সংক্ষিপ্ত
বিষাক্ত বাতাস।
এমনিতেই বায়ুদূষণের জেরে হৃদ্রোগের আশঙ্কা অনেকটাই বাড়ছে। সেইসঙ্গে, বেড়ে যাচ্ছে রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেশার। শুধু তাই নয়, অনেকটাই বেড়ে গেছে কিডনির নানা জটিল অসুখও। আর এই খবর উঠে এসেছে ‘দ্য ল্যানসেট’ বিজ্ঞান পত্রিকার পাতায়।
গবেষকরা দেখেছেন, দৈনিক প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ১০ এবং পিএম ২.৫-এর পরিমাণ যথাক্রমে ১০০ ও ৬০ মাইক্রোগ্রাম অতিক্রম করলে তা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকর। ভাসমান দূষকের ক্ষতি করার ক্ষমতার পরিমাপ করা হয় ‘এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স’ (একিউআই) দিয়ে।
অতিসূক্ষ্ম বলেই পিএম ২.৫ নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমাদের দেহে প্রবেশ করলে ফুসফুস, হার্ট এবং মস্তিষ্কের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। এই পিএম বা ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ আসলে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা। যার মধ্যে কার্বন এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ যথেষ্ট পরিমাণে মিশে থাকে। আর শীতকালে ভারতের বড় শহরগুলিতে বাতাসের গুণগত মানের অনেকটাই অবনতি হতে দেখা যায়।
ফলে, তখন বাতাসে ভাসমান দূষিত কণার মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। যা শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে সরাসরি হৃদ্পেশি ও হৃদ্পিণ্ডের রক্তনালির ব্যাপক ক্ষতি করে। স্বভাবতই, রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা অনেকটা বেড়ে যায়। যা হৃদ্রোগের আশঙ্কা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই ‘দ্য ল্যানসেট’-এর অন্য একটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়, পৃথিবীর দূষিত শহরগুলির তালিকায় লাহোর এবং দিল্লীর পর, কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকাও রয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, বাতাসে ভাসমান দূষিত কণার মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে গ্যালেক্টিন প্রোটিনের পরিমাণও বাড়তে শুরু করে, যা হৃৎপিণ্ডের মধ্যে গভীর ক্ষত তৈরি করতে পারে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘মায়োকার্ডিয়াল ফাইব্রোসিস’। বায়ুদূষণ ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া’-র আশঙ্কাও অনেকটা বাড়িয়ে দেয় এই সমস্যা। এমনিতে আমাদের হৃদ্যন্ত্র মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার পাম্প করে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। এই পাম্প করার ক্ষমতাকে চালনা করার জন্য এমনিতে হার্টের একটি নিজস্ব পেসমেকার থাকে, যাকে বলা হয় সাইনাস নোড বা এসএ নোড।
এই সাইনাস নোডের কাজ হল হৃৎস্পন্দন তৈরি করা। ২৪ ঘণ্টা জুড়েই কাজ করে চলেছে হার্টের এই নিজস্ব পেসমেকার ব্যবস্থা। কার্যত, একটি বৈদ্যুতিক স্পন্দন তৈরি করছে। কিন্তু কোনওভাবে যদি এই সাইনাস নোডটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখনই হৃৎস্পন্দন ভীষণ অনিয়মিত হয়ে পড়ে। আর বায়ুদূষণ এই সাইনাস নোডের অনেকটাই ক্ষতি করে।
হৃদ্রোগের বাড়বাড়ন্ত এবং হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে এটি একটি বড় কারণ। তাই দূষণ থেকে বাঁচতে সবসময়ই মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।