বর্তমানে প্রসাধনিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মানুষ আবার সেই প্রাকৃতিক প্রতিকারের দিকেই ঝুঁকছে। 

দেশ বিদেশ জুড়ে আজ যেখানে পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল পর্যন্ত যত্ন নেওয়ায় নামী দামি প্রসাধনীর বাহার, ভারতের বহু জায়গা এখনও প্রাকৃতিক চর্চাতেই বিশ্বাসী। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের একটি গ্রামে পুরোনো এক প্রথা সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়েছে। চুল রং করতে সেখানে এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে ঘরে বানানো রঞ্জক। সম্পূর্ণ রাসায়নিক মুক্ত ও প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি রঞ্জক, শুধু চুল রাঙাতেই নয়, নরম ও শক্তিশালী করার জন্যও ব্যবহার করেন ওই গ্রামবাসিরা।

রাজস্থানের এই প্রাকৃতিক রঞ্জক ব্যবহার করেছেন এমন এক মহিলা, অর্চনা শর্মা এই স্থানীয় রঞ্জক সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি বলেন ওই গ্রামাঞ্চলে এই ধরনের রঞ্জক প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তৈরী ও ব্যবহার হয়ে আসছে। এমনকি আজও সেখানকার মানুষ কোনো রাসায়নিক যুক্ত হেয়ার কালার-এর থেকে এই রঞ্জক ব্যবহার করতেই বেশি পছন্দ করে। আসলে বর্তমানে প্রসাধনিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় মানুষ আবার সেই প্রাকৃতিক উৎসের দিকেই ঝুঁকছে। গ্রহণ করছে ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক প্রতিকার সমূহ।

এই রঞ্জক বানানো যায় কীভাবে?

অর্চনা শর্মা এই রঞ্জক বানানোর পদ্ধতিও বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আসুন জেনে নিই কীভাবে বানানো হয় এই রঞ্জক।

প্রথমে লোহার তাওয়ায় হলুদ কম আঁচে ভাজা হয়। তারপর যোগ করা হয় কফির গুঁড়ো। ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রণের রং গাঢ় কালো হয়ে আসলে, তাতে একে একে অ্যালোভেরা জেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে তৈরী করা হয় ওই রঞ্জক।

আসলে অ্যালোভেরা জেল ও নারকেল তেল দুটি চুলকে পুষ্টি জোগায়, মসৃণ করে ও ভালো রাখে চুল। হলুদ অ্যান্টিসেপটিক হওয়ায় মাথার ত্বকে কোনোরকম সংক্রমণ হতে দেয় না। এর সাথে কফি মেশালে চুলের পাকা রং ঢেকে যায়, ও গোড়া থেকে মজবুত হয় চুল।

অর্চনা শর্মার মতে, এই দেশি রঙের ব্যবহার চুলের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য উভয়ই বজায় রাখার জন্য একটি সস্তা প্রতিকার হয়ে উঠছে রাজস্থানের ওই গ্রামাঞ্চলে। আধুনিক রাসায়নিক প্রসাধনীরও একটি ভালো বিকল্প এটি। গ্রামাঞ্চলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পরিবার গুলিতে ব্যবহৃত হয়ে আসা এই ঐতিহ্যবাহী রঞ্জক, এখন শহরাঞ্চলের মানুষও ধীরে ধীরে গ্রহণ করতে শুরু করেছে। হলুদ, কফি এবং অ্যালোভেরা দিয়ে চুলের জন্য তৈরী এই রঙকে স্থানীয় লোকেরা এখনও কার্যকর বলে মনে করেন এবং তাদের পরিবারে নিয়মিত ব্যবহার করে আসছেন।