যঘেরা সেই বিলাসপুরেই এবার নিজের প্রিয় বোন স্মৃতির কাছে যাচ্ছে অরা। কয়েকটা দিন কীভাবে কলকাতার বাইরে কাটাবে তাই ভাবতে ভাবতে সে ট্রেন সফর করছে। অরাকে স্টেশন থেকে নিতে এসেছে কয়লা খনির আরও এক কর্মকর্তা। তাকে দেখেই অরার বেশ ভালো লাগে। পরে জানা যায় তার নাম পরদেশিয়া। নারীমহল এবং কর্মক্ষেত্রে বিপুল জনপ্রিয় মি. পরদেশিয়া। তাদের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে বইতে। পাশাপাশি রয়েছে প্রকৃতির বর্ণনাও।
কোয়েলের কাছে
- পালামৌ-এর জঙ্গলের প্রেক্ষাপটে এই উপন্যাসটি লেখা হয়েছে। যদিও প্রধান চরিত্র এখানে প্রকৃতি। কিন্তু উপন্যাসের চরিত্রগুলোয় প্রাণসঞ্চার করেছেন লেখক বুদ্ধদেব গুহ। মারিয়ানার প্রেম, সুমিতার কামনা, লালতির সোহাগ, যশোয়ান্তের আদিমতা সবই রয়েছে এই উপন্যাসের মধ্যে।
সুখের কাছে
- সুখের কাছে উপন্যাসটির নাম সুখের হলেও কাহিনি তেমন সুখের ছিল না। এই উপন্যাসে প্রধান চরিত্রে যিনি ছিলেন তার নাম সুখ কিন্তু তিনি নিজেকে সুখেন মিস্ত্রি নামে পরিচয় দিতেন। সুখেন মিস্ত্রী হলেও মনের দিক দিয়ে অনেক উচ্চশিক্ষিত লোকের চেয়ে বড় ছিল সে। তার বেড়ার ঘরে ইংরেজি/বাংলা সাহিত্যের বইয়ে ঠাসা। সে শহুরে জীবন সহ্য করতে পারে না। সুখেনের বিপরীতে ছিল মহুয়া। নিজের অজান্তেই মহুয়া আটকে পড়ে সুখেনের প্রেমে।