তেলের দাম নিয়ে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা তোপ দাগলেন। বুধবার সকালে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে তেলের দামের সেস নিয়ে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, তেলের দামের বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে এই রাজ্যগুলি কয়েক হাজার কোটি টাকার মুনাফা কামিয়েছে।

পেট্রল-ডিজেলের দামবৃদ্ধি নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদের শেষ নেই। এই পরিস্থিতিতে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে রাজ্যগুলিকে সক্রিয় হওয়ার আবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে তিনি আবেদন করেন যাতে রাজ্যগুলি তেলের দামের ওপর থেকে ভ্যাটের পরিমাণ কমায়। আর তারপরই পাল্টা নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং রাজ্য সরকারের কর ছাড়ের প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেন তিনি। পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার পুরো রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়ে দিয়েছে বলে সুর চড়ান। তাঁর অভিযোগ, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে কর বাবদ ২০১৪ থেকে ২১ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার ১৭ লাখ ৩২ হাজার ২৪২ কোটি আয় করেছে। কিন্তু, রাজ্যগুলিকে ন্যায্য থেকে বঞ্চিত করে চলেছে কেন্দ্র। তাঁর দাবি, তেলের দামে ছাড় দেওয়ার জন্য ৩ বছরে রাজ্য ১৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।

এরপর সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে মমতা বলেন, "এক তরফা ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই সাধারণ মানুষের কাছে একতরফা বার্তা পৌঁছে গিয়েছে। আসলে আমাদের কথা বলার কোনও সুযোগ ছিল না। কারণ আমাদের কাছে অডিও বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। শুধু ছবি দেখানোর সুযোগ ছিল কিন্তু, কথা বলার সুযোগই দেওয়া হয়নি। সেই কারণে আমরা কেউ কিছু বলতেই পারিনি।"

Scroll to load tweet…

আরও পড়ুন- তেলের দাম বৃদ্ধিতে মুনাফা কামিয়েছে অবিজেপি শাসিত রাজ্য! মোদীর সপাট আক্রমণের সামনে মমতা থেকে বিজয়ন

পেট্রল ডিজেলের দাম বৃদ্ধির দায় রাজ্যের উপর চাপানোয় মোদীর উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মমতা। বলেন, "পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়ানোর দায় পুরোপুরিভাবে রাজ্যের উপরে দিয়েছেন তিনি। বললেন রাজ্যকেই কমাতে হবে। কিন্তু, রাজ্য কেমন করে কমাবে? আপনি দাম বাড়িয়েছেন। আপনি সেখান থেকে কত টাকা আয় করেছেন সেটা কখনও দেখেছেন? পুরো কথা বলে গিয়েছে একতরফা ভাবে। এটা সাধারণ মানুষকে ভুল পথে চালিত করা হয়েছে। আপনি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির প্রশংসা করেছেন। কিন্তু, সেই রাজ্যগুলিকে আপনি অনেক টাকা দেন। আমাদের এত টাকা দেওয়া হয় না। একাধিক প্রকল্পের জন্য আমাদের যত টাকা দেন তার থেকে অনেকে অনেক বেশি টাকা সেই সব রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয়। সেই সব রাজ্যগুলি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দেয়। আর তার পরিবর্তে তাদের আপনি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেন। ফলে সেই সব রাজ্যের কোনও সমস্যা হয় না।"

Scroll to load tweet…

আরও পড়ুন, 'বাঁচার সম্ভাবনা কম, ওঁকে মেরে ফেলা হতে পারে,' অনুব্রতকে নিয়ে বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ

মমতা আরও বলেন, "বাম আমলের ঋণ এখনও আমাদের বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বাংলা ৯৭ হাজার কোটি টাকা পায়। কিন্তু, এক টাকাও কেন্দ্র দিচ্ছে না।" মমতার প্রস্তাব, এই ৯৭ হাজার কোটি টাকা পেলে তিন দিনের মধ্যেই রাজ্য কেন্দ্রের সব ঋণ শোধ করে দেবেন। তিনি এও বলেন, "সব রাজ্যের কথা আমি জানি না। তবে যখন বাংলার কথা আসে তখন আমি আপনাদের সবাইকে জানিয়ে রাখতে চাই যে আমরাও তিন বছর অন্তর পেট্রলে ১ টাকা করে ছাড় দিই। এর জন্য আমাদের সরকারের দেড় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। তবে একথা আপনি (মোদী) বললেন না। আপনি শুধু বললেন রাজ্যগুলির আরও দেওয়া উচিত। এর মানেটা কী? আপনি বাড়াবেন, আর রাজ্য সরকারকে টাকা মেটাতে হবে। আমরা বলেছিলাম ট্যাক্সের টাকা অর্ধেক অর্ধেক করা হোক। তাতে কেন্দ্র পাক ৫০ আর রাজ্যও ৫০ শতাংশ। কিন্তু, তা তারা করেনি। ৭৫ শতাংশ তো ওরাই নিয়ে যায়। তাহলে রাজ্য কেমন করে চলবে?"

আরও পড়ুন- 'দুর্নীতিতে নাম জড়ালে কাউকেই ছাড়া হবে না', কড়া বার্তা মমতার